সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

তুমি কি মনে কর “সন্ত্রাসের শাসন” ন্যায়সঙ্গত ছিল ?

সন্ত্রাসের শাসন

তুমি কি মনে কর “সন্ত্রাসের শাসন” ন্যায়সঙ্গত ছিল ?


         জ্যাকোবিন একনায়কতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা ফ্রান্সে এক বিপ্লবী সরকারের জন্ম দিয়েছিল। জ্যাকোবিন একনায়কতন্ত্র ১৭৯৩-এর জুলাই থেকে ১৭৯৪-এর জুলাই পর্যন্ত এক বছর স্থায়ী ছিল। জ্যাকোবিন একনায়কতন্ত্রের এই স্বল্প স্থায়িত্বকালে ‘সন্ত্রাস’-এর বাড়বাড়ন্ত দেখা গিয়েছিল এবং বিপুল সংখ্যক মানুষ গিলোটিনে নিহত হয়েছিলেন। তাই জ্যাকোবিন একনায়কতন্ত্রের সময়কালকে ঐতিহাসিকরা ‘সন্ত্রাসের শাসন’ নামে অভিহিত করেছিল।

         বিপ্লবের শত্রুদের দমন করার জন্য জ্যাকোবিনরা নিঃসন্দেহে মারাত্মক সন্ত্রাস চালিয়েছেন। বহিঃশত্রুর আক্রমণ এবং প্রতিবিপ্লবী অভ্যুত্থান মোকাবিলা করার জন্য জাতীয় কনভেনশন তার বিরোধীদের সন্ত্রস্ত করতে চেয়েছিল। জ্যাকোবিন শাসকেরা আতঙ্কিত ছিলেন যে, বাইরের ও ভেতরের শত্রুরা যে কোনো সময় বিপ্লবী নীতিগুলি পরাস্ত করে ফ্রান্সে পুনরায় রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করতে পারে। এই আশঙ্কা থেকেই জ্যাকোবিনরা সন্ত্রাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সন্ত্রাসের সমর্থকরা তীব্র ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, বিপ্লবের শত্রুদের সন্ত্রস্ত করেই তাঁরা বিপ্লবকে তাঁরা বিপ্লবকে রক্ষা করতে সমর্থ হবেন।

          বিপুল সংখ্যক মানুষ সন্ত্রাসের শাসনের বলি হয়েছিলেন। ঐতিহাসিকদের দেওয়া তথ্য থেকে অনুমান করা হয় যে ১১০০০ থেক ১৮০০০ মানুষ গণনিরাপত্তা কমিটির নির্দেশে নিহত হন। প্রায় ৩ লক্ষ রাজতন্ত্রী, জিরন্ডিন ও বিপ্লবের অন্যান্য শত্রুরা কারারুদ্ধ হন। সন্ত্রাসের শাসনকালে যতজনকে হত্যা করা হয়েছিল তার ১৫ শতাংশ ছিল অভিজাত ও যাজক। এমনকি বহ্য কারিগর ও কৃষককে বিপ্লবী বিচারাল দোষী সাব্যস্ত করে গিলোটিনে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিল। গণনিরাপত্তা কমিটি দাঁতো ও তাঁর অনুগামীদের মতো বিপ্লবীদের প্রতিও নরম মনোভাব দেখায়নি। দাঁতো সমেত তাঁর বেশ কিছু অনুগামী বিপ্লবের একটা পর্যায়ে গিয়ে মনে করেছিলেন সন্ত্রাসের আর কোনো প্রয়োজন নেই। এই ধরনের চিন্তা ভাবনার জন্য তাঁদের ‘প্রশ্রয়দাতা’ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব এনে তাঁদের গিলোটিনে হত্যা করা হয়। সন্ত্রাসের শাসনের যুগে কেবলমাত্র প্রতিবিপ্লবী ও পূর্বতন ব্যবস্থার সমর্থকদেরই গিলোটিনে হত্যা করা হয়নি; বিপুল সংখ্যক নিরপরাধ নাগরিকরাও সন্ত্রাসের শিকার হয়েছিল। একথা অনস্বীকার্য যে, জ্যাকোবিন স্বৈরতন্ত্রের দিনগুলিতে সন্ত্রাসের ভালো রকম বাড়াবাড়ি লক্ষ করা গিয়েছিল।

          সন্ত্রাসের শাসনের গুরুত্বের গভীরে প্রবেশ করার আগে সন্ত্রাস সংগঠিত করার মূল নায়ক রোবসপিয়ারকে নিয়ে কথা বলে নেওয়া জরুরি। জর্জ রুদে সঠিক ভাবেই মন্তব্য করেছেন- রোবসপিয়ারকে মূল্যায়নের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকরা যথেষ্ট রুক্ষ ও কর্কশ। তাঁকে দেখানো হয়েছে একজন রক্তপিপাসু স্বৈরাচারী হিসাবে। লর্ড একটন রোবসপিয়ারকে বলেছেন- ‘ইতিহাসের সামনের সারিতে থাকা সবচেয়ে ঘৃণ্য চরিত্র’। বিশ শতকের গোড়ায় বসে ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাস লিখতে গিয়ে ঐতিহাসিক পিটার ম্যাথিয়েজ প্রথম রোবসপিয়ারের সমর্থনে এগিয়ে আসেন। ম্যাথিয়েজের মতে রোবসপিয়ার ছিলেন বিপ্লবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গণনায়ক ও একজন আপোসহীন গণতন্ত্রী। জর্জ রুদে মনে করেন-সংবিধান সভার (১৭৮৯-১৭৯১) যুগে তিনি নিজেকে একজন উদারপন্থী, গণতন্ত্রী ও মানুষের অধিকারের একনিষ্ঠ প্রবক্তা হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। একই সঙ্গে তিনি ছিলেন বাক স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উগ্র সমর্থক। কিন্তু যুদ্ধ ও বিপ্লবের অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে তিনি তাঁর উদারপন্থী বিশ্বাসগুলি পরিত্যাগ করতে বাধ্য হন। রুদে আরও লিখেছেন-বিদেশী শক্তিগুলির মদতপুষ্ট প্রতিবিপ্লবী অভ্যত্থানের পরিপ্রেক্ষিতে রোবসপিয়ার বিশ্বাস করতেন যে-সশস্ত্র সাঁ কুলোৎ সমর্থনপুষ্ট একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় সরকার গঠিত হলে অভিজাততন্ত্রের ধ্বংসাবশেষ ও ধনীদের দম্ভ প্রতিহত করা যাবে এবং সে ভাবেই বিপ্লবকে অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। রোবসপিয়ার ও তাঁর দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী সেন্ট জাস্ট ও কুথোঁ সন্ত্রাসের শাসনের সমর্থনে বলেছিলেন-একটি যথার্থ সাংবিধানিক সরকার গঠনের অবশ্যম্ভাবী পূর্বশর্ত ছিল এই বিপ্লবী সরকারের প্রতিষ্ঠা।

     ঐতিহাসিক অলার্ড বৈদেশিক ও গৃহযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সন্ত্রাসের উত্থান ব্যাখ্যা করেছেন। ম্যাথিয়েজ মনে করেন সন্ত্রাসের শাসন ছিল একটি অসম্পূর্ণ ও অসমাপ্ত সর্বহারার একনায়কতন্ত্র। অসম্পূর্ণ, কারণ আঠারো শতকের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদী দর্শনের প্রভাব সর্বহারার বিপ্লবের ক্ষেত্র পুরোপুরি প্রস্তুত করতে পারেনি। অসমাপ্ত, কারণ এই বিপ্লবের নেতৃত্বে ছিলেন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ। জ্যাকস গোদসো বলেছেন— সন্ত্রাসের শাসন ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অত্যাচারী। কোনো সামাজিক শ্রেণিকে মুছে ফেলার জন্য সন্ত্রাসের পন্থা অবলম্বন করা হয়নি। দেশকে বাঁচানোর জন্য এটি ছিল একটি রক্ষনাত্মক পদক্ষেপ। সন্ত্রাসের স্থপতিরা প্রজাতন্ত্রকে রক্ষা করার অজুহাতে একটি স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

          কিন্তু সম্পূর্ণ বিপরীত বক্তব্য রেখেছেন জর্জ লেফেভার। তাঁর মতে ফ্রান্সের সন্ত্রাসের শাসন জাতীয় যুদ্ধের আরও বেশি কিছু ছিল, এটি ছিল সুযোগপ্রাপ্ত প্রথম দুটি এস্টেটের বিরুদ্ধে তৃতীয় এস্টেটের অধিকার আদায়ের জেহাদ। এরিখ হবসবমের মতে, ফরাসি জাতি সন্ত্রাসের শাসনকে ‘জনতার প্রথম প্রজাতন্ত্র, পরবর্তী বিদ্রোহগুলির অনুপ্রেরণা’ হিসাবে দেখেছিলেন। সাম্প্রতিক কালের কিছু ঐতিহাসিক, বিশেষত ফুরে, প্যাট্রিস গুয়েনিফে, সাইম স্খামা প্রমুখ সন্ত্রাসের “মানবিকতা”-র ওপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন–১৭৮৯-এর মে মাসে বিপ্লবের সূচনা পর্ব থেকেই এই মানসিকতার অস্তিত্ব লক্ষ করা গিয়েছিল এবং ১৭৯৩- ৯৪ সালের ঘটনায় বিশেষ কিছু নতুনত্ব ছিল না। সাইমন স্থামা স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন– হিংসা ছিল বিপ্লবের যৌথ শক্তির উৎস।

        ১৭৯৩-৯৪-এর ঘটনাবলি নিয়ে ঐতিহাসিক বিতর্ক বিপ্লবের ইতিহাসকে অবশ্যই চিত্তাকর্ষক করে তুলেছে। অধিকাংশ ঐতিহাসিক, মার্কসবাদী বা উদারপন্থী, মনে করেন সন্ত্রাস ছিল পরিস্থিতির ফল, এবং প্রতিবিপ্লবকে হিংস্র করে তুলেছিল। অন্যদিকে অপর একদল ঐতিহাসিক মনে করেন– ১৭৯৩-৯৪-এর বিপ্লবী হিংসা ছিল প্রতিবিপ্লবী আশঙ্কার বিরুদ্ধে মাত্রাজ্ঞানহীন প্রতিক্রিয়া।



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব আলোচনা করো।

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব: ভূমিকা: আধুনিক বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির উপনিবেশ প্রসারের কৌশল ‘নয়া উপনিবেশবাদ’ ও ‘নয়া সাম্রাজ্যবাদ’ নামে পরিচিত। উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে জে. এ. হবসন এবং ভি. আই. লেনিন সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ সম্পর্কে তাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। হবসনের ব্যাখ্যা:  ব্রিটিশ অর্তনীতিবিদ জে. এ. হবসন তাঁর ‘সাম্রাজ্যবাদঃ একটি সমীক্ষা’ নামক গ্রন্থে সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর ব্যাখ্যার প্রধান বিষয়গুলি হল—  [1] অর্থনৈতিক মুনাফা লাভ: হবসনের মতে, সাম্রাজ্যবাদের পিছনে কোনো মহৎ, বা উচ্চতর লক্ষ্য নয়, অর্থনৈতিক মুনাফাই ছিল নয়া উপনিবেশকারীদের প্রধানতম উদ্দেশ্য। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় সমাজে ধনসম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্যের ফলে পুঁজিপতিদের হাতে যে ‘মূলধনের পাহাড়' সৃষ্টি হয়, সেই মূলধন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে তারা মুনাফা লাভের পরিকল্পনা করে। [2] পুঁজিপতিদের চাপ: হবসন মনে করেন যে, নতুন ক্ষেত্রে মূলধন বিনিয়োগ করা...

