সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

একজন ঐতিহাসিক হিসেবে আবদুল কাদির বদায়ুনির মূল্যায়ন করো ।

আবদুল কাদির বদায়ুনি: 


আবদুল কাদির বদায়ুনি


           আকবর তথা মুঘল যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিকদের মধ্যে আবদুল কাদির বদায়ুনির নাম উল্লেখযোগ্য। ১৫০৪ খ্রিস্টাব্দে ফৈজাবাদের বদায়ুনে তাঁর জন্ম হয়। বদায়ুনির পিতা শেখ মুলুক শাহ ছিলেন ধর্মপ্রাণ মানুষ। শৈশবে বদায়ুনি সম্ভালের শেখ হাতিমের কাছে শিক্ষালাভ করেন। ১৫৬২ খ্রিস্টাব্দে পিতার মৃত্যুর পর বদায়ুনি আবুল ফজলের পিতা শেখ মুবারকের কাছে শিক্ষালাভ করেন। শৈশবেই ইতিহাসের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ জন্মেছিল। জীবনের অনেকটা সময় ইতিহাস পড়তে এবং লিখতে কাটিয়ে দিতেন। ১৫৭৪-৭৫ খ্রিস্টাব্দে আগ্রায় সর্বপ্রথম তিনি সম্রাট আকবরের দর্শন পান। এরপর আকবর তাঁর পান্ডিত্যে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে দরবারের ইমামের পদে বসান। ইতিহাসে বদায়ুনি আকবরের উদার ধর্মনীতির একজন কট্টর সমালোচক হিসাবে গণ্য হলেও মনে রাখতে হবে যে, আকবরের উৎসাহেই বদায়ুনি মহাভারতের ফার্সী অনুবাদ করেছিলেন। তবে তিনি গোঁড়া হলেও আবুল ফজলের মতোই উলেমাদের আত্মম্ভরিতা, ধর্মান্ধতা ও খারাপ ব্যবহার পছন্দ করতেন না। তিনি উলেমাদের বহু তর্কযুদ্ধে পরাজিত করেন। বদায়ুনি নিজে গোঁড়া ছিলেন কিন্তু সহানুভূতিহীন, হৃদয়হীন সংকীর্ণমনা ছিলেন না। কিন্তু ধর্ম সম্পর্কে আকবরের স্বাধীন চিন্তা, সমন্বয়বাদী, ধ্যানধারণা, প্রশাসনিক সংস্কার ও অমুসলমানদের প্রতি পৃষ্ঠপোষকতা বদায়ুনি পছন্দ করতেন না। ফলে আকবরের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়।

      এই পটভূমিতেই বদায়ুনি রচনা করেন তাঁর ইতিহাস গ্রন্থ মুন্তাখাব-উৎ-তারিখ। এই গ্রন্থটি লেখার কাজ তিনি শুরু করেন ১৫৯১ খ্রিস্টাব্দে এবং শেষ করেন ১৫৯৬ খ্রিস্টাব্দে। তিন খন্ডে বিভক্ত মুন্তাখাব-উৎ-তারিখের প্রথম খন্ডে বদায়ুনি সবুক্তগীনের রাজত্বকাল থেকে হুমায়ুন পর্যন্ত ভারতে মুসলমান শাসকদের ইতিহাস লেখেন। দ্বিতীয় খন্ডে তিনি আকবরের প্রথম চল্লিশ বছরের ইতিহাস লেখেন। এই খন্ডে তিনি আকবরকে নিয়ে আবুল ফজলের অতিশোয়ক্তিগুলির সংশোধন করেন। তৃতীয় খন্ডে বদায়ুনি আকবরের রাজসভায় মুসলিম সাধক, দার্শনিক, চিকিৎসক, কবি ও সাহিত্যিক প্রমুখ পন্ডিতদের বিবরণ দিয়েছেন। বদায়ুনি সাধারণত একজন শাসকের সিংহাসনে আরোহণ কাল থেকে লিখতে শুরু করে তাঁর মৃত্যু বা পদচ্যুতি পর্যন্ত সময়কালের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছেন। কিন্তু তাঁর ঘটনাপঞ্জির কালানুক্রমিক ছিল না। তবে আকবরের যুগে সুন্নি মুসলমানরা সম্রাট সম্পর্কে কি ভাবতেন তার আভাস মুস্তাখাব-উৎ-তারিখ গ্রন্থ থেকে পাওয়া যায়। ঐতিহাসিক এস আর শর্মা জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শী হিসাবে বদায়ুনি বর্ণিত ঘটনার অংশগুলি নির্ভরযোগ্য। ঐতিহাসিক মোরল্যান্ড লিখেছেন যে, বদায়ুনির মুন্তাখাব-উৎ-তারিখ ঠিক ইতিহাস গ্রন্থ নয়, বরং এটি ছিল স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ এবং সাংবাদিকের প্রতিবেদন। তাঁর ইতিহাসে ধর্মীয় বিতর্ক, ব্যক্তিগত আক্রমণ, স্বপ্ন, জীবনী ও পারিবারিক কাহিনী ইত্যাদি অনুপ্রবেশের ফলে ঐতিহাসিক বর্ণনার ক্ষতি হয়েছে। তিনি মুষ্টিমেয় ধর্মপ্রাণ মানুষের জন্য ইতিহাস লেখার কথা ভেবেছেন, তাঁর ইতিহাস সকলের জন্য ছিল না। তাঁর ইতিহাসের লক্ষ্য ছিল শরীয়তের বৈধতা দান। তাই বদায়ুনির ইতিহাসের পাতায় পাতায় রয়েছে সম্রাট আকবরের বিরোধিতা। তিনি আকবরের ধর্মচিন্তা ও আচার-আচরণকে বৈপ্লবিক আখ্যা দিয়েছেন। রাজনৈতিক ইতিহাসে তাঁর কোনো আগ্রহ ছিল না। তাঁর কাছে কবি ও তার কাব্য রাজনৈতিক ইতিহাসের চেয়ে বেশি গুরুত্বপর্ণ। আকবরের রাজত্বকালের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক সিদ্ধান্তগুলিকে বদায়ুনি খুব সংক্ষেপে লিখেছেন।

          ঐতিহাসিক হিসাবে আবদুল কাদির বদায়ুনির মৌলিকত্ব হল, তিনি কোনো স্বার্থগোষ্ঠী ও সামাজিক শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করেন নি, তিনি ইতিহাস লিখেছেন স্বাধীনভাবে। তাঁর লেখায় কাউকে সন্তুষ্ট করার তাগিদ ছিল না। এমনকি ঐতিহাসিকের দায়-দায়িত্ব সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণাও ছিল না। তাই ইতিহাস তত্ব ও তার প্রকৃতি নিয়ে বদায়ুনির কোনো অনুসন্ধানী মনের কোনো হদিস মেলে না। ইতিহাস রচনায় আবদুল কাদির বদায়ুনি সব কিছু প্রকাশ করতে চেয়েছিলেন এবং তিনি ভুলভ্রান্তির জন্য ঈশ্বরের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী হয়েছেন। ঐতিহাসিক মহম্মদ মুজিব বদায়ুনির মুন্তাখাব-উৎ-তারিখের মূল্যায়ন করতে গিয়ে লিখেছেন, মুস্তাখাব হল মন নির্ভর মন্ময় ইতিহাস। মুন্তাখাব ইতিহাস নয়, স্মৃতিকথা-এখানে কোনো আবরণ নেই, তিনি যেমন মনে করেছেন তেমনি লিখেছেন। সর্বোপরি বদায়ুনি পাঠককে দিয়েছেন সজীব, প্রাণবন্ত ইতিহাস।



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব আলোচনা করো।

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব: ভূমিকা: আধুনিক বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির উপনিবেশ প্রসারের কৌশল ‘নয়া উপনিবেশবাদ’ ও ‘নয়া সাম্রাজ্যবাদ’ নামে পরিচিত। উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে জে. এ. হবসন এবং ভি. আই. লেনিন সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ সম্পর্কে তাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। হবসনের ব্যাখ্যা:  ব্রিটিশ অর্তনীতিবিদ জে. এ. হবসন তাঁর ‘সাম্রাজ্যবাদঃ একটি সমীক্ষা’ নামক গ্রন্থে সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর ব্যাখ্যার প্রধান বিষয়গুলি হল—  [1] অর্থনৈতিক মুনাফা লাভ: হবসনের মতে, সাম্রাজ্যবাদের পিছনে কোনো মহৎ, বা উচ্চতর লক্ষ্য নয়, অর্থনৈতিক মুনাফাই ছিল নয়া উপনিবেশকারীদের প্রধানতম উদ্দেশ্য। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় সমাজে ধনসম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্যের ফলে পুঁজিপতিদের হাতে যে ‘মূলধনের পাহাড়' সৃষ্টি হয়, সেই মূলধন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে তারা মুনাফা লাভের পরিকল্পনা করে। [2] পুঁজিপতিদের চাপ: হবসন মনে করেন যে, নতুন ক্ষেত্রে মূলধন বিনিয়োগ করা...

অবশিল্পায়ন কি ? ঔপনিবেশিক ভারতে অবশিল্পায়নের কারণ ও ফলাফল লেখো ।

অবশিল্পায়নঃ        অবশিল্পায়ন বলতে বোঝায় শিল্পায়নের বিপরীত বা শিল্পের অধোগতি। অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনধীন ভারতের চিরাচরিত ও ঐতিহ্যশালী হস্তশিল্প-কুটিরশিল্পের ধ্বংস সাধনই মূলত অবশিল্পায়ন। সব্যসাচী ভট্টাচার্যের মতে যদি দেশের মানুষ শিল্প-কর্ম ছেড়ে চাষ-আবাদে জীবিকা অর্জন শুরু করে অথবা জাতীয় কৃষিজ ও অংশ বাড়তে থাকে এবং শিল্পজ অংশ কমতে থাকে তাকে অব-অবশিল্পায় বলে। অবশিল্পায়নের ফলে ভারতের অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের অবশিল্পায়ন সম্পর্কে প্রথম পর্বে দাদাভাই নাও রোজি, রমেশ চন্দ্র দত্ত, মহাদেব গোবিন্দ রানাডে প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতা এবং পরবর্তীকালে রজনীপাম দত্ত জাতীয়তাবাদী নেতা এবং পরবর্তীকালে রজনী পামদত্ত, গ্যাডগিল, বি.ডি. বসু, নরেন্দ্রকৃয় সিংহ, বিপান চন্দ্র, অমিয় বাগচি প্রমুখ ঐতিহাসিক আলোচনা করেছেন। অব-শিল্পায়নের কারণঃ (১) কাঁচামালের রপ্তানি: ভারতীয় শিল্পের ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে ভারত থেকে ইংল্যান্ডে কাঁচামাল রপ্তানি শুরু হয়। ভারত ইংল্যান্ডের কলকারখানার খোলা বাজার ও কাঁচামাল সরবরাহের উৎসে পরিণত হয়। ভারত থেকে তুলো, নীল, কফি, চা, রেশম প্রভৃতি ইং...

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। এই যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা কী ছিল ?

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: সূচনা: ১৯৬০-এর দশকের শেষদিকে আওয়ামি লিগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ববঙ্গের স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছোয়। (1) মিথ্যা মামলায় জড়ানো: শেখ মুজিবুরসহ অন্যান্য আওয়ামি লিগ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে, তারা ভারতের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এই অভিযোগে পাক সরকার ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের প্রথমদিকে শেখ মুজিবুরসহ ৩৫ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তীব্র হয়ে ওঠে। প্রবল আন্দোলনের চাপে পাক সরকার মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। (2) সাধারণ নির্বাচন: পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাকিস্তানের সরকার- বিরোধী অসন্তোষ বাড়তে থাকলে পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন। এই নির্বাচনে মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন লাভ করে। পশ্চিম পাকিস্তানের ১৪০টি আসনের মধ্যে জুলফিকার আলি ভুট্টোর পিপলস পাটি ...

সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ  সূচনা: মিশর দেশের উত্তর-পূর্ব দিকে ইংরেজ ও ফরাসিদের তত্ত্বাবধানে খনন করা একটি খাল হল সুয়েজ খাল। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ওই খাল খনন শুরু হলেও ১৮৬৯ থেকে এতে বাণিজ্যিকভাবে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। ইউনিভার্সাল সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি নামে এক সংস্থাকে একটি চুক্তির ভিত্তিতে ৯৯ বছরের জন্য খালটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই মিশরের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের এক ঘোষণাবলে সুয়েজ খাল ও সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি—দুটিকেই জাতীয়করণ করে নেন। বিশ্বজুড়ে এই সমস্যাকেই সুয়েজ সংকট বোঝায়। সুয়েজ সংকটের কারণঃ (১) ব্রিটেন ও ফ্রান্সের দায়িত্ব: আরব-ইজরায়েল দ্বন্দ্ব চলাকালে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইজরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিলে আরব দেশগুলি ক্ষুব্ধ হয় এবং নাসেরের সঙ্গেও পাশ্চাত্য দেশগুলির মনোমালিন্য শুরু হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্রিটেন ও ফ্রান্সই সুয়েজ খালের ওপর সবথেকে বেশি নির্ভরশীল ছিল। মার্কিন বিদেশমন্ত্রী ডালেস যখন সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশগুলিকে নিয়ে এক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেন তখ...

জোটনিরপেক্ষ নীতি কী ? জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব লেখো।

জোটনিরপেক্ষ নীতিঃ     দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে একদিকে সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সাম্যবাদী বা সমাজতান্ত্রিক জোট, অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুঁজিবাদী বা ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট গঠিত হয়। এই দুই জোটের কোনোটিতেই যোগ না দিয়ে, স্বাধীনভাবে উভয় জোটের সঙ্গেই বন্ধুত্ব বা সমদূরত্ব বজায় রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বৈদেশিক সম্পর্ক পরিচালনার নীতি জোটনিরপেক্ষ নীতি নামে পরিচিত। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের কারণ বা উদ্দেশ্য ঃ    মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোট ও সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোটের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব থেকে উদ্ভূত ‘ঠান্ডা লড়াই'-এর আর্বত থেকে নিজেকে দূরে রেখে, জাতীয় স্বার্থ ও নবলব্ধ স্বাধীনতাকে রক্ষার জন্য ভারত জোটনিরপেক্ষ বিদেশনীতি গ্রহণ করে। ভারতে জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের কারণগুলি হল— [1] ভৌগোলিক সুরক্ষা : এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে এমন একটা জায়গায় ভারতের অবস্থান যা তাকে মধ্যপ্রাচ্য। ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী দেশে পরিণত করেছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, চিন, ব্রহ্মদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশি...