সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

অক্টোবর, ২০২৪ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ফারুখশিয়ারের ফরমান সম্পর্কে আলোচনা করো।

ফারুখশিয়ারের ফরমান: সূচনা: ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে জন সুরম্যানের নেতৃত্বে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি দল মোগল সম্রাট ফারুখশিয়ারের কাছ থেকে বাংলায় বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার যে ছাড়পত্র বা ‘দস্তক' লাভ করে তা ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দের ফরমান বা ফারুখশিয়ারের ফরমান নামে পরিচিত। ফারুখশিয়ারের ফরমানের নানা দিক:  [i] ইংরেজ কোম্পানি বার্ষিক মাত্র ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে বাংলায় বিনা শুল্কে আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য করার অধিকার পায়। [ii] কোম্পানি কলকাতার সন্নিহিত ৩৮টি গ্রাম সামান্য অর্থের বিনিময়ে কেনার অধিকার পায়। [iii] কোম্পানির কুঠির প্রধান দস্তক বা ছাড়পত্র প্রদানের অধিকার লাভ করেন। স্থির হয়, কোনো মালবাহী জাহাজ এই দস্তক দেখালে নবাবের কোনো কর্মচারী ওই জাহাজ পরীক্ষা না করে ছেড়ে দিতে বাধ্য থাকতেন। [iv] কোম্পানি মুরশিদাবাদের টাকশাল ব্যবহার করতে পারবে। ফরমান লাভের পটভূমি: ইউরোপের অন্যান্য বণিক কোম্পানিগুলির মতো ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিও বাণিজ্য করার জন্য বাংলায় কুঠি নির্মাণ করে (১৬৫১ খ্রি.)। বাণিজ্যে সমৃদ্ধি লাভ করে তারা কলকাতা, সুতানুটি ও গোবিন্দপুর এই তিনটি গ্রামের জামিদারি স্বত্...

কোরিয়া সংকট বা কোরিয়া যুদ্ধের বর্ণনা দাও।

কোরিয়া সংকট বা কোরিয়া যুদ্ধেঃ ভূমিকা : মাও জে দঙ্-এর নেতৃত্বে চিনে প্রজাতন্ত্র গঠিত হওয়ার (১৯৪৯ খ্রি., অক্টোবর) ৯ মাস পরে কোরিয়ার যুদ্ধ শুরু হয় (১৯৫০ খ্রি., ২৫ জুন)। ১৯৪৫ সালে কোরিয়াবাসীর অনুমতি ছাড়াই কোরিয়াকে উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করা হয়েছিল। ৩৮° অক্ষরেখাকে দুই কোরিয়ার মধ্যে সীমারেখা হিসেবে ধার্য করা হয়। কায়রো সম্মেলনে (১৯৪৩ খ্রি.) কোরিয়াকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার ওপরে যথাক্রমে সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের আধিপত্য কায়েম করলে কোরিয়া সংকট তীব্র হয়ে ওঠে। ঐতিহাসিক ডি. এফ. ফ্লেমিং তাঁর 'দ্য কোল্ড ওয়ার অ্যান্ড ইটস অরিজিন' গ্রন্থে লিখেছেন— মার্কিন নাগরিকদের কাছে কোরিয়ার যুদ্ধের উদ্‌বর্তপত্র অত্যন্ত নেতিবাচক ছিল। সংকটের সূত্রপাত: কোরিয়া ১৯১০ খ্রিস্টাব্দ থেকেই জাপানের কর্তৃত্বাধীন ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে মার্কিন সেনা ও সোভিয়েত লালফৌজ জাপানের হাত থেকে কোরিয়াকে মুক্ত করে। অবশেষে জাপান সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হলে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে ৩৮° অক্ষরেখা বরাবর উত্তরাংশে সোভিয়েত রাশিয়ার...

বিংশ শতকে উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনের কারণগুলি আলোচনা করো।

উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনের কারণ: সূচনা: ইউরোপের বেশ কয়েকটি শক্তিশালী দেশ পঞ্চদশ শতক থেকে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন পিছিয়ে পড়া দেশে নিজেদের ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫ খ্রি.) পরবর্তীকালে উপনিবেশ-বিরোধী আন্দোলন ব্যাপক আকার ধারণ করে। [1] পশ্চিমি শোষণ: পশ্চিমি ঔপনিবেশিক শক্তিগুলি দীর্ঘকাল ধরে তাদের নিজ নিজ উপনিবেশে তীব্র অর্থনৈতিক শোষণ চালায় এবং উপনিবেশগুলি থেকে শোষণ করা অর্থসম্পদের সহায়তায় নিজ দেশের অর্থনীতির সমৃদ্ধি ঘটায়। উপনিবেশ থেকে সস্তায় সংগ্রহ করা কাঁচামালের সাহায্যে পশ্চিমি দেশগুলির শিল্প কারখানায় শিল্প উৎপাদন প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে, বিদেশি শিল্পজাত পণ্য দেশীয় বাজার দখল করে নিলে উপনিবেশগুলির স্থানীয় কুটিরশিল্প ধ্বংস হয়, শিল্পীরা বেকার হয়ে পড়ে এবং উপনিবেশের স্থানীয় অর্থনীতি ভেঙে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে এরূপ বিদেশি শোষণের ফলে উপনিবেশের বাসিন্দাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। ফলে তারা পশ্চিমি ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বাধ্য হয়। [2] পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রভাব: পশ্চিমি ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার উপনিব...

আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি (Methods of Modern History Writing) সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।

আধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি: সূচনা: জ্ঞানের অন্যান্য শাখার মতো ইতিহাসের নিজস্ব লিখন পদ্ধতি রয়েছে। (1) উৎসের অনুসন্ধান: ইতিহাস লিখনপদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপ হল ঐতিহাসিক ঘটনার উৎসের অনুসন্ধান করা। ইতিহাস হল  উৎসভিত্তিক, উৎস ছাড়া ইতিহাস হয় না। উৎস আবার নানা ধরনের হয়ে থাকে। যথা— i. প্রত্নতাত্ত্বিক: জীবাশ্ম, যন্ত্রপাতি, হাড়গোড়, অস্ত্রশস্ত্র, আসবাবপত্র, স্মৃতিসৌধ, স্থাপত্য প্রভৃতি। ii. মৌখিক: মুখে মুখে এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মে প্রচারিত ধর্মীয় বিশ্বাস, পৌরাণিক কাহিনি, অতিকথন, রূপকথা, কিংবদন্তি, কাহিনিমালা, পালাগান, প্রবাদ প্রভৃতি। iii. ছবিভিত্তিক: চিত্রকলা, নকশা, মানচিত্র প্রভৃতি। iv. লিখিত বিবরণমূলক: প্রাচীন পাণ্ডুলিপি, দিনলিপি, চুক্তি বা সন্ধিপত্র, দলিল দস্তাবেজ, চিঠিপত্র, সংবাদপত্র, মুদ্রিত পুস্তক প্রভৃতি। এই সমস্ত উৎসগুলি থেকে ঐতিহাসিক তার প্রয়োজনীয় উৎসের অনুসন্ধান করেন এবং সেগুলির সাহায্যে ইতিহাস রচনা করেন। (2) উৎস থেকে তথ্য চয়ন: উৎসের অনুসন্ধান শেষে ঐতিহাসিক তার প্রয়োজনীয় উৎসটি চিহ্নিত করেন। এই উৎস থেকে ঐতিহাসিক তার প্রয়োজনীয় তথ্যাবলি সংগ্রহ করেন। কোনো তথ...

ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায়ের আন্দোলনের বিবরণ দাও।

ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতে আদিবাসী ও দলিত সম্প্রদায়ের আন্দোলন: সূচনা :  ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনকালে সর্বাধিক শোষিত ও নির্যাতিত ছিল আদিবাসী ও দলিত শ্রেণি। ঔপনিবেশিক শাসন কালে ব্রিটিশ সরকার, মধ্যবিত্ত শ্রেণি, মহাজন প্রভৃতি স্তরের অর্থনৈতিক শোষণ ছাড়াও আদিবাসী দলিত সম্প্রদায়কে সমাজের উচ্চবর্ণের সামাজিক অবিচারের শিকার হতে হয়। নিম্নবর্গের মধ্যে সাঁওতাল, কোল, ভিল, মুন্ডা প্রভৃতি আদিবাসী সম্প্রদায়ই প্রথম ব্রিটিশ সরকার, জমিদার ও মহাজনদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে শামিল হয়। পরবর্তীকালে অর্থনৈতিক ও সামাজিক শোষণের বিরুদ্ধে দলিতদের প্রতিরোধ শুরু হয়। ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি সরকারের বিরুদ্ধে আদিবাসী ও দলিতদের এই আন্দোলনগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল- আদিবাসী আন্দোলনের বিবরণ: (১) চুয়াড় বিদ্রোহঃ ভারতের প্রথম আদিবাসী বিদ্রোহ ছিল ১৭৬৮ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত চুয়াড় বিদ্রোহ। মেদিনীপুর জেলার উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত জঙ্গলমহল, বাঁকুড়া, সিংভূম, ঘাটশিলা প্রভৃতি অঞ্চলে ধমভূমের জগন্নাথ ধলের নেতৃত্বে চুয়াড় আদিবাসীরা বিদ্রোহে শামিল হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত এই অঞ্চল চুয়াড় আদিবাসীরা বেশ কয়েকবার বিদ্রোহ করে, যার মূল কা...

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের প্রেক্ষাপট ও শর্তাবলি আলোচনা করো। এই আইনের গুরুত্ব কী ছিল ?

১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন: প্রেক্ষাপট: সূচনা: ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত-বিষয়ক যে গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়ন করে তা ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন নামে পরিচিত। সরকার ঘোষণা করে যে, ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের ১ এপ্রিল থেকে এই আইন কার্যকরী হবে। ১৯৩৫ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইনের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন উপাদান সক্রিয় ছিল। যেমন— [1] মন্ট-ফোর্ড আইনের ব্যর্থতা: ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের মন্টেগু- চেমসফোর্ড আইন প্রণয়নের পরবর্তীকালে ভারতীয় রাজনীতিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে যায়। এই আইন ভারতীয়দের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হলে গান্ধিজির নেতৃত্বে সারা ভারতে প্রবল গণ আন্দোলন শুরু হয়। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে এই সময় বিপ্লববাদী কার্যকলাপও যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদের প্রসার ব্রিটিশ সরকারকে ভাবিয়ে তোলে। [2] সাইমন কমিশনের রিপোর্ট:  এই সময় ভারতীয়রা স্বায়ত্তশাসন লাভের উপযুক্ত কিনা তা যাচাইয়ের উদ্দেশ্যে সাইমন কমিশন ভারতে আসে। ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে কমিশনের রিপোর্টে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের ওপর সুপারিশ করা হয়। [3] গোলটেবিল বৈঠক: সাইমন কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিত...

বিংশ শতকে উপনিবেশবাদের অবসানের কারণগুলি আলোচনা করো।

উপনিবেশবাদের অবসানের কারণ: সূচনা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী প্রায় ৩৫ বছরের মধ্যে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ থেকে পশ্চিমি ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান ঘটে এবং অধিকাংশ উপনিবেশ সার্বভৌম স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। [1] বিশ্বযুদ্ধের ফলশ্রুতি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফলে ব্রিটেন ও ফ্রান্সের মতো শক্তিশালী ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রগুলির অর্থনীতি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থাও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। এরূপ পরিস্থিতিতে তারা দূরদূরান্তের উপনিবেশগুলিতে আধিপত্য বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়। [2] রাশিয়ার চাপ: রাশিয়া ভেবেছিল যে, ঔপনিবেশিক শাসনমুক্ত হওয়ার পর সেসব দেশে সমাজতন্ত্রের প্রসার সম্ভব হবে। এই উদ্দেশ্যে রাশিয়া প্রকাশ্য উপনিবেশবাদের বিরোধিতা করে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে পশ্চিমি দেশগুলিকে তাদের উপনিবেশগুলির স্বাধীনতা দানের উদ্দেশ্যে চাপ দিতে থাকে। [3] আমেরিকার চাপ: আমেরিকা মনে করেছিল যে, ঔপনিবেশিক শাসনমুক্ত হওয়ার পর সদ্য-স্বাধীন দেশগুলিতে নিজেদের প্রভাব বিস্তার এবং বাণিজ্যিক অগ্রগতি সম্ভব হবে। তাই আমেরিকা বিভিন্ন পদক্ষেপের মাধ্যমে বুঝিয়ে দেয় যে, উপনিবেশবাদের প্রসারকে সে সমর্থন করব...

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির ভূমিকা মূল্যায়ন করো।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে আই.এন. এ.-র ভূমিকা: ভূমিকা : আজাদ হিন্দ ফৌজের বীর সেনাদের আত্মত্যাগ ও সংগ্রামী মানসিকতার দ্বারা উজ্জীবিত হয়ে ব্রিটিশ নৌবাহিনীর ভারতীয় সেনারা বিদ্রোহ ঘোষণা করে যা ভারতের স্বাধীনতাকে ত্বরান্বিত করে। গান্ধিজি বলেছিলেন- যদিও আজাদ হিন্দ ফৌজ তাদের লক্ষ্যে পৌঁছোতে পারেনি, কিন্তু তারা এমন কিছু করেছে যার নিজেরা গর্ববোধ করতে পারে। আজাদ হিন্দ বাহিনী যে বীরত্বপূর্ণ সংগ্ৰাম চালিয়েছিল তার গুরুত্ব ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। [1]সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি স্থাপনে : মাতৃভূমি ছেড়ে বহু দূরে বিদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে একই পতাকার নীচে ধর্ম ও জাতিভেদ ভুলে মাতৃভূমির মুক্তিযজ্ঞে যেভাবে সকল সম্প্রদায়ের সেনা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই চালিয়েছিল তা ছিল সাম্প্রদায়িক ঐক্যের সবচেয়ে বড়ো নিদর্শন। [2] নৌবাহিনীতে প্রভাব: আজাদ হিন্দ সেনাদের চান আতা ও বীরত্বপূর্ণ পড়াই ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে ভারতীয় নৌসেনাদের বিদ্রোহী মনোভাব জাগিয়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। যার ফলে ঘটে যায়, নৌবিদ্রোহ। নৌবিদ্রোহের পরেই ভীত হয়ে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নেতা অধ্যাপক রিচার্ডস প্রধানমন্ত্রী এটলিকে বলেন – আমাদের এখনই ক্ষমতা ...

অতীত স্মরণ করার ক্ষেত্রে কিংবদন্তি বা মিথ এবং স্মৃতিকথার গুরুত্ব আলোচনা করো

ইতিহাস রচনায় মিথ ও লেজেন্ডের গুরুত্ব: মিথ-এর গুরুত্ব: মিথ বা পৌরাণিক কাহিনি হল প্রাগৈতিহাসিক যুগের বিভিন্ন কাহিনি বাঘটনার বিবরণ, যেগুলির ভিত্তি হল মানব সভ্যতার উদ্ভবের পূর্বে ঐশ্বরিক জগতে সংঘটিত হওয়া নানান কাল্পনিক ঘটনা। এটি সাহিত্যের সর্বপ্রথম রূপ, যা এককথায় হল মৌখিক ইতিহাস ।ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে মিথ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন-  i. অতীতের দর্পণ হিসেবে: পৌরাণিক কাহিনিগুলি হল, ‘গল্পের আকারে সত্য ঘটনার প্রকাশ'। তাই পৌরাণিক কাহিনিকে সঙ্গী করে ইতিহাসের পুনর্নির্মাণ করা যায়। এই পৌরাণিক কাহিনিকে সম্বল করেই গ্রিসের প্রাচীন ট্রয় নগরী ও ট্রয় যুদ্ধক্ষেত্রের অবস্থান নির্ণয় করা গেছে।  ii.সময়কাল নির্ণয়: পৌরাণিক কাহিনি অতীতের অনেক ধারাবাহিক ছবি তুলে ধরে, ফলে এর মাধ্যমে ইতিহাসের সময়কাল নির্ধারণ করা যায়। পৌরাণিক কাহিনিগুলির সঙ্গে তুলনামূলক পদ্ধতিতে যাচাই করে ইতিহাসের বহু সাল, তারিখ নির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে। iii. বংশতালিকা নির্ধারণ: পৌরাণিক কাহিনিগুলি থেকে প্রাচীনকালের বিভিন্ন রাজবংশের তালিকা জানা যায়। ঐতিহাসিক ড. রণবীর চক্রবর্তীর মতে, পুরাণে বর্ণিত বংশগুলির অস্তিত্ব...

