সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

মর্লে মিন্টো সংস্কার আইন 1909 খ্রিস্টাব্দ – ভারতীয় কাউন্সিল অ্যাক্ট সম্পর্কে আলোচনা করো।

মর্লে মিন্টো সংস্কার আইন: সূচনা: বঙ্গভঙ্গের পরে ভারতীয় রাজনীতিতে চরমপন্থা ও সশস্ত্র বৈপ্লবিক ধারার উদ্ভব ঘটলে ব্রিটিশ বিভিন্নভাবে ভারতীয়দের সঙ্গে আপস মীমাংসার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। এই সূত্রেই ভারত-সচিব জন মর্গে এবং বড়োলাট মিন্টো ভারতের শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে যে সংস্কার আইন প্রবর্তন করেন (১৯০৯ খ্রি.) তা মর্লে- মিন্টো শাসন সংস্কার বা ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের কাউন্সিল আইন নামে পরিচিত। এই শাসনসংস্কার নীতির দ্বারা ব্রিটিশ হিন্দু-মুসলিম বিভেদনীতিকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় আন্দোলনের প্রসার রোধ করতে চেয়েছিল। আইন প্রবর্তনের কারণ: এই শাসনসংস্কার আইনটির পটভূমি বিশ্লেষণে দেখা যায় — (১) ১৯০৭ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সুরটি অধিবেশনে নরমপন্থী বা মডারেটদের পাশাপাশি চরমপন্থী বা এক্সট্রিমিস্টদের উদ্ভব ঘটে। এই দ্বন্দ্বকে কাজে লাগানোর সুযোগ পায় ব্রিটিশ। (২) সশস্ত্র বিপ্লবী ভাবধারায় উদ্‌বুদ্ধ হয়ে বাংলা ও মহারাষ্ট্রে গোপন বিপ্লবী সংঘ প্রতিষ্ঠা ও প্রকাশ্যে রাজনৈতিক হত্যার ঘটনা শুরু হয়, যা ব্রিটিশের কাছে ছিল সন্ত্রাসবাদ। (৩) আগাগোড়াই মুসলিম নেতারা জাতীয় কংগ্রেসের বিরোধিতা করেছিল বা...
সাম্প্রতিক পোস্টগুলি

ভিতারি স্তম্ভলিপি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টিকা লেখো।

ভিতারি স্তম্ভলিপি: প্রথম কুমারগুপ্তের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র স্কন্দগুপ্ত গুপ্ত সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেন। অনেকের মতে, কুমারগুপ্তের মৃত্যুর পর ঘটোৎকচগুপ্ত কিছুকাল সিংহাসনে বসেছিলেন। রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, কুমারগুপ্তের মৃত্যুর পর সিংহাসন দখলকে কেন্দ্র করে ভ্রাতৃবিরোধ শুরু হয় ও শেষপর্যন্ত ৪৫৫ খ্রিস্টাব্দে স্কন্দগুপ্ত সম্রাট হন। ফদগুপ্তের রাজত্বকাল সম্পর্কে জানার জন্য দুটি লিপির সাহায্য নিতে হয়, যথা— জুনাগড় শিলালিপি ও ভিতারি মুণ্ডলিপি । ভিতারি লিপিটি সংস্কৃত ভাষায় লেখা এবং প্রায় ২৪ ফুট উঁচু স্তত্ত্বের ওপর মোট ১৯টি লাইনের এই লিপিটি তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমান উত্তরপ্রদেশের গাজীপুরের নিকট ভিতারি অবস্থিত। ঐতিহাসিক আর পি ত্রিপাঠীর মতে এই লিপিটি থেকে স্কন্দগুপ্তের সঙ্গে পুষ্যমিত্র ও চুন শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামের বিবরণ পাওয়া যায়। ভিতারি লিপির প্রথম পাঁচটি লাইনের মধ্যে সমুদ্রগুপ্ত, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত এবং প্রথম কুমারগুপ্তের গৌরবময় জীবনের কথা বলা হয়েছে। সমুদ্রগুপ্তকে ইন্দ্র, বরুণ প্রমুখ দেবতার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তেমনই গোদান, স্বর্গদান প্রভৃতি দানশীলতার কথাও উল্লিখিত রয়েছে। তা ছাড়া...

ফ্যাসিবাদ কী ? ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো

ফ্যাসিবাদ:   প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো ইতালিতেও শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলন শুরু হয়। ইতালির সর্বত্র অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট, বেকারত্ব, হতাশা ও অবসাদ নেমে আসে।ইতালিবাসীর জীবনে এই সংকটমোচনের জন্য হাল ধরেন বেনিতো মুসোলিনি। তাঁর নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট দল ইতালির রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে। এই ফ্যাসিস্ট দলের মতবাদই ফ্যাসিবাদ নামে পরিচিত। লাতিন শব্দ ফাসেস ( Fasces ) এবং ইতালীয় ফ্যাসিও ( Fascio ) শব্দ থেকে উদ্ভূত হয়েছে ফ্যাসিসমো ( Fascismo ) শব্দটি। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ফ্যাসিজ্ম ( Fascism ) বাংলায় যা ফ্যাসিবাদ নামে পরিচিত। ঐতিহাসিক বেনেদিত ক্রোচ-এর মতে—ফ্যাসিবাদ হল খণ্ড খণ্ড সমষ্টি ও একটি ভিত্তিহীন সংস্কৃতির দিকে পৌঁছানোর বন্ধ্যা মানসিক প্রয়াসমাত্র । ফ্যাসিবাদের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যসমূহ : ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্যাসিবাদের আবির্ভাব ঘটে। প্রথমে ফ্যাসিবাদীদের লক্ষ্য ছিল পুঁজিবাদের বিরোধিতা করা। পরবর্তীকালে তাদের চরম লক্ষ্য হয়ে ওঠে শ্রমিকশ্রেণির সংগঠনগুলিকে ধ্বংস করে পুঁজিবাদকে রক্ষা করা। এই কারণেই ফ্যাসিবাদকে একটি প্রতিক্রিয়াশীল মতাদর্শ ...

ঠান্ডা লড়াই-এর প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য লেখো।

ঠান্ডা লড়াই: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে একদিকে থাকে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট, অপরদিকে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক ও সামরিক আধিপত্য গড়ে তোলার জন্য এই দুই রাষ্ট্রজোটের মধ্যে যে গোপন লড়াই শুরু হয় তা ঠান্ডা লড়াই নামে পরিচিত। মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ‘ The Cold War ’ গ্ৰন্থে সর্বপ্রথম ‘ঠান্ডা লড়াই’ কথাটি ব্যবহার করেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রকৃতি: বিশ্বে জুড়ে ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে— যুদ্ধপরিবেশ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয় পক্ষই নিজেদের মধ্যে সরাসরি কোনো শক্তিপরীক্ষায় অবতীর্ণ না হলেও এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশগুলিকে পরোক্ষভাবে মদত দিয়ে যুদ্ধের বাতাবরণ বজায় রেখেছিল। এসময় উভয় পক্ষই বিপজ্জনক পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। সংঘর্ষহীনতা: উদ্দেশ্যমূলক প্রচার, অন্তর্ঘাত, এমনকি সীমিত কিছু নাশকতামূলক কাজকর্মকে ঠান্ডা লড়াই উৎসাহ দিলেও কোনো ক্ষেত্রেই তা শেষপর্যন্ত ব্যাপক সংঘর্ষে পরিণত হয়নি। উভয়পক্ষের মধ্যে চরম ...

ভারতে রেলপথ প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ও প্রভাব আলোচনা করো।

রেলপথ স্থাপনের উদ্দেশ্য ও প্রভাব: সূচনা: ভারতের বড়োলাট লর্ড ডালহৌসির আমলে 'গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলার রেল কোম্পানি' (GIPR) ভারতে সর্বপ্রথম রেলপথের প্রতিষ্ঠা করে। ডালহৌসিকে ভারতীয় রেলপথের জনক বলা হয়। তাঁর আমলে ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে (১৬ এপ্রিল) বোম্বাই থেকে থানে পর্যন্ত ২১ মাইল রেলপথ স্থাপিত হয়। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে পূর্বভারতের হাওড়া থেকে হুগলি পর্যন্ত ভারতের দ্বিতীয় রেলপথ চালু হয়। ডালহৌসির আমলে ভারতের প্রায় ২০০ মাইল রেলপথ নির্মিত হয়। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় রেলপথের জাতীয়করণ করা হয় ও এটি বিশ্বের বৃহত্তম নেটওয়ার্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। নিজেদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও অন্যান্য প্রয়োজনে বড়োলাট লর্ড ডালহৌসি ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম রেলপথ স্থাপন করেন। রেলপথ স্থাপনের উদ্দেশ্য:  [1] ডালহৌসির উদ্দেশ্য: লর্ড ডালহৌসি বিশেষ কয়েকটি উদ্দেশ্য নিয়ে ভারতে রেলপথ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। এই উদ্দেশ্যগুলি হল— [i] ভারতের দূরবর্তী অঞ্চলগুলিতে দ্রুত সেনাবাহিনী পাঠানো। [ii] রেলপথ স্থাপনের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো। [iii] দেশে শিল্প পরিকাঠামো গড়ে...