সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইতিহাসের অন্যতম মৌখিক উপাদান হিসেবে স্মৃতিকথা সম্বন্ধে আলোচনা করো।

স্মৃতিকথার নানাদিকঃ


সূচনা: স্মৃতির ওপর নির্ভর করেই মানুষ অতীতের দিকে পিছন ফিরে তাকায়। সাধারণভাবে বলা যায়—ইতিহাসের যেখানে শেষ, স্মৃতিলিখন সেখান থেকেই পথচলা শুরু করে।


[1] স্মৃতিকথায় সংজ্ঞাঃ

i. স্মৃতিচারণগত: সাধারণ অর্থে স্মৃতিকথাগুলি হল অতীতের স্মৃতিচারণ। যে অ-উপন্যাসধর্মী সাহিত্যে লেখক অতীত জীবনে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনার স্মৃতিচারণ করে থাকেন, তাকে স্মৃতিকথা বলা হয়।

ii. অতীত ঘটনার বিবরণভিত্তিক: যে লিখিত সাহিত্যে লেখক তার অতীতে ঘটে যাওয়া কোনো ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছিলেন বা সেই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এমন ঘটনার স্মৃতি বর্ণনা করেন, তাকে স্মৃতিকথা বলা যায়।

iii. ঐতিহাসিক ঘটনার বিবরণভিত্তিক: বিগত দিনে ঘটে যাওয়া কোনো ঐতিহাসিক ঘটনাকে যখন লেখক তার স্মৃতির ভাণ্ডার থেকে তুলে আনেন ও তার লিখিত রূপ দেন, তখন তাকে স্মৃতিকথা বলা যেতে পারে।

[2] প্রকৃতি : প্রকৃতিগত বিচারে স্মৃতিকথাকে আমরা লৌকিক জ্ঞানও বলতে পারি। স্মৃতিকথা অনেকসময় কালেকটিভ মেমরি বা যৌথ স্মৃতি হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করে।

[3] ইতিহাস ও স্মৃতিকথা: ইতিহাস ও স্মৃতিকথার মধ্যে কিছুটা হলেও সম্পর্ক রয়েছে। অতীত দিনের ঘটনা যেমন ইতিহাসে স্থান পায়, তেমন অতীত কাহিনিও স্মৃতিকথায় স্থান পায়। ইতিহাসে অতীত কাহিনি লিখিত আকারে তথ্যসূত্র-সহ উপস্থাপিত হয়। কিন্তু স্মৃতিকথায় তথ্যসূত্র ছাড়াই কাহিনির হুবহু বর্ণনা লক্ষ করা যায়।

[4] স্মৃতিকথার বৈশিষ্ট্যঃ

i. বাস্তব অভিজ্ঞতার বিবরণ: স্মৃতিকথায় যে কাহিনি বর্ণিত বা পরিবেশিত হয় তা কোনো ব্যক্তিবিশেষের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বাস্তব অভিজ্ঞতার বিবরণ বলা চলে।

ii. গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার উপস্থাপন: স্মৃতিকথায় লেখকের কলমে তার অতীত জীবনে ঘটে যাওয়া সমস্ত ঘটনা উঠে আসে না। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র বিগত দিনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলির ওপরেই আলোকপাত করা হয়।

iii. বিশেষ অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ: স্মৃতিকণার লেখকের বিগত দিনের ঘটনাবলি সম্পর্কে বিশেষ অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটে থাকে। দক্ষিণারঞ্জন বসুর লেখা ছেড়ে আসা গ্রাম' নামে স্মৃতিকথায় আমরা দেশভাগের ইতিহাস ও যন্ত্রণার বিশেষ অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করে থাকি।

[5] উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্মৃতিকথাঃ

 i. ছেড়ে আসা গ্রাম: দক্ষিণার এন বসুর লেখা 'ছেড়ে আসা গ্রাম' নামে স্মৃতিকথায় দেশভাগের প্রেক্ষাপট বর্ণিত হয়েছে। দেশভাগের পরিণতি উদ্বাস্তু শরণার্থীদের মানসিক যন্ত্রণা, বেদনা ধরা পড়েছে এই উপন্যাসে।

ii. সেদিনের কথা: স্বাধীনতা লাভের প্রাক্কালে কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রেক্ষাপটে মণিকুন্তলা সেন লেখেন তাঁর স্মৃতিকথা ‘সেদিনের কথা'। এই আত্মকথায় হিন্দু- মুসলিম হানাহানির নিদারুণ করুণ চিত্র ফুটে ওঠে।

iii. জীবনস্মৃতি: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর অতীত দিনের স্মৃতি নিয়ে লিখেছিলেন 'জীবনস্মৃতি' গ্রন্থ। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, “জীবনস্মৃতি জীবন কথা নয়, স্মৃতিকথা।” এই স্মৃতিকথার বিষয়গুলি ছিল কবির শিক্ষারম্ভ, কবিতা রচনারম্ভ, শিক্ষাজীবন, বাড়ির পরিবেশ, গীতচর্চা, স্বদেশ ভাবনা, পিতৃদেবের প্রসঙ্গ, হিমালয় যাত্রা ও প্রত্যাবর্তন-সহ নানা প্রসঙ্গ। ৪৪টি পরিচ্ছেদে কবি জীবনের শুরুর দিকের বিচিত্র স্মৃতিগুলি এই গ্রন্থে স্থান পেয়েছে।

iv. দ্য স্ট্রাগল ইন মাই লাইফ: দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয়তাবাদী প্রাণপুরুষ নেলসন ম্যান্ডেলা তাঁর বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী জীবনসংগ্রামের স্মৃতি নিয়ে রচনা করেন 'দ্য স্ট্রাগল ইন মাই লাইফ' নামে গ্রন্থটি। এই স্মৃতিকথাটিতে নেলসন ম্যান্ডেলা দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ সরকারের বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী অপশাসনের বিরুদ্ধে নিজের এবং নিজ দেশবাসীর জীবনসংগ্রামের কাহিনি পরিবেশন করেছেন।

v. অন্যান্য স্মৃতিকথা: অন্যান্য স্মৃতিকথার মধ্যে মহাত্মা গান্ধির ‘দ্য স্টোরি অব মাই এক্সপেরিমেন্টস উইথ ট্রুথ', মৌলানা আবুল কালাম আজাদের ‘ইন্ডিয়া উইন্‌স ফ্রিডম' বিশেষ উল্লেখযোগ্য।

[6] স্মৃতিকথার গুরুত্বঃ

i. বাস্তবতার বিচারে: বাস্তবতার বিচারে স্মৃতিকথাগুলিতে অতীত দিনের বাস্তব ঘটনা বা কাহিনিগুলি সাধারণত পরিবেশিত হয়।

ii. ঐতিহাসিক উপাদান হিসেবে: জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ওপর লেখা বা কোনো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার ওপর লেখা। স্মৃতিকথাগুলি ইতিহাসের মূল্যবান ঘটনাবলির জানান দেয়।

iii. প্রত্যক্ষ বিবরণ হিসেবে: অতীত কাহিনি বা ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী গুণী ব্যক্তিগণ স্মৃতিকথায় তাদের অতীত স্মৃতি পুনবর্ণনা করেন।

উপসংহার: স্মৃতিকথাগুলি ইতিহাসের মৌখিক উপাদান হিসেবে ব্যক্ত হলেও এগুলিতে অনেকসময় সঠিক বিষয়বস্তুর উপস্থাপনার অভাব ধরা পড়ে।



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব আলোচনা করো।

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব: ভূমিকা: আধুনিক বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির উপনিবেশ প্রসারের কৌশল ‘নয়া উপনিবেশবাদ’ ও ‘নয়া সাম্রাজ্যবাদ’ নামে পরিচিত। উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে জে. এ. হবসন এবং ভি. আই. লেনিন সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ সম্পর্কে তাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। হবসনের ব্যাখ্যা:  ব্রিটিশ অর্তনীতিবিদ জে. এ. হবসন তাঁর ‘সাম্রাজ্যবাদঃ একটি সমীক্ষা’ নামক গ্রন্থে সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর ব্যাখ্যার প্রধান বিষয়গুলি হল—  [1] অর্থনৈতিক মুনাফা লাভ: হবসনের মতে, সাম্রাজ্যবাদের পিছনে কোনো মহৎ, বা উচ্চতর লক্ষ্য নয়, অর্থনৈতিক মুনাফাই ছিল নয়া উপনিবেশকারীদের প্রধানতম উদ্দেশ্য। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় সমাজে ধনসম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্যের ফলে পুঁজিপতিদের হাতে যে ‘মূলধনের পাহাড়' সৃষ্টি হয়, সেই মূলধন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে তারা মুনাফা লাভের পরিকল্পনা করে। [2] পুঁজিপতিদের চাপ: হবসন মনে করেন যে, নতুন ক্ষেত্রে মূলধন বিনিয়োগ করা...

অবশিল্পায়ন কি ? ঔপনিবেশিক ভারতে অবশিল্পায়নের কারণ ও ফলাফল লেখো ।

অবশিল্পায়নঃ        অবশিল্পায়ন বলতে বোঝায় শিল্পায়নের বিপরীত বা শিল্পের অধোগতি। অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনধীন ভারতের চিরাচরিত ও ঐতিহ্যশালী হস্তশিল্প-কুটিরশিল্পের ধ্বংস সাধনই মূলত অবশিল্পায়ন। সব্যসাচী ভট্টাচার্যের মতে যদি দেশের মানুষ শিল্প-কর্ম ছেড়ে চাষ-আবাদে জীবিকা অর্জন শুরু করে অথবা জাতীয় কৃষিজ ও অংশ বাড়তে থাকে এবং শিল্পজ অংশ কমতে থাকে তাকে অব-অবশিল্পায় বলে। অবশিল্পায়নের ফলে ভারতের অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের অবশিল্পায়ন সম্পর্কে প্রথম পর্বে দাদাভাই নাও রোজি, রমেশ চন্দ্র দত্ত, মহাদেব গোবিন্দ রানাডে প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতা এবং পরবর্তীকালে রজনীপাম দত্ত জাতীয়তাবাদী নেতা এবং পরবর্তীকালে রজনী পামদত্ত, গ্যাডগিল, বি.ডি. বসু, নরেন্দ্রকৃয় সিংহ, বিপান চন্দ্র, অমিয় বাগচি প্রমুখ ঐতিহাসিক আলোচনা করেছেন। অব-শিল্পায়নের কারণঃ (১) কাঁচামালের রপ্তানি: ভারতীয় শিল্পের ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে ভারত থেকে ইংল্যান্ডে কাঁচামাল রপ্তানি শুরু হয়। ভারত ইংল্যান্ডের কলকারখানার খোলা বাজার ও কাঁচামাল সরবরাহের উৎসে পরিণত হয়। ভারত থেকে তুলো, নীল, কফি, চা, রেশম প্রভৃতি ইং...

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। এই যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা কী ছিল ?

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: সূচনা: ১৯৬০-এর দশকের শেষদিকে আওয়ামি লিগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ববঙ্গের স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছোয়। (1) মিথ্যা মামলায় জড়ানো: শেখ মুজিবুরসহ অন্যান্য আওয়ামি লিগ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে, তারা ভারতের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এই অভিযোগে পাক সরকার ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের প্রথমদিকে শেখ মুজিবুরসহ ৩৫ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তীব্র হয়ে ওঠে। প্রবল আন্দোলনের চাপে পাক সরকার মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। (2) সাধারণ নির্বাচন: পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাকিস্তানের সরকার- বিরোধী অসন্তোষ বাড়তে থাকলে পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন। এই নির্বাচনে মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন লাভ করে। পশ্চিম পাকিস্তানের ১৪০টি আসনের মধ্যে জুলফিকার আলি ভুট্টোর পিপলস পাটি ...

সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ  সূচনা: মিশর দেশের উত্তর-পূর্ব দিকে ইংরেজ ও ফরাসিদের তত্ত্বাবধানে খনন করা একটি খাল হল সুয়েজ খাল। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ওই খাল খনন শুরু হলেও ১৮৬৯ থেকে এতে বাণিজ্যিকভাবে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। ইউনিভার্সাল সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি নামে এক সংস্থাকে একটি চুক্তির ভিত্তিতে ৯৯ বছরের জন্য খালটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই মিশরের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের এক ঘোষণাবলে সুয়েজ খাল ও সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি—দুটিকেই জাতীয়করণ করে নেন। বিশ্বজুড়ে এই সমস্যাকেই সুয়েজ সংকট বোঝায়। সুয়েজ সংকটের কারণঃ (১) ব্রিটেন ও ফ্রান্সের দায়িত্ব: আরব-ইজরায়েল দ্বন্দ্ব চলাকালে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইজরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিলে আরব দেশগুলি ক্ষুব্ধ হয় এবং নাসেরের সঙ্গেও পাশ্চাত্য দেশগুলির মনোমালিন্য শুরু হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্রিটেন ও ফ্রান্সই সুয়েজ খালের ওপর সবথেকে বেশি নির্ভরশীল ছিল। মার্কিন বিদেশমন্ত্রী ডালেস যখন সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশগুলিকে নিয়ে এক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেন তখ...

জোটনিরপেক্ষ নীতি কী ? জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব লেখো।

জোটনিরপেক্ষ নীতিঃ     দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে একদিকে সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সাম্যবাদী বা সমাজতান্ত্রিক জোট, অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুঁজিবাদী বা ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট গঠিত হয়। এই দুই জোটের কোনোটিতেই যোগ না দিয়ে, স্বাধীনভাবে উভয় জোটের সঙ্গেই বন্ধুত্ব বা সমদূরত্ব বজায় রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বৈদেশিক সম্পর্ক পরিচালনার নীতি জোটনিরপেক্ষ নীতি নামে পরিচিত। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের কারণ বা উদ্দেশ্য ঃ    মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোট ও সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোটের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব থেকে উদ্ভূত ‘ঠান্ডা লড়াই'-এর আর্বত থেকে নিজেকে দূরে রেখে, জাতীয় স্বার্থ ও নবলব্ধ স্বাধীনতাকে রক্ষার জন্য ভারত জোটনিরপেক্ষ বিদেশনীতি গ্রহণ করে। ভারতে জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের কারণগুলি হল— [1] ভৌগোলিক সুরক্ষা : এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে এমন একটা জায়গায় ভারতের অবস্থান যা তাকে মধ্যপ্রাচ্য। ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী দেশে পরিণত করেছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, চিন, ব্রহ্মদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশি...