সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আলিগড় আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো ।

অথবা, আলিগড় আন্দোলনে স্যার সৈয়দ আহমেদ এর ভূমিকা আলোচনা করো ।



সূচনা: উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে সমগ্র ভারত জুড়ে যে ধর্ম ও সমাজসংস্কার আন্দোলনের ঢেউ ওঠে তা ভারতের মুসলমান সমাজের ওপরও আছড়ে পড়ে। সৈয়দ আহমেদ সমাজে পিছিয়ে পড়া মুসলমানদের সার্বিক উন্নয়ন ঘটানোর জন্য যে সংস্কার আন্দোলন পরিচালনা করেন তা ইতিহাসে আলিগড় আন্দোলন নামে পরিচিত। 

আন্দোলনের পটভূমি : ব্রিটিশ রাজত্বের প্রথমদিকে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক মোটেই ভালো ছিল না। ব্রিটিশ সরকার মহাবিদ্রোহের জন্য মুসলিমদের বেশি দায়ী করেছিল। অপর দিকে মুসলমানরা ভারতে ব্রিটিশ শাসনকালে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রবর্তনকে সন্দেহের চোখে দেখত। পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত না হওয়ায় সরকারি চাকরির উচ্চপদগুলি প্রভাব-প্রতিপত্তি সবদিক থেকে মুসলিম সম্প্রদায় হিন্দুদের তুলনায় অনেক গুণ পিছিয়ে পড়ে। আলিগড় কলেজে অধ্যক্ষ থিয়োডোর বেকের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে সৈয়দ আহমেদ খাঁ পিছিয়ে পড়া মুসলিমদের নিয়ে আলিগড় কলেজকেন্দ্রিক এক আন্দোলন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা নেন।

আন্দোলনের ভিত্তি : আলিগড় আন্দোলন চারটি মৌলিক নীতির ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।
  1. মুসলিম স্বার্থ : ভারতের হিন্দু ও মুসলমান আলাদা দুই জাতি, তাদের পারস্পরিক স্বার্থও আলাদা—এই প্রচার আলিগড় আন্দোলনের মূল ভিত্তি রচনা করে। 
  2. মুসলিমদের বঞ্চনা: সরকারি শিক্ষানীতির সমালোচনা করে বলা হয়, উচ্চ সরকারি পদগুলিতে নিয়োগ পদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ। কেননা পাশ্চাত্য শিক্ষাহীনতার অজুহাতে সরকারি উচ্চপদগুলি থেকে মুসলিমদের উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
  3. ব্রিটিশ আনুগত্য: মুসলমানদের উদ্দেশে বলা হয়, জাতীয় কংগ্রেস অপেক্ষা ব্রিটিশের প্রতি নির্ভরশীল থাকা অনেক বেশি নিরাপদ ও সুবিধাজনক। কারণ, সরকারি দয়াদাক্ষিণ্যের সুযোগ নিয়ে মুসলমানরা নিজেদের সামাজিক অবস্থান উন্নত করতে পারবে। 'দ্য লয়াল মহামেডানস অব ইন্ডিয়া' নামক এক গ্রন্থে সৈয়দ আহমেদ লেখেন— ‘হিন্দুস্থানে মুসলিমরাই একমাত্র জাতি যারা খ্রিস্টানদের বিপদে বন্ধু হিসেবে পাশে দাঁড়াবে।’
  4. জাতীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ : হিন্দুরা যাতে একতরফাভাবে রাজনৈতিক আন্দোলনের ফসল নিজেদের পক্ষে কাজে লাগাতে না পারে তার জন্য মুসলিমদের আরও বেশি সংখ্যায় জাতীয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করিয়ে বিবিধ সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার আদায় ছিল আলিগড় আন্দোলনের মূল লক্ষ্য।


আলিগড় আন্দোলনের প্রসার

[1] আলিগড় কলেজের ভূমিকা : আলিগড় কলেজের প্রথম তিন অধ্যক্ষ— থিয়োডোর বেক, টি. মরিসন, ডব্লিউ, এ. জে. আর্টিবোল্ড প্রমুখ আলিগড় কলেজকে আন্দোলনের মূলকেন্দ্রে পরিণত করেন। অধ্যক্ষ থিয়োডোর বেক সম্পাদিত ইন্সটিটিউট গেজেট নামক কলেজ পত্রিকাটির দ্বারা বাঙালি, হিন্দু ও কংগ্রেস দলের বিরুদ্ধে প্রচার চালানো হয়।

[2] বিভিন্ন সংগঠন প্রতিষ্ঠা : জাতীয় কংগ্রেসের বিকল্প রূপে আলিগড়ে বেকের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়, ইউনাইটেড ইন্ডিয়ান প্যাট্রিয়টিক অ্যাসোসিয়েশন (১৮৮৮ খ্রি.)। থিয়োডোর বেক পরবর্তী সময়ে মুসলিমদের স্বার্থরক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন মহামেডান অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল ডিফেন্স অ্যাসোসিয়েশন অব আপার ইন্ডিয়া (১৮৯৩ খ্রি.)।

[3] সৈয়দ আহমেদ ও শিক্ষাসংস্কার: মুসলিমদের উচ্চ শিক্ষিত করার লক্ষ্যে উর্দু পত্রিকা 'তাহজিব-উল- আকলার্ক' ও 'পাইওনিয়ার' পত্রিকার মাধ্যমে মুসলিমদের প্রতি পাশ্চাত্য শিক্ষার ভাবধারা প্রচারিত হয়। প্রতিষ্ঠিত হয় বিজ্ঞান সমিতি (১৮৬৫ খ্রি.) ও অনুবাদ সমিতি (১৮৬৬ খ্রি.)। স্যার সৈয়দ আহমেদ গাজীপুরে প্রতিষ্ঠা করেন একটি ইংরেজি বিদ্যালয় (১৮৬৪ খ্রি.), সায়েন্টিফিক সোসাইটি (১৮৬৫ খ্রি.), কমিটি ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অব লার্নিং অ্যামং দ্য মহামেডান অব ইন্ডিয়া (১৮৭০ খ্রি.), অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজ (১৮৭০ খ্রি.), য পরবর্তীকালে আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ পায় (১৯২০ খ্রি.)।

[4] সৈয়দ আহমেদ ও সমাজসংস্কার: সৈয়দ আহমেদ সে সময়কার মুসলিম সমাজে প্রচলিত তালাক প্রথা, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহসহ বিভিন্ন কুপ্রথার বিরুদ্ধে মুসলিমদের সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করেন। তিনি বৈজ্ঞানিক চিন্তাধারা ও যুক্তিবাদের আলোকে মুসলিম সমাজের আধুনিকীকরণের চেষ্টা চালান। এমনকি তিনি আধুনিক চিন্তা ও যুক্তিবাদের আলোকে কোরানের ব্যাখ্যা দেন। মুসলমান সমাজের রক্ষণশীলতার বিরুদ্ধে তিনি জেহাদ ঘোষণা করেন।

[5] আলিগড় আন্দোলনের নেতা হিসেবে : আলিগড় আন্দোলনে নেতৃত্বদানের মাধ্যমে তিনি মূলত দুটি মূল সমস্যার সমাধান করতে চেয়েছিলেন। একটি হল—মহাবিদ্রোহের জন্য মুসলিমরাই মূলত দায়ী, ব্রিটিশের মনের এই ভ্রান্ত ধারণা দূর করা। আর অপরটি হল মুসলিমদের পাশ্চাত্যশিক্ষায় শিক্ষিত করে হিন্দুদের সমকক্ষ করে তোলা।

আলিগড় আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য : 

আলিগড় আন্দোলনের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য ছিল – (1) ব্রিটিশের সাহায্য নিয়ে মুসলিম সমাজের সার্বিক উন্নয়ন ঘটানো। (2) এই আন্দোলনের প্রতি মুসলিম সমাজের গরিষ্ঠ সংখ্যক দরিদ্রশ্রেণির অংশগ্রহণ ঘটেনি। (3) উত্তরপ্রদেশের গুটিকয়েক জমিদারশ্রেণি ও শহুরে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত মুসলিম সম্প্রদায়কেন্দ্রিক ছিল এই আন্দোলন। (4) এই আন্দোলনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল দ্বিজাতিতত্ত্বের অবতারণা। অর্থাৎ এই আন্দোলনের সূত্রেই ভারতীয় রাজনীতিতে হিন্দু-মুসলিম দুটি আলাদা জাতি—এই ধারণার উদ্ভব ঘটে।


সীমাবদ্ধতা :

[1] ব্রিটিশের প্রতি আনুগত্য : আলিগড় আন্দোলনের নেতৃবর্গ সমগ্র মুসলিম সমাজকে ব্রিটিশের অনুগত থাকার পরামর্শ দেওয়ায় মুসলমান সমাজের এক গরিষ্ঠ অংশ ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দেয়নি। ফলে পরবর্তীকালের জাতীয় আন্দোলনগুলি যতটা শক্তিশালী ও গতিশীল হওয়ার কথা তা হয়নি।

[2] জাতীয় স্বার্থে আঘাত : আলিগড় আন্দোলন সংকীর্ণ মুসলমান স্বার্থকেন্দ্রিক হওয়ায় জাতীয় আদর্শ ঐক্য বিনষ্ট হয়। আলিগড়ের নেতৃবৃন্দ আলিগড় আন্দোলনকে কংগ্রেসের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনগুলির ও ভারতীয় বিকল্প রূপে গড়ে তুলতে চাইলেও তা ব্যর্থ হয়।

[3] বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার জন্মদাতা : আলিগড় আন্দোলন ভারতের জাতীয় ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বীজ রোপণ করে। যার পরিণতিরূপে আগামী দিনে ভারত বিভাজন হয়ে আলাদা পাকিস্তান রাষ্ট্র জন্ম নেয়।

[4] উদ্দেশ্যপূরণে ব্যর্থ : গোঁড়া মৌলবি ও মোল্লাদের বিরোধিতার জন্য আলিগড় আন্দোলন শেষ পর্যন্ত তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যপূরণে অনেকটাই ব্যর্থ হয়েছিল। 

উপসংহার: হতাশার অন্ধকারে ডুবে থাকা মুসলিম সমাজের উন্নতির জন্য আলিগড় আন্দোলনের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য। এই আন্দোলনের সুফল হিসেবে মুসলিম সমাজ আগের থেকে অনেকটাই কুসংস্কার ও গোঁড়ামি মুক্ত হয়ে আধুনিক রূপ লাভ করে। তাই ঐতিহাসিক ড. রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেছেন— উনিশ শতকের নবজাগরণ ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলন হিন্দুদের কাছে যা ছিল, আলিগড় আন্দোলনও মুসলিমদের কাছে ছিল ঠিক তাই। 




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব আলোচনা করো।

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব: ভূমিকা: আধুনিক বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির উপনিবেশ প্রসারের কৌশল ‘নয়া উপনিবেশবাদ’ ও ‘নয়া সাম্রাজ্যবাদ’ নামে পরিচিত। উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে জে. এ. হবসন এবং ভি. আই. লেনিন সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ সম্পর্কে তাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। হবসনের ব্যাখ্যা:  ব্রিটিশ অর্তনীতিবিদ জে. এ. হবসন তাঁর ‘সাম্রাজ্যবাদঃ একটি সমীক্ষা’ নামক গ্রন্থে সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর ব্যাখ্যার প্রধান বিষয়গুলি হল—  [1] অর্থনৈতিক মুনাফা লাভ: হবসনের মতে, সাম্রাজ্যবাদের পিছনে কোনো মহৎ, বা উচ্চতর লক্ষ্য নয়, অর্থনৈতিক মুনাফাই ছিল নয়া উপনিবেশকারীদের প্রধানতম উদ্দেশ্য। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় সমাজে ধনসম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্যের ফলে পুঁজিপতিদের হাতে যে ‘মূলধনের পাহাড়' সৃষ্টি হয়, সেই মূলধন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে তারা মুনাফা লাভের পরিকল্পনা করে। [2] পুঁজিপতিদের চাপ: হবসন মনে করেন যে, নতুন ক্ষেত্রে মূলধন বিনিয়োগ করা...

অবশিল্পায়ন কি ? ঔপনিবেশিক ভারতে অবশিল্পায়নের কারণ ও ফলাফল লেখো ।

অবশিল্পায়নঃ        অবশিল্পায়ন বলতে বোঝায় শিল্পায়নের বিপরীত বা শিল্পের অধোগতি। অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনধীন ভারতের চিরাচরিত ও ঐতিহ্যশালী হস্তশিল্প-কুটিরশিল্পের ধ্বংস সাধনই মূলত অবশিল্পায়ন। সব্যসাচী ভট্টাচার্যের মতে যদি দেশের মানুষ শিল্প-কর্ম ছেড়ে চাষ-আবাদে জীবিকা অর্জন শুরু করে অথবা জাতীয় কৃষিজ ও অংশ বাড়তে থাকে এবং শিল্পজ অংশ কমতে থাকে তাকে অব-অবশিল্পায় বলে। অবশিল্পায়নের ফলে ভারতের অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের অবশিল্পায়ন সম্পর্কে প্রথম পর্বে দাদাভাই নাও রোজি, রমেশ চন্দ্র দত্ত, মহাদেব গোবিন্দ রানাডে প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতা এবং পরবর্তীকালে রজনীপাম দত্ত জাতীয়তাবাদী নেতা এবং পরবর্তীকালে রজনী পামদত্ত, গ্যাডগিল, বি.ডি. বসু, নরেন্দ্রকৃয় সিংহ, বিপান চন্দ্র, অমিয় বাগচি প্রমুখ ঐতিহাসিক আলোচনা করেছেন। অব-শিল্পায়নের কারণঃ (১) কাঁচামালের রপ্তানি: ভারতীয় শিল্পের ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে ভারত থেকে ইংল্যান্ডে কাঁচামাল রপ্তানি শুরু হয়। ভারত ইংল্যান্ডের কলকারখানার খোলা বাজার ও কাঁচামাল সরবরাহের উৎসে পরিণত হয়। ভারত থেকে তুলো, নীল, কফি, চা, রেশম প্রভৃতি ইং...

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। এই যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা কী ছিল ?

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: সূচনা: ১৯৬০-এর দশকের শেষদিকে আওয়ামি লিগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ববঙ্গের স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছোয়। (1) মিথ্যা মামলায় জড়ানো: শেখ মুজিবুরসহ অন্যান্য আওয়ামি লিগ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে, তারা ভারতের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এই অভিযোগে পাক সরকার ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের প্রথমদিকে শেখ মুজিবুরসহ ৩৫ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তীব্র হয়ে ওঠে। প্রবল আন্দোলনের চাপে পাক সরকার মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। (2) সাধারণ নির্বাচন: পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাকিস্তানের সরকার- বিরোধী অসন্তোষ বাড়তে থাকলে পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন। এই নির্বাচনে মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন লাভ করে। পশ্চিম পাকিস্তানের ১৪০টি আসনের মধ্যে জুলফিকার আলি ভুট্টোর পিপলস পাটি ...

সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ  সূচনা: মিশর দেশের উত্তর-পূর্ব দিকে ইংরেজ ও ফরাসিদের তত্ত্বাবধানে খনন করা একটি খাল হল সুয়েজ খাল। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ওই খাল খনন শুরু হলেও ১৮৬৯ থেকে এতে বাণিজ্যিকভাবে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। ইউনিভার্সাল সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি নামে এক সংস্থাকে একটি চুক্তির ভিত্তিতে ৯৯ বছরের জন্য খালটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই মিশরের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের এক ঘোষণাবলে সুয়েজ খাল ও সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি—দুটিকেই জাতীয়করণ করে নেন। বিশ্বজুড়ে এই সমস্যাকেই সুয়েজ সংকট বোঝায়। সুয়েজ সংকটের কারণঃ (১) ব্রিটেন ও ফ্রান্সের দায়িত্ব: আরব-ইজরায়েল দ্বন্দ্ব চলাকালে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইজরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিলে আরব দেশগুলি ক্ষুব্ধ হয় এবং নাসেরের সঙ্গেও পাশ্চাত্য দেশগুলির মনোমালিন্য শুরু হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্রিটেন ও ফ্রান্সই সুয়েজ খালের ওপর সবথেকে বেশি নির্ভরশীল ছিল। মার্কিন বিদেশমন্ত্রী ডালেস যখন সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশগুলিকে নিয়ে এক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেন তখ...

জোটনিরপেক্ষ নীতি কী ? জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব লেখো।

জোটনিরপেক্ষ নীতিঃ     দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে একদিকে সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সাম্যবাদী বা সমাজতান্ত্রিক জোট, অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুঁজিবাদী বা ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট গঠিত হয়। এই দুই জোটের কোনোটিতেই যোগ না দিয়ে, স্বাধীনভাবে উভয় জোটের সঙ্গেই বন্ধুত্ব বা সমদূরত্ব বজায় রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বৈদেশিক সম্পর্ক পরিচালনার নীতি জোটনিরপেক্ষ নীতি নামে পরিচিত। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের কারণ বা উদ্দেশ্য ঃ    মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোট ও সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোটের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব থেকে উদ্ভূত ‘ঠান্ডা লড়াই'-এর আর্বত থেকে নিজেকে দূরে রেখে, জাতীয় স্বার্থ ও নবলব্ধ স্বাধীনতাকে রক্ষার জন্য ভারত জোটনিরপেক্ষ বিদেশনীতি গ্রহণ করে। ভারতে জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের কারণগুলি হল— [1] ভৌগোলিক সুরক্ষা : এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে এমন একটা জায়গায় ভারতের অবস্থান যা তাকে মধ্যপ্রাচ্য। ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী দেশে পরিণত করেছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, চিন, ব্রহ্মদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশি...