সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

চোল রাজাদের সামুদ্রিক কার্যকলাপ সম্পর্কে আলোচনা করো।

অথবা, রাজরাজ ও প্রথম রাজেন্দ্র চোলের নেতৃত্বে নৌ সাম্রাজ্যের বিস্তারের ইতিহাস লেখো।


চোল রাজাদের সামুদ্রিক কার্যকলাপঃ

চোল রাজাদের সামুদ্রিক কার্যকলাপ সম্পর্কে আলোচনা করো।


      প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে চোল যুগ সামুদ্রিক কার্যকলাপের জন্য বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। রাজরাজের শাসনকাল থেকে প্রথম কুলোতুঙ্গের শাসনকাল পর্যন্ত প্রায় ১৩৫ বছর চোল রাজারা সামুদ্রিক সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটান। ঐতিহাসিক পানিক্করের মতে, প্রাচীন ভারতের শুধু চোল রাজারাই সামুদ্রিক শক্তির বিস্তারে উৎকর্ষ দেখিয়েছিলেন। চোল রাজাদের নৌ সাম্রাজ্য বিস্তারের পিছনে বাণিজ্যের বিস্তার, উপনিবেশ স্থাপন, আরব আক্রমণ প্রতিহত করা প্রভৃতি বিষয়গুলি মূল কারণ হিসেবে কাজ করেছিল।

       রাজরাজ ও রাজেন্দ্র চোল পিতা-পুত্র চোলদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ইতিহাসে একটি বিশিষ্ট স্থান অধিকার করে আছেন। তাদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় চোল ইতিহাস শতাব্দীকাল ব্যাপী ভারতের ইতিহাসে এক গৌরবজনক অধ্যায়ের সূচনা করেছিল। চোল রাজ্য ছিল একটি ক্ষুদ্র আঞ্চলিক রাজ্য, যাকে রাজরাজ ও রাজেন্দ্র চোল ভারতের মূল ভূখন্ড ছাড়িয়ে তাদের নৌবহরের দাপটে বঙ্গোপসাগরকে এক বিরাট সামুদ্রিক সাম্রাজ্যে পরিণত করে। তাই বলা যায় তারা নৌবহরের সাহায্যে বঙ্গোপসাগরকে ‘চোল হ্রদে’ পরিণত করেছিলেন।

      চোলদের সামুদ্রিক অভিযানের সূচনা করেছিলেন প্রথম রাজরাজ। রাজরাজই প্রথম তামিল রাজা যিনি তাঁর প্রস্তর লেখগুলির ভূমিকায় তাঁর রাজত্বকালের প্রধান ঘটনাবলী লিপিবদ্ধ করেছিলেন। এই প্রস্তর লেখগুলি থেকে তাঁর সামুদ্রিক সাম্রাজ্য বিস্তারের চরম কৃতিত্বের পরিচয় পাওয়া যায়।  রাজরাজ ৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে চোল সিংহাসনে আরোহণের পর শক্তিশালী নৌবহর গঠন করে সামুদ্রিক সাম্রাজ্যবিস্তারে প্রয়াসী হন। ওই সময়ে পশ্চিম ভারতের ব্যাবসাবাণিজ্য সিংহল, কেরল ও পান্ড্য রাজ্যের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত। রাজরাজ এই তিন শক্তির আধিপত্য ধ্বংস করার জন্য সামুদ্রিক অভিযান শুরু করেন।

       রাজরাজ প্রথমেই কেরল ও পাণ্ড্য রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন। তিনি ত্রিবান্দ্রমের নৌযুদ্ধে কেরলরাজ রবিবর্মাকে পরাজিত করেন এবং কেরল ও কুইলন অধিকার করেন। কেরল জয়ের পর পাণ্ড্য রাজাকে পরাজিত করে রাজধানী মাদুরাই দখল করেন। এরপর রাজরাজের নৌবাহিনী আরব সাগরের মধ্যে ছড়িয়ে থাকা ১২০০ দ্বীপ নিয়ে গঠিত মালদ্বীপ অধিকার করে। ফলে আরবদের সঙ্গে বাণিজ্য রাজরাজের নিয়ন্ত্রণে আসে। পাশাপাশি আরব আক্রমণের পথ বন্ধ হয়। মালদ্বীপ জয়ের পর চোল নৌবাহিনী লাক্ষাদ্বীপ অধিকার করে।

      মালদ্বীপ জয় করার পর রাজরাজ সিংহল আক্রমণ করেন। তিনি সিংহলকে সরাসরি নিজের সাম্রাজ্যের অধীনে আনতে চেয়েছিলেন। রাজরাজের নৌবাহিনীর আক্রমণে সিংহলের রাজা পঞ্চম মহেন্দ্র পরাজিত হন এবং রাজধানী অনুরাধাপুর ধ্বংস হয়। রাজরাজ সিংহলের উত্তরাংশ দখল করেন। আর সিংহল বিজয়কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য সেখানে তিনি একটি শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। রাজরাজ শুধু নৌ সাম্রাজ্যের বিস্তারই ঘটাননি, তিনি সুমাত্রার শৈলেন্দ্র বংশীয় রাজা বিজয়তুঙ্গবমনের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করেন এবং শৈলেন্দ্ররাজ্য মেগাপট্রমে একটি বৌদ্ধবিহারও স্থাপন করেন। এইভাবে রাজরাজ এক বিস্তৃত নৌ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

        প্রথম রাজেন্দ্র চোল পিতা রাজরাজের মতোই দক্ষ রাজা ও সাহসী সেনাপতি ছিলেন। তিনি নৌপত্তিকে আরও বিস্তৃত করে চোল যুগের সামুদ্রিক সাম্রাজ্যকে আরও বৃদ্ধি করার নীতি নেন। তাঞ্জোর লিপি ও তিরুমালাই লিপি থেকে প্রথম রাজেন্দ্র চোলের সামুদ্রিক কার্যকলাপের বিবরণ মেলে।

      প্রথম রাজেন্দ্র চোল সিংহলের রাজা পঞ্চম মহেন্দ্রকে পরাজিত করে সমগ্র সিংহল দখল করে নেন। এরপর তিনি আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ জয় করেন। এর পাশাপাশি প্রথম রাজেন্দ্র চোলের নৌবাহিনী ব্রহ্মদেশের কিছু অংশ অধিকার করে নেয়।

        প্রথম রাজেন্দ্র চোল মালাবার উপকূলে আরব অনুপ্রবেশ বন্ধ করার জন্য সচেষ্ট হন। এজন্য তিনি কেরল ও পান্ডা রাজ্যকে নিজের অধীনে আনেন এবং তাঁর পুত্রকে কেরল ও পাণ্ড্য রাজ্যের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। এ ছাড়া মালদ্বীপের ওপর তিনি চোল আধিপতা দৃড় করেন। এইভাবে প্রথম রাজেন্দ্র চোলের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগর অঞ্চল চোলহ্রদে পরিণত হয়।

      প্রথম রাজেন্দ্র চোলের সর্বাধিক কৃতিত্ব ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার জাভা, সুমাত্রা ও মালয়ের শ্রীবিজয় রাজ্যজয়। চিনের সঙ্গে ব্যাবসাবাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য প্রথম রাজেন্দ্র চোল শ্রীবিজয় রাজ্য আক্রমণ করেন। চোল নৌবাহিনীর আক্রমণে এখানকার শৈলেন্দ্র বংশীয় রাজা পরাজিত হন এবং প্রথম রাজেন্দ্র চোলের বশ্যতা স্বীকার করেন। তেমনই বাংলা দেশে নৌ অভিযান পাঠিয়ে রাজেন্দ্র চোল পাল রাজা প্রথম মহীপালকে পরাজিত করেন।

      এক্ষেত্রে লক্ষণীয় যে, প্রথম রাজেন্দ্র চোল নৌশক্তির সাহায্যে বঙ্গোপসাগর, আরব সাগর এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিস্তৃত অঞ্চল পর্যন্ত চোল সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটান। পরবর্তী চোল রাজা রাজাধিরাজ, বীর রাজেন্দ্র এবং প্রথম কুলোতুঙ্গের শাসনকাল পর্যন্ত এই সামুদ্রিক সাম্রাজ্য অক্ষুন্ন ছিল।



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব আলোচনা করো।

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব: ভূমিকা: আধুনিক বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির উপনিবেশ প্রসারের কৌশল ‘নয়া উপনিবেশবাদ’ ও ‘নয়া সাম্রাজ্যবাদ’ নামে পরিচিত। উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে জে. এ. হবসন এবং ভি. আই. লেনিন সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ সম্পর্কে তাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। হবসনের ব্যাখ্যা:  ব্রিটিশ অর্তনীতিবিদ জে. এ. হবসন তাঁর ‘সাম্রাজ্যবাদঃ একটি সমীক্ষা’ নামক গ্রন্থে সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর ব্যাখ্যার প্রধান বিষয়গুলি হল—  [1] অর্থনৈতিক মুনাফা লাভ: হবসনের মতে, সাম্রাজ্যবাদের পিছনে কোনো মহৎ, বা উচ্চতর লক্ষ্য নয়, অর্থনৈতিক মুনাফাই ছিল নয়া উপনিবেশকারীদের প্রধানতম উদ্দেশ্য। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় সমাজে ধনসম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্যের ফলে পুঁজিপতিদের হাতে যে ‘মূলধনের পাহাড়' সৃষ্টি হয়, সেই মূলধন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে তারা মুনাফা লাভের পরিকল্পনা করে। [2] পুঁজিপতিদের চাপ: হবসন মনে করেন যে, নতুন ক্ষেত্রে মূলধন বিনিয়োগ করা...

অবশিল্পায়ন কি ? ঔপনিবেশিক ভারতে অবশিল্পায়নের কারণ ও ফলাফল লেখো ।

অবশিল্পায়নঃ        অবশিল্পায়ন বলতে বোঝায় শিল্পায়নের বিপরীত বা শিল্পের অধোগতি। অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনধীন ভারতের চিরাচরিত ও ঐতিহ্যশালী হস্তশিল্প-কুটিরশিল্পের ধ্বংস সাধনই মূলত অবশিল্পায়ন। সব্যসাচী ভট্টাচার্যের মতে যদি দেশের মানুষ শিল্প-কর্ম ছেড়ে চাষ-আবাদে জীবিকা অর্জন শুরু করে অথবা জাতীয় কৃষিজ ও অংশ বাড়তে থাকে এবং শিল্পজ অংশ কমতে থাকে তাকে অব-অবশিল্পায় বলে। অবশিল্পায়নের ফলে ভারতের অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের অবশিল্পায়ন সম্পর্কে প্রথম পর্বে দাদাভাই নাও রোজি, রমেশ চন্দ্র দত্ত, মহাদেব গোবিন্দ রানাডে প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতা এবং পরবর্তীকালে রজনীপাম দত্ত জাতীয়তাবাদী নেতা এবং পরবর্তীকালে রজনী পামদত্ত, গ্যাডগিল, বি.ডি. বসু, নরেন্দ্রকৃয় সিংহ, বিপান চন্দ্র, অমিয় বাগচি প্রমুখ ঐতিহাসিক আলোচনা করেছেন। অব-শিল্পায়নের কারণঃ (১) কাঁচামালের রপ্তানি: ভারতীয় শিল্পের ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে ভারত থেকে ইংল্যান্ডে কাঁচামাল রপ্তানি শুরু হয়। ভারত ইংল্যান্ডের কলকারখানার খোলা বাজার ও কাঁচামাল সরবরাহের উৎসে পরিণত হয়। ভারত থেকে তুলো, নীল, কফি, চা, রেশম প্রভৃতি ইং...

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। এই যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা কী ছিল ?

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: সূচনা: ১৯৬০-এর দশকের শেষদিকে আওয়ামি লিগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ববঙ্গের স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছোয়। (1) মিথ্যা মামলায় জড়ানো: শেখ মুজিবুরসহ অন্যান্য আওয়ামি লিগ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে, তারা ভারতের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এই অভিযোগে পাক সরকার ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের প্রথমদিকে শেখ মুজিবুরসহ ৩৫ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তীব্র হয়ে ওঠে। প্রবল আন্দোলনের চাপে পাক সরকার মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। (2) সাধারণ নির্বাচন: পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাকিস্তানের সরকার- বিরোধী অসন্তোষ বাড়তে থাকলে পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন। এই নির্বাচনে মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন লাভ করে। পশ্চিম পাকিস্তানের ১৪০টি আসনের মধ্যে জুলফিকার আলি ভুট্টোর পিপলস পাটি ...

সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ  সূচনা: মিশর দেশের উত্তর-পূর্ব দিকে ইংরেজ ও ফরাসিদের তত্ত্বাবধানে খনন করা একটি খাল হল সুয়েজ খাল। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ওই খাল খনন শুরু হলেও ১৮৬৯ থেকে এতে বাণিজ্যিকভাবে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। ইউনিভার্সাল সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি নামে এক সংস্থাকে একটি চুক্তির ভিত্তিতে ৯৯ বছরের জন্য খালটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই মিশরের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের এক ঘোষণাবলে সুয়েজ খাল ও সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি—দুটিকেই জাতীয়করণ করে নেন। বিশ্বজুড়ে এই সমস্যাকেই সুয়েজ সংকট বোঝায়। সুয়েজ সংকটের কারণঃ (১) ব্রিটেন ও ফ্রান্সের দায়িত্ব: আরব-ইজরায়েল দ্বন্দ্ব চলাকালে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইজরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিলে আরব দেশগুলি ক্ষুব্ধ হয় এবং নাসেরের সঙ্গেও পাশ্চাত্য দেশগুলির মনোমালিন্য শুরু হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্রিটেন ও ফ্রান্সই সুয়েজ খালের ওপর সবথেকে বেশি নির্ভরশীল ছিল। মার্কিন বিদেশমন্ত্রী ডালেস যখন সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশগুলিকে নিয়ে এক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেন তখ...

জোটনিরপেক্ষ নীতি কী ? জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব লেখো।

জোটনিরপেক্ষ নীতিঃ     দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে একদিকে সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সাম্যবাদী বা সমাজতান্ত্রিক জোট, অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুঁজিবাদী বা ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট গঠিত হয়। এই দুই জোটের কোনোটিতেই যোগ না দিয়ে, স্বাধীনভাবে উভয় জোটের সঙ্গেই বন্ধুত্ব বা সমদূরত্ব বজায় রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বৈদেশিক সম্পর্ক পরিচালনার নীতি জোটনিরপেক্ষ নীতি নামে পরিচিত। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের কারণ বা উদ্দেশ্য ঃ    মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোট ও সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোটের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব থেকে উদ্ভূত ‘ঠান্ডা লড়াই'-এর আর্বত থেকে নিজেকে দূরে রেখে, জাতীয় স্বার্থ ও নবলব্ধ স্বাধীনতাকে রক্ষার জন্য ভারত জোটনিরপেক্ষ বিদেশনীতি গ্রহণ করে। ভারতে জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের কারণগুলি হল— [1] ভৌগোলিক সুরক্ষা : এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে এমন একটা জায়গায় ভারতের অবস্থান যা তাকে মধ্যপ্রাচ্য। ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী দেশে পরিণত করেছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, চিন, ব্রহ্মদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশি...