সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

সেপ্টেম্বর, ২০২৫ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

ভারতে রেলপথ প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ও প্রভাব আলোচনা করো।

রেলপথ স্থাপনের উদ্দেশ্য ও প্রভাব: সূচনা: ভারতের বড়োলাট লর্ড ডালহৌসির আমলে 'গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলার রেল কোম্পানি' (GIPR) ভারতে সর্বপ্রথম রেলপথের প্রতিষ্ঠা করে। ডালহৌসিকে ভারতীয় রেলপথের জনক বলা হয়। তাঁর আমলে ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে (১৬ এপ্রিল) বোম্বাই থেকে থানে পর্যন্ত ২১ মাইল রেলপথ স্থাপিত হয়। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে পূর্বভারতের হাওড়া থেকে হুগলি পর্যন্ত ভারতের দ্বিতীয় রেলপথ চালু হয়। ডালহৌসির আমলে ভারতের প্রায় ২০০ মাইল রেলপথ নির্মিত হয়। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় রেলপথের জাতীয়করণ করা হয় ও এটি বিশ্বের বৃহত্তম নেটওয়ার্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। নিজেদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও অন্যান্য প্রয়োজনে বড়োলাট লর্ড ডালহৌসি ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম রেলপথ স্থাপন করেন। রেলপথ স্থাপনের উদ্দেশ্য:  [1] ডালহৌসির উদ্দেশ্য: লর্ড ডালহৌসি বিশেষ কয়েকটি উদ্দেশ্য নিয়ে ভারতে রেলপথ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। এই উদ্দেশ্যগুলি হল— [i] ভারতের দূরবর্তী অঞ্চলগুলিতে দ্রুত সেনাবাহিনী পাঠানো। [ii] রেলপথ স্থাপনের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো। [iii] দেশে শিল্প পরিকাঠামো গড়ে...

কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট: সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও গুরুত্ব

কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট:  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ঠান্ডা যুদ্ধের সময় আর একটি সংকট বিশ্বকে আণবিক যুদ্ধের দিকে এগিয়ে দিয়েছিল, তা ছিল কিউবা সংকট। কিউবা হল ক্যারিবিয়ান সাগরে অবস্থিত পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে সর্ববৃহৎ দ্বীপ। দেশটি চিনি উৎপাদনের জন্য জগৎবিখ্যাত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত লাইন ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল এই দেশটির উপর। নিজেদের অস্তিত্বের প্রয়োজনে কিউবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল ছিল। মার্কিন পৃষ্ঠপোষকতায় ফ্যালজেনিকো বাতিস্তা ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে কিউবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ফিদেল কাস্ত্রোর ক্ষমতালাভ: বাতিস্তা সরকারের আমলে দেশে দারিদ্র্য, দুর্নীতি, অসাম্য, স্বৈরাচার প্রভৃতি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়। ফলে মার্কিন মদতপুষ্ট এই সরকারের প্রতি কিউবার জনগণের সমর্থন ছিল না। বাতিস্তা সরকারের অপদার্থতার সুযোগে ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে ১ জানুয়ারি ফিদেল কাস্ত্রো কিউবায় এক অভ্যন্তরীণ বিপ্লব ঘটিয়ে দেশের শাসন ক্ষমতা দখল করেন। কিউবাতে বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগী হলে আমেরিকার সাথে কিউবার বিরোধের স...

ঠান্ডা লড়াই বলতে কী বোঝায়? ঠান্ডা লড়াই-এর তাত্ত্বিক ভিত্তি ব্যাখ্যা করো।

ঠান্ডা লড়াই: ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর ভাবদর্শগত দিক থেকে সমগ্র পৃথিবী দুটি শক্তি শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদিকে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক বা ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। অন্যদিকে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বা সাম্যবাদী রাষ্ট্রজোট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই দুটি রাষ্ট্রজোট সমগ্র পৃথিবীতে নিজেদের সামরিক ও রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তারের উদ্দেশ্যে যে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয় তা ঠান্ডা লড়াই নামে খ্যাত। কারণ এই লড়াই কোনো সশস্ত্র লড়াই ছিল না। এটি ছিল এক ভাবাদর্শগত বা মতাদর্শগত লড়াই এবং তা কেবলমাত্র কূটনৈতিক স্তরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ঠান্ডা লড়াই - এর তাত্ত্বিক ভিত্তি/ উদ্ভবের কারণ:- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোটের মধ্যে সংগঠিত ঠান্ডা লড়াইয়ের উদ্ভব নিয়ে ঐতিহাসিকরা বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যা একত্রে তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা নামে পরিচিত। এগুলি হল- [১] ঐতিহ্যবাহী বা রক্ষণশীল ব্যাখ্যা:  এই মতবাদে বিশ্বাসীদের মতে, ঠান্ডা যুদ্ধ ছিল আদর্শগত বিরোধ এবং এর জন্য ...

রাওলাট আইন ১৯১৯: উদ্দেশ্য‌ ও গান্ধিজির বিরোধিতা ।

রাওলাট আইন: সূচনা: প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে ভারতীয়দের ব্রিটিশ বিরোধী গণ আন্দোলন ও বৈপ্লবিক কার্যকলাপ সম্পূর্ণ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার যে সমস্ত দমনমূলক আইন প্রবর্তন করেছিল। তার সার্থক প্রয়াস ছিল ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত রাওলাট আইন। ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার ইংল্যান্ডের বিচারপতি স্যার সিডনি রাওলাট-এর সভাপতিত্বে পাঁচজন সদস্যকে নিয়ে একটি 'সিডিশন কমিশন' বা রাওলাট কমিশন গঠন করেন। এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভায় ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাসে একটি দমনমূলক বিল উত্থাপিত হয়। ভারতীয় সদস্যদের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে ১৮ মার্চ বিলটি আইনে পরিণত হয়। এই রাওলাট আইন (Rowlatt Act) নামে পরিচিত। উদ্দেশ্য:  ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয়তাবাদ, গণ আন্দোলন, বিপ্লবী কার্যকলাপ প্রভৃতি ধ্বংস করার উদ্দেশ্যেই কুখ্যাত রাওলাট আইনটি প্রণয়ন করা হয়। এই আইনে যে সমস্ত ধারা রাখা হয় তা হল- (১) সরকার বিরোধী যে-কোনো প্রচারকার্য দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য করা হবে। (২) সন্দেহভাজন যে-কোনো ব্যক্তিকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করা যাবে। (৩) গ্রেপ্তারের পর বিনা বিচারে তাদের অনির্দিষ্টকাল আটকে...

লক্ষ্ণৌ চুক্তি ১৯১৬: শর্তাবলী ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব ।

লক্ষ্ণৌ চুক্তি: পটভূমিকাঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভারতের জাতীয় আন্দোলন অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়ে। হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায় নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল ভুলে গিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে উদ্দ্যোগী হয় এবং এর বাস্তব প্রয়োগ ছিল ১৯১৬ সালের লক্ষ্ণৌ চুক্তি।। শর্তাবলী: লক্ষ্ণৌ চুক্তির মূলকথা ছিল প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন, বিকেন্দ্রীকরণ, এবং ভারতীয়করণ। জাতীয় কংগ্রেস এবং মুসলিম লিগের যৌথ উদ্দ্যোগে সম্পাদিত লক্ষ্ণৌ চুক্তিতে বলা হয়েছিল,- (i) পৃথক নির্বাচনের ভিত্তিতে জাতীয় কংগ্রেস মুসলিমদের প্রতিনিধিত্বের দাবিগুলি মেনে নেবে। (ii) কংগ্রেসের স্বরাজের দাবিকে মুসলিম লিগ সমর্থন করবে। (iii) কেন্দ্রীয় আইন পরিষদ এবং প্রাদেশিক আইন সভার সদস্যদের ১/৩ অংশ হবে মুসলিম প্রতিনিধি। তবে সংরক্ষিত আসন ছাড়া অন্য কোনো আসনের, কেন্দ্র ও প্রদেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। (iv) কংগ্রেস এবং মুসলিম লিগ উভয়দল যৌথভাবে শাসন সংস্কারের দাবি উত্থাপন করবে। (v) ভারত সচিবের দুজন সরকারীর মধ্যে একজন হবে ভারতীয়। (vi) অন্য ডোমিনিয়ানের মর্যাদা এবং প্রতিনিধিত্ব ভারতকে দিতে হবে। গুরুত্বঃ (i) ১৯১৬ সালে লক্ষ্ণৌ...

হাে-চি-মিনের নেতৃত্বে ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধ: ভূমিকা :  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়কালে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাসে এক দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত ছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধ। হো-চি-মিনের নেতৃত্বে, ভিয়েতনামবাসীরা দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে (১৯৪৫-৭৫ খ্রি.) যে সংগ্রাম চালিয়েছিল তা ইতিহাসে ভিয়েতনাম যুদ্ধ নামে পরিচিত। তৃতীয় বিশ্বের উপনিবেশবাদ-বিরোধী সংগ্রামকে গৌরবান্বিত করেছিল এই ভিয়েতনাম যুদ্ধ। ভিয়েতনাম যুদ্ধে ভিয়েতনামিরা প্রথমে ফরাসি সাম্রাজ্যবাদ ও পরে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে ধ্বংস করে স্বাধীনতা অর্জন করে। [1] পটভূমি    যেসব ঘটনা ভিয়েতনাম যুদ্ধের পটভূমি রচনায় সাহায্য করেছিল, সেগুলি হল- [i] দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ঔপনিবেশিক বিরোধিতা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে থেকেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্তর্গত মালয়, শ্যাম (থাইল্যান্ড), ব্রহ্মদেশ (মায়ানমার) সহ বিভিন্ন দেশে উপনিবেশ-বিরোধী সম্মেলন শুরু হয়েছিল। যার অংশীদার হয়েছিল হো-চি-মিনের নেতৃত্বে ভিয়েতনামও।  [ii] রুশ-জাপান যুদ্ধের ফলাফল: রুশ-জাপান যুদ্ধের ফলাফল জাপানের অনুকূলে যাওয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবাসীর মতো ভিয়েতনামবাসীর মন থেকেও শ্বেতাঙ্গ ভীতি দূর হয়। ত...