সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

আগস্ট, ২০২৫ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

জেনেভা সম্মেলন– ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ । পটভূমি, শর্তাবলি, ফলাফল ও গুরুত্ব

জেনেভা সম্মেলন– ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ:  সূচনা: দিয়েন-বিয়েন-ফু ঘটনায় ফরাসিদের ব্যর্থতার পর জেনেভা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় (১৯৫৪ খ্রি., ৮ মে)। ইন্দোচিন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ফরাসি প্রধানমন্ত্রী পিয়ের মেন্ডেস ফ্রাঁস জেনেভা সম্মেলন আহবান করেন। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র প্রথম দিকে জেনেভা সম্মেলনের ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ না দেখালেও অবশেষে জেনেভা সম্মেলনের সিদ্ধান্তগুলিকে স্বীকৃতি জানিয়েছিল। জেনেভা সম্মেলনের চূড়ান্ত ঘোষণায় বলা হয়, সম্মেলন স্বীকার করে যে, ভিয়েতনাম সম্পর্কিত চুক্তির প্রকৃত উদ্দেশ্য হল যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য সামরিক প্রশ্নের একটা মীমাংসা করা। সম্মেলনের পটভূমি:   উত্তর ভিয়েতনামে দিয়েন-বিয়েন-ফু (১৯৫৪ খ্রি.)-র শোচনীয় ব্যর্থতার পর ফ্রান্স আর ভিয়েতনামে যুদ্ধ চালাতে রাজি ছিল না। তার রাজি না হওয়ার পেছনে দুটি প্রধান কারণ ছিল। সেগুলি হল— (1) মান- সম্মান বজায় থাকতে থাকতেই ফ্রান্স নিজেকে ভিয়েতনাম থেকে সরিয়ে নিতে চেয়েছিল। (2) ইতিপূর্বেই জাতীয় নির্বাচনে ফ্রান্সে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন হয়ে গেছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী পিয়ের মেন্ডেস ফ্রাঁস ছিলেন যুদ্ধবিরোধী। তিনি চেয়েছিলেন ইন্দোচিন সমস্যার সমাধান আ...

খুত ও মুকদ্দম কাদের বলা হত? কে, কেন তাদের কঠোরভাবে দমন করার চেষ্টা করেন ?

খুত ও মুকদ্দম:‌         বাজার দর নিয়ন্ত্রণ এবং জীবন নির্বাহের ব্যয় হ্রাস করেই আলাউদ্দিন খলজি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য তিনি বিভিন্ন ব্যবস্থা অবলম্বন করার জন্য সচেষ্টও হয়ে ওঠেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি রাজস্ব বিভাগের সংস্কারের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে শুরু করেন। রাষ্ট্রের অধীনে খাদ্য ও জমি বৃদ্ধির জন্য তিনি সর্বপ্রথম বিভিন্ন শ্রেণীর অবলম্বন করার জন্য সচেষ্ট হয়ে ওঠেন। তিনি মুসলিম অভিজাত সম্প্রদায় ও ধার্মিক ব্যক্তিদের মিলক্, ইনাম, ইদ্দ্ররাৎ এবং ওয়াকফ জমি রাষ্ট্রের অধীনে পুনরায় আনয়নের চেষ্টা করেন। মুসলিম অভিজাত সম্প্রদায়র ও ধার্মিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পরই সুলতান অলাউদ্দিন খলজি খুত, চৌধুরী ও মুকদ্দম নামে পরিচিত হিন্দু অভিজাতবর্গের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। “খুত” শব্দটির প্রকৃত সংজ্ঞা সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও সম্ভবত পরবর্তীকালে যার জমিদার নামে পরিচিতি লাভ করেন আলাউদ্দিনের-রাজত্বকালে তাঁরা খুত নামে পরিচিত ছিলেন। “চৌধুরী” ছিলেন পরগণার প্রধান ব্যক্তি এবং “মুকদ্দম” ছিলেন গ্রামের প্রধান। রাষ্ট্রের ...

মৌখিক ঐতিহ্য (Oral Traditions)-র বিভিন্ন দিক আলোচনা করো।

মৌখিক ঐতিহ্যের বিভিন্ন দিক: সূচনা: ভাষা এবং গানের মধ্যে মৌখিক ঐতিহ্যগুলি রূপ নিয়েছে। লোককাহিনি, প্রবাদ, গাথাকাহিনি, গান এবং স্তুতি হিসেবে। মৌখিক ঐতিহ্যের সংজ্ঞা: মৌখিক ঐতিহ্য হল এমন এক সংস্কৃতিগত ধারণা যা এক প্রজন্ম থেকে অপর প্রজন্মে লোকমুখে প্রচলিত হয়। বিভিন্ন দিক থেকে মৌখিক ঐতিহ্যের সংজ্ঞা দেওয়া যায়। সাক্ষাৎকারের তথ্য সংগ্রহভিত্তিক: শ্রবণ, শ্রবণ-বীক্ষণ প্রভৃতি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে পূর্বনির্ধারিত বা পরিকল্পিত সাক্ষাৎকার গ্রহণের দ্বারা ব্যক্তি বিশেষ বা ঘটনাভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ বা চর্চাকে মৌখিক ঐতিহ্য (Oral Traditions) বলে। মৌখিক বার্তাভিত্তিক: জান ভ্যানসিনা (Jan Vansina) তাঁর 'Oral Tradition as History' গ্রন্থে লিখেছেন মৌখিক ঐতিহ্য হল “এক ধরনের মৌখিক বার্তা যা কথা, গান প্রভৃতির মাধ্যমে মুখে মুখে পূর্ববর্তী প্রজন্ম অতিক্রম করে পরবর্তী প্রজন্মে পৌঁছোয়। তথ্য বিশ্লেষণ ও চর্চাভিত্তিক: ওরাল হিস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (Oral History Association) -এর মতে “অতীতের ঘটনা সম্পর্কে মানুষের কণ্ঠস্বর, স্মৃতিকথা, বিভিন্ন সম্প্রদায় ও অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ ও চর্চা...

