সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

ফেব্রুয়ারী, ২০২৫ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

রাজিয়া কেন ব্যর্থ হয়েছিল ?

রাজিয়ার ব্যার্থতার কারণ:         ইলতুৎমিস তাঁর জীবদ্দশায় কন্যা রাজিয়াকে দিল্লীর সিংহাসনের উত্তরাধিকারীরূপে মনোনীত করেন। কিন্তু সুলতানের দরবারের প্রভাবশালী আমিরগণ রাজিয়ার দাবি অগ্রাহ্য করে ইলতুৎমিসের পুত্র রুকন-উদ্-দিন ফিরোজকে সিংহাসনে স্থাপন করেন। তবে রুকন-উদ্-দিন ফিরোজের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মুলতান, বাদাউন, হান্সি, লাহোর প্রভৃতি স্থানের শাসকগণ বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন এবং সসৈন্যে দিল্লীর দিকে অগ্রসর হন। রুকন-উদ্‌-দিন ফিরোজ তাদের বাধা দিতে গিয়ে যুদ্ধে নিহত হলে দিল্লীর কিছু সংখ্যক আমির এবং সাধারণ লোকদের সমর্থনে রাজিয়া দিল্লীর সিংহাসনে আরোহণ করেন (১২০৬-১২৪০ খ্রিস্টাব্দ)।         তবে পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে রাজিয়া সিংহাসনে আরোহণ করলেও নিষ্কলঙ্কভাবে ক্ষমতা ভোগ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। কঠোর হস্তে শাসনকার্য পরিচালনা করতে শুরু করলে সুলতানী রাজিয়ার বিরুদ্ধে তুর্কী আমিরগণের মধ্যে অসন্তোষ পুঞ্জীভূত হতে শুরু করে। কুতব- উদ-দিন আইবকের আমল থেকেই সুলতানী সাম্রাজ্যের সামরিক ও শাসনতান্ত্রিক সকল ক্ষমতাই তুর্কী আমিরদের হস্তগত ছিল। কিন্তু রাজিয়া দৃঢ়হস্তে সমগ্র শাসন ব্যবস্...

খলজি সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠায় মালিক কাফুরের ভূমিকা আলোচনা কর।

খলজি সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠায় মালিক কাফুরের ভূমিকা:           আলাউদ্দিন খলজিই সর্বপ্রথম দক্ষিণ ভারতে ইসলামের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। যদিও তাঁর পূর্বে দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে মুসলমানদের সম্পর্ক ছিল, তথাপি তিনিই দক্ষিণ ভারতকে দিল্লীর সুলতানী সাম্রাজ্যের প্রত্যক্ষ শাসনাধীনে আনতে সক্ষম হয়েছিলেন। আলাউদ্দিনের দক্ষিণ ভারত অভিযানে রাজনৈতিক কারণ ছাড়াও অর্থনৈতিক কারণ জড়িত ছিল। সোম্রাজ্য বিস্তারের উদ্দেশ্যের সঙ্গে দক্ষিণ ভারতের অতুলনীয় ঐশ্বর্যও তাঁকে প্রলুব্ধ করেছিল। দক্ষিণ ভারতে খলজিদের আধিপত্য বিস্তারে মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করেন সেনাপতি মালিক কাফুর। এই সময় দক্ষিণ ভারতে চারটি হিন্দুরাজ্য ছিল-দেবগিরির যাদব, বরঙ্গলের কাকতীয়, দ্বারসমুদ্রের হোয়সল এবং সুদূর দক্ষিণের পাণ্ড্যগণ।       ১৩০৭ খ্রিস্টাব্দে আলাউদ্দিন খলজি দেবগিরির বিরুদ্ধে মালিক কাফুরের নেতৃত্বে সামরিক অভিযান শুরু করেন। দেবগিরিরাজ রামচন্দ্রদেব কর দেওয়া বন্ধ করেছিলেন এবং গুজরাটের রাজা কর্ণদেবকে আশ্রয় দিয়েছিলেন, এই অভিযোগে আলাউদ্দিন খলজি দেবগিরি আক্রমণ করেন। রামচন্দ্রদেব যুদ্ধে পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পণ করেন। এরপর ১...

পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের গুরুত্ব লেখো ।

পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের গুরুত্ব:       পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের গুরুত্ব নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে তীব্র বিতর্ক রয়েছে। অধিকাংশ মারাঠা ঐতিহাসিক এই যুদ্ধকে গুরুত্বহীন একটি ঘটনা রূপে তুলে ধরেছেন। তাদের মতে এই যুদ্ধে কয়েকজন প্রথম সারির মারাঠা সামরিক নেতার প্রাণহানি ছাড়া মারাঠা শক্তি কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় নি। বিজয়ী আহম্মদ শাহ আবদালীও ভারতে কোনো সাম্রাজ্য গঠন করতে পারেন নি। বরং যুদ্ধের পর তিনি মারাঠাদের সঙ্গে একটি মিত্রতা চুক্তির উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এছাড়া মারাঠা ঐতিহাসিকরা আরো বলেছেন, পানিপথের যুদ্ধের ফলে মারাঠা শক্তি ধ্বংস হয়নি। পানিপথের তৃতীয় যুদ্ধের কিছুদিনের মধ্যেই মাধব রাও, নানা ফড়নবিশ, মহাদজি সিন্ধিয়া প্রমুখের নেতৃত্বে মারাঠারা পুনরায় সংগঠিত হয়ে ভারতীয় রাজনীতির অঙ্গনে মারাঠাদের উজ্জ্বল উপস্থিতি তুলে ধরেছিল। তাই ঐতিহাসিক সরদেশাই লিখেছেন, "The disaster of Panipath decided nothing. "     অন্যদিকে মারাঠা ঐতিহাসিকদের বক্তব্যের বিরোধিতা করে স্যার যদুনাথ সরকার স্পষ্টভাবে বলেছেন, ভারতবর্ষের রাজনৈতিক ইতিহাসের ভাগ্য ভবিষ্যতে কোনদিকে প্রবাহিত হবে তা পানিপথ ...

সিংহাসনে আরোহণ করার পর হুমায়ুনকে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল ?

সিংহাসনে আরোহণ করার পর হুমায়ুনের সমস্যা ঃ       মুঘল সম্রাট বাবরের মৃত্যুর চারদিন পর অর্থাৎ ১৫৩০ খ্রিস্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর তাঁর জেষ্ঠপুত্র হুমায়ুন দিল্লীর সিংহাসনে বসেন।  ‘হুমায়ুন’ শব্দের অর্থ ‘ভাগ্যবান’। কিন্তু ভাগ্যের নিমর্ম পরিহাসে হুমায়ুনের সমগ্র জীবনটাই নানাবিধ সমস্যায় দুর্ভাগ্যপূর্ণ ছিল। তিনি ১৫০৮ খ্রিস্টাব্দে ৬ই মার্চ কাবুলে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতা ছিলেন মহিম বেগম। পিতা বাবর মৃত্যুশয্যায় হুমায়ূনকে সাম্রাজ্যের উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যান। হুমায়ুনের সমস্যাসমূহঃ সিংহাসনে বসেই হুমানয়ুন নানাবিধ কঠিন ও জটিল সমস্যার সম্মুখীন হন। কেননা পিতা বাবরের কাছ থেকে তিনি যে সিংহাসন লাভ করেছিলেন, তা নিষ্কণ্টক ছিল না। প্রথমত: জ্যেষ্ঠ পুত্র সিংহাসনের অধিকারী হবেন এমন রীতি-তৈমুর বংশে প্রচলিত ছিল না। তাঁর অন্যান্য ভ্রাতা ও আত্মীয়রা সিংহাসনের উপর তাঁদের দাবী জানাতে থাকে। ফলে সিংহাসন দিয়ে জটিল বিরোধ দেখা দেয়। দ্বিতীয়তঃ বাবরের ভ্রান্ত অর্থনীতি, ক্রমাগত যুদ্ধ বিগ্রহ ও অমিতব্যয়িতার জন্য রাজকোষ শূন্য ছিল। ফলে হুমায়ুন প্রবল অর্থসংকটে ছিলেন। তৃতীয়তঃ , হুমায়ুনের চরিত্রে সা...

মিথ (উপকথা) ও লেজেন্ড (পুরাকাহিনি) বলতে কী বোঝ ? অতীত বিষয়ে মানুষের ধারণাকে এরা কীভাবে রূপদান করে ?

পৌরাণিক কাহিনি বা মিথ: সংজ্ঞা: সৃষ্টির আদিমকালে অপরিণত বুদ্ধির মানুষ যে সমস্ত ধর্মীয় অলৌকিক কল্পকাহিনি রচনা ও প্রচার করে তাকে পৌরাণিক কাহিনি বা লোকপুরাণ (Myth) বলে। লোকপুরাণগুলি লোকসমাজের দ্বারা মৌখিকভাবে সুপ্রাচীন অতীত থেকে রচিত হয়ে আসছে। ‘Myth' শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ 'Muthos' থেকে। কিংবদন্তির সংজ্ঞা: সংঞ্জা: সাধারণত বিশেষ কোনো অঞ্চলে সংঘটিত কোনো ঘটনা বা চরিত্রকেন্দ্রিক কাহিনি যা সেই অঞ্চলের মানুষ প্রজন্ম পরম্পরায় মনে রাখে এবং বিশ্বাস করে ও পরবর্তী প্রজন্মের কাছে প্রচার করে, তাকে কিংবদন্তি বলে। মৌখিক ইতিহাসে এক প্রধান উপাদান হল কিংবদন্তির কাহিনি বা বীরগাথা । সত্য, মিথ্যা, সম্ভাবনা—এই তিনের মিলিত সমষ্টি কিংবদন্তি। পুরাকালে বিশেষ কোনো ভোজ উৎসবে কোনো সন্ন্যাসী বা ধর্মগুরুর যে সমস্ত জীবনবৃত্তান্ত কথিত বা গীত হত তাকে কিংবদন্তি বলা হত। ব্লুমসবেরি ইংরেজি অভিধানে কিংবদন্তি সম্বন্ধে বলা হয়েছে—কিংবদন্তি হল এমন এক গল্প যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে উপস্থাপিত হয়েছে ইতিহাসরূপে, আসলে যা সত্যি নয়। মারিয়া লিচ সম্পাদিত 'Standard Dictionary of Folklore, Mythology and Legend...

ক্রিপস মিশন কেন ভারতে এসেছিল ? ক্রিপস মিশনের প্রস্তাব‌ গুলি কী ছিল ? এক্ষেত্রে ভারতীয়দের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ?

সূচনা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ভারতের ব্রিটিশ সরকার ভারতবাসীর আর্থিক ও সামরিক সাহায্য প্রার্থনা করে। যদিও কংগ্রেস এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়, ফলে এক রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দেয়। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভার সদস্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসের নেতৃত্বে ক্রিপস মিশন ভারতে আসে (১৯৪২ খ্রি.) ও এক প্রস্তাব পেশ করে যা ক্রিপস প্রস্তাব নামে পরিচিত। ক্রিপস্ প্রস্তাব সম্পর্কে ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল বলেছিলেন—আমাদের সততা প্রমাণের জন্যই ক্রিপস মিশন অপরিহার্য ('The Cripps Mission is indispensable to prove our honesty of purpose') ! পটভূমি / কারণ : ক্রিপস্ মিশনের ভারতে আসার পটভূমি বা কারণগুলি হলো –  [1] জাপানি আক্রমণ প্রতিরোধ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন (১৯৪১ খ্রি., ৭ ডিসেম্বর) জাপান হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের পার্লহারবারে অবস্থিত মার্কিন যুদ্ধজাহাজ ধ্বংস করে অক্ষশক্তির পক্ষে যুদ্ধে যোগদান করলে বিশ্ব রাজনীতিতে এক গুরুতর পরিবর্তন ঘটে। একে একে ফিলিপাইন, ইন্দোচিন, ইন্দোনেশিয়া, মালয় ও ব্রহ্মদেশ বিধ্বস্ত করে (১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৮ মার্চ) জাপান ভারতের নিকটে এসে হাজির হয়।...

তৃতীয় বিশ্ব বলতে কী বোঝ ? তৃতীয় বিশ্বের বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো ।

তৃতীয় বিশ্ব: সংজ্ঞা: ‘ তৃতীয় বিশ্ব’ বলতে ঠিক কী বোঝায় এ নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে মতভেদ লক্ষ করা যায়। ফ্রানজ ফ্যানন নামক এক আলজিরিয়ান লেখক প্রথম 'তৃতীয় বিশ্ব' কথাটি ব্যবহার করেন। তাঁর মতে, তৃতীয় বিশ্ব বলতে পুঁজিবাদী ও সমাজতান্ত্রিক দেশসমূহের বাইরে অবস্থিত স্বাধীনতার জন্য ও সাম্রাজ্যবাদী শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় অবস্থিত প্রাক্তন উপনিবেশগুলিকে বোঝায়। জ ডি বি মিলার-এর মতে, কমিউনিস্ট নয়, আবার পুঁজিবাদীও নয় এমন সব দেশকে তৃতীয় বিশ্ব বলে। মিলার অবশ্য লাতিন আমেরিকার দেশগুলিকে তৃতীয় বিশ্বের বাইরে রেখেছেন। কারণ তাঁর মতে, লাতিন আমেরিকার দেশগুলির সঙ্গে তৃতীয় বিশ্বভুক্ত আফ্রো-এশিয়ার দেশগুলির অনেক বৈসাদৃশ্য আছে। তৃতীয় বিশ্ব হল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক নতুন ধারণা। সাধারণভাবে বলা যায়, ঠান্ডা লড়াইয়ে রত রুশ-মার্কিন উভয় জোটের বাইরে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশগুলিই তৃতীয় বিশ্বে নামে পরিচিত। সাধারণভাবে এরা সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী, দারিদ্র্যপীড়িত ও পশ্চাৎপদ। এদের অনেকেই জোটনিরপেক্ষ আন্দো...