চীনের উপর আরোপিত বিভিন্ন অসম চুক্তিগুলির সংক্ষিপ্ত আলোচনা কর।

চীনের উপর আরোপিত বিভিন্ন অসম চুক্তি সমূহ : ভুমিকা:  চীনে কিং বংশের রাজত্বকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান প্রভৃতি বহিরাগতশক্তিগুলি চীনকে বিভিন্ন যুদ্ধে পরাজিত করে অর্থনৈতিক ও সামরিক শক্তির আধিপত্যের প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয় এবং চীনের ওপর বিভিন্ন শোষণমূলক চুক্তি চাপিয়ে দেয়। এই চুক্তিগুলি সাধারণভাবে অসমচুক্তি নামে পরিচিত। মোটামুটিভাবে 1839 খ্রি: থেকে 1949 খ্রি: পর্যন্ত চীনের সঙ্গে এর শোষণমূলক আচরণ চলতে থাকায় এই চুক্তিগুলিকে চীনের ‘শতাব্দীব্যাপী অবমাননা’ বলে চিহ্নিত করা হয়। অসম চুক্তিগুলির বৈশিষ্ট্য: অসম চুক্তিগুলির কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। (i) বিদেশি শক্তিগুলির কাছে পরাজিত চীন যে অসম চুক্তিগুলি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয় সেগুলি ছিল একতরফা চুক্তি। (ii) বিদেশি শক্তিগুলি অসম চুক্তিগুলির মাধ্যমে চীনে তাদের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। (iii) পশ্চিমি শক্তিগুলি অসমচুক্তির মাধ্যমে চীনের সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট করে। (iv) বিভিন্নযুদ্ধে পরাজিত চীন যুদ্ধের জন্য একাই দায়ী ছিল না কিছু তা সত্ত্বেও পশ্চিমি শক্তিগুলি চীনের ওপর বিপুল পরিমান অর্থ ও সম্পদ ক্ষতিপূরণ...

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব আলোচনা করো।

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব: ভূমিকা: আধুনিক বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির উপনিবেশ প্রসারের কৌশল ‘নয়া উপনিবেশবাদ’ ও ‘নয়া সাম্রাজ্যবাদ’ নামে পরিচিত। উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে জে. এ. হবসন এবং ভি. আই. লেনিন সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ সম্পর্কে তাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। হবসনের ব্যাখ্যা:  ব্রিটিশ অর্তনীতিবিদ জে. এ. হবসন তাঁর ‘সাম্রাজ্যবাদঃ একটি সমীক্ষা’ নামক গ্রন্থে সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর ব্যাখ্যার প্রধান বিষয়গুলি হল—  [1] অর্থনৈতিক মুনাফা লাভ: হবসনের মতে, সাম্রাজ্যবাদের পিছনে কোনো মহৎ, বা উচ্চতর লক্ষ্য নয়, অর্থনৈতিক মুনাফাই ছিল নয়া উপনিবেশকারীদের প্রধানতম উদ্দেশ্য। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় সমাজে ধনসম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্যের ফলে পুঁজিপতিদের হাতে যে ‘মূলধনের পাহাড়' সৃষ্টি হয়, সেই মূলধন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে তারা মুনাফা লাভের পরিকল্পনা করে। [2] পুঁজিপতিদের চাপ: হবসন মনে করেন যে, নতুন ক্ষেত্রে মূলধন বিনিয়োগ করা...

ইতিহাসের অন্যতম মৌখিক উপাদান হিসেবে স্মৃতিকথা সম্বন্ধে আলোচনা করো।

স্মৃতিকথার নানাদিকঃ সূচনা: স্মৃতির ওপর নির্ভর করেই মানুষ অতীতের দিকে পিছন ফিরে তাকায়। সাধারণভাবে বলা যায়—ইতিহাসের যেখানে শেষ, স্মৃতিলিখন সেখান থেকেই পথচলা শুরু করে। [1] স্মৃতিকথায় সংজ্ঞাঃ i. স্মৃতিচারণগত: সাধারণ অর্থে স্মৃতিকথাগুলি হল অতীতের স্মৃতিচারণ। যে অ-উপন্যাসধর্মী সাহিত্যে লেখক অতীত জীবনে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনার স্মৃতিচারণ করে থাকেন, তাকে স্মৃতিকথা বলা হয়। ii. অতীত ঘটনার বিবরণভিত্তিক: যে লিখিত সাহিত্যে লেখক তার অতীতে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিলেন বা সেই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এমন ঘটনার স্মৃতি বর্ণনা করেন, তাকে স্মৃতিকথা বলা যায়। iii. ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণভিত্তিক: বিগত দিনে ঘটে যাওয়া কোনো ঐতিহাসিক ঘটনাকে যখন লেখক তার স্মৃতির ভাণ্ডার থেকে তুলে আনেন ও তার লিখিত রূপ দেন, তখন তাকে স্মৃতিকথা বলা যেতে পারে। [2] প্রকৃতি : প্রকৃতিগত বিচারে স্মৃতিকথাকে আমরা লৌকিক জ্ঞানও বলতে পারি। স্মৃতিকথা অনেকসময় কালেকটিভ মেমরি বা যৌথ স্মৃতি হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করে। [3] ইতিহাস ও স্মৃতিকথা: ইতিহাস ও স্মৃতিকথার মধ্যে কিছুটা হলেও সম্পর্ক রয়েছে। অতীত দিনের ঘটনা যেমন ইতিহাসে স্থান পায়, ...

জাদুঘরের প্রকারভেদ উল্লেখ করো।

জাদুঘরের প্রকারভেদ: জাদুঘরের ধারণা (Concept of Museum):- জাদুঘর হল এমন একটি প্রতিষ্ঠান বা ভবন যেখানে অতীতের বহু বস্তুকে রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হয়।   ইতিহাসের বিচারে জাদুঘরকে বহুভাগে ভাগ করা হয়। একটি বড় জাদুঘরে যেমন একাধিক বিভাগ থাকে, তেমনি একটি বিশেষ বিষয়ের উপর গুরুত্ব প্রদান করে বিশেষ মিউজিয়াম তৈরি হয়। যেমন প্রত্নতত্ত্ব (Archaeology), নৃতত্ত্ব (Anthropology), চিত্রকলা (Painting), জীবনীমূলক (Biography) জাদুঘর। জাদুঘরের প্রকারভেদ (Category of Museum): (i) প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর (Archaeological Museum): এখানে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন থাকে ও জনগণের দেখার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এমনকি মুক্ত পরিবেশ (Open Space) ও গড়ে তোলা হয়। যেমন; রোমান ফোরাম, এথেন্সের এগোরা। ভারতের জাতীয় সংগ্রহশালা প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘরের তালিকায় পড়ে। (ii) চিত্রকলা মিউজিয়াম (Art Museum): এই জাদুঘর Art Gallery নামেও পরিচিত। আর্ট মিউজিয়ামে মৃৎশিল্প, আসবাবপত্র, ধাতব দ্রব্য সংগ্রহে রাখা হয়। চিত্রকলা মিউজিয়ামের তালিকায় রয়েছে- (i) অ্যাসমোলেন সংগ্রহশালা, (ii) ব্রিটিশ মিউজিয়াম (iii) হারমিটেজ সংগ্রহশালা ও (...

জাদুঘর কাকে বলে ? অতীত পুনর্গঠনে যাদুঘরের ভূমিকা আলোচনা কর।

জাদুঘর: শব্দের বুৎপত্তি: বাংলা জাদুঘর শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Museum মিউজিয়াম শব্দের মূল উৎস হল প্রাচীন গ্রিক শব্দ Mouseion যার অর্থ হল গ্রিক পুরানের শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক মিউজদের মন্দির। বাংলা অ্যাকাডেমির অভিমত: পশ্চিমবঙ্গ অ্যাকাডেমির 'অ্যাকাডেমি বিদ্যার্থী বাংলা অভিধান' অনুসারে যে ঘরে নানা অত্যাশ্চর্য জিনিস বা প্রাচীন জিনিস সংরক্ষিত থাকে তাই হল জাদুঘর। আন্তর্জাতিক জাদুঘর পর্ষদের অভিমত:- International Council of Museums বা ICON এর মতে, জাদুঘর হল অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযোগ্য ও স্পর্শতাযোগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে। সংরক্ষণ করে প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা:- এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা (Vol 8, Page 440) তে উল্লেখ আছে। মানুষের ইচ্ছায় নানা কৌতূহলোদ্দীপক সুন্দর সুন্দর বস্তু মিউজিয়াম বা যাদুঘরে সংরক্ষিত হয়ে থাকে। সাধারণ সংজ্ঞা: বস্তুত জাদুঘর হল বিভিন্ন ঐতিহাসিক উপাদানের সংগ্রহশালা, যেখানে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক, শিল্প বি...