জাহান্দারী ও জাওবিৎ কী ?

জাহান্দারী ও জাওবিৎ:         দিল্লীর সুলতানরা এমন রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুললেন যা প্রাচীন পারস্যদেশীয় সাসানীয় নৃপতিদের থেকে স্বতন্ত্র ছিল না। সুলতানই ছিলেন এই শাসনব্যবস্থায় প্রজাদের নিকট প্রভু এবং মালিক, তাদের ধন-প্রাণ স্বাধীনতার একছত্র অধিপতি, আইন ও ন্যায়ধর্মের অদ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান স্বরূণ, নিজেরা অভ্রান্ত, দায়-দায়িত্বমুক্ত, দুর্নিবার– রাষ্ট্রে তিনিই ঈশ্বর।         কিন্তু সুলতানরা তত্ত্বগতভাবে সার্বভৌম এবং অসীম ক্ষমতার অধিকারী হলেও, ভারতীয় পরিবেশে বাস্তবক্ষেত্রে কতকগুলো সুনির্দিষ্ট ক্ষমতার সীমাবদ্ধতাকে তাঁরা মেনে নিয়েছিলেন। তাঁদের শাসনতান্ত্রিক কার্যাবলীকে প্রধানত তিনটি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ রাখতেন, যথা- ‘জাহানগিরি’, ‘জাহান্দারি’ ও ‘জওবিৎ’ অর্থাৎ রাজ্যজয়, নববিজিত রাজ্যগুলোতে অধিকার সুসংহত করা এবং সামরিক বাহিনীকে সন্তুষ্ট রাখা। ক্ষুদ্র, সুশাসিত ও সমৃদ্ধ রাজ্যগঠনের স্থান তাঁদের রাজনৈতিক চিন্তায় ছিল না। একের পর এক রাজ্যজয়ই ছিল তাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য। বলবনই একমাত্র রাষ্ট্রের সংহতিসাধনের কাজ প্রায় গণিতের সূত্রের মতো নির্ভুলভাবে তাঁর অভিপ্র...

ট্রুম্যান নীতি ও মার্শাল পরিকল্পনা – সংক্ষিপ্ত আলোচনা।

ট্রুম্যান নীতি ও মার্শাল পরিকল্পনা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব রাজনীতিতে একটি নতুন যুগের সূচনা হয়, যা শীতল যুদ্ধ নামে পরিচিত। এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি – ট্রুম্যান নীতি এবং মার্শাল পরিকল্পনা – বিশ্বব্যবস্থাকে গড়ে তোলে। এই নীতিগুলো কেবল কমিউনিজমের বিস্তার রোধ করেনি, বরং ইউরোপের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করে। ট্রুম্যান নীতি :  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বরাজনীতিতে এক নতুন দ্বন্দ্বের সূচনা হয় – পুঁজিবাদ বনাম সাম্যবাদ। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সোভিয়েত প্রভাব দ্রুত বিস্তার লাভ করছিল, যা পশ্চিমা শক্তিগুলির জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই প্রেক্ষাপটেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস. ট্রুম্যান ১৯৪৭ সালের ১২ মার্চ মার্কিন কংগ্রেসে এক ঐতিহাসিক নীতি ঘোষণা করেন, যা ইতিহাসে ‘ট্রুম্যান নীতি’ নামে পরিচিত। ঘোষণার পটভূমি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েত প্রভাব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের ফালটন শহরে বক্তৃতা দিয়ে এই পরিস্থিতিকে “আয়রন কার্টেন” নামে অভিহিত করেন এবং স...

সার্ক (SAARC) প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট আলোচনা করো । সার্ক-এর উদ্দেশ্য কী ছিল ?

‘সার্ক’ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট: [1] জিয়াউর রহমানের শ্রীলঙ্কা সফর : দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে নিয়ে কোনো আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ সর্বপ্রথম ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়। এ বিষয়ে সর্বপ্রথম উদ্যোগ নেন স্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান (১৯৩৬-১৯৮১ খ্রি.)। তিনি ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে শ্রীলঙ্কা সফরকালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার উদ্দেশ্যে একটি আঞ্চলিক সংস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন এবং নিজে সক্রিয় উদ্যোগ নেন। [2] সার্ক গঠনের সিদ্ধান্ত : দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে নিয়ে একটি সহযোগিতা সংস্থা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের বিদেশমন্ত্রীগণ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হন। পরবর্তী কয়েক বছরে কলম্বো (১৯৮১ খ্রি.), কাঠমান্ডু (১৯৮১ খ্রি.), ইসলামাবাদ (১৯৮২ খ্রি.), ঢাকা (১৯৮৩ খ্রি.) প্রভৃতি স্থানে একাধিক সম্মেলনে মিলিত হন। অবশেষে এসব দেশের বিদেশমন্ত্রীগণ ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের দিল্লি সম্মেলনে সমবেত হয়ে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (South Asian Association for Regional Co...