অবশিল্পায়ন কি ? ঔপনিবেশিক ভারতে অবশিল্পায়নের কারণ ও ফলাফল লেখো ।

অবশিল্পায়নঃ        অবশিল্পায়ন বলতে বোঝায় শিল্পায়নের বিপরীত বা শিল্পের অধোগতি। অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনধীন ভারতের চিরাচরিত ও ঐতিহ্যশালী হস্তশিল্প-কুটিরশিল্পের ধ্বংস সাধনই মূলত অবশিল্পায়ন। সব্যসাচী ভট্টাচার্যের মতে যদি দেশের মানুষ শিল্প-কর্ম ছেড়ে চাষ-আবাদে জীবিকা অর্জন শুরু করে অথবা জাতীয় কৃষিজ ও অংশ বাড়তে থাকে এবং শিল্পজ অংশ কমতে থাকে তাকে অব-অবশিল্পায় বলে। অবশিল্পায়নের ফলে ভারতের অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের অবশিল্পায়ন সম্পর্কে প্রথম পর্বে দাদাভাই নাও রোজি, রমেশ চন্দ্র দত্ত, মহাদেব গোবিন্দ রানাডে প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতা এবং পরবর্তীকালে রজনীপাম দত্ত জাতীয়তাবাদী নেতা এবং পরবর্তীকালে রজনী পামদত্ত, গ্যাডগিল, বি.ডি. বসু, নরেন্দ্রকৃয় সিংহ, বিপান চন্দ্র, অমিয় বাগচি প্রমুখ ঐতিহাসিক আলোচনা করেছেন। অব-শিল্পায়নের কারণঃ (১) কাঁচামালের রপ্তানি: ভারতীয় শিল্পের ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে ভারত থেকে ইংল্যান্ডে কাঁচামাল রপ্তানি শুরু হয়। ভারত ইংল্যান্ডের কলকারখানার খোলা বাজার ও কাঁচামাল সরবরাহের উৎসে পরিণত হয়। ভারত থেকে তুলো, নীল, কফি, চা, রেশম প্রভৃতি ইং...

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। এই যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা কী ছিল ?

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: সূচনা: ১৯৬০-এর দশকের শেষদিকে আওয়ামি লিগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ববঙ্গের স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছোয়। (1) মিথ্যা মামলায় জড়ানো: শেখ মুজিবুরসহ অন্যান্য আওয়ামি লিগ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে, তারা ভারতের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এই অভিযোগে পাক সরকার ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের প্রথমদিকে শেখ মুজিবুরসহ ৩৫ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তীব্র হয়ে ওঠে। প্রবল আন্দোলনের চাপে পাক সরকার মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। (2) সাধারণ নির্বাচন: পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাকিস্তানের সরকার- বিরোধী অসন্তোষ বাড়তে থাকলে পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন। এই নির্বাচনে মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন লাভ করে। পশ্চিম পাকিস্তানের ১৪০টি আসনের মধ্যে জুলফিকার আলি ভুট্টোর পিপলস পাটি ...

সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ  সূচনা: মিশর দেশের উত্তর-পূর্ব দিকে ইংরেজ ও ফরাসিদের তত্ত্বাবধানে খনন করা একটি খাল হল সুয়েজ খাল। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ওই খাল খনন শুরু হলেও ১৮৬৯ থেকে এতে বাণিজ্যিকভাবে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। ইউনিভার্সাল সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি নামে এক সংস্থাকে একটি চুক্তির ভিত্তিতে ৯৯ বছরের জন্য খালটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই মিশরের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের এক ঘোষণাবলে সুয়েজ খাল ও সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি—দুটিকেই জাতীয়করণ করে নেন। বিশ্বজুড়ে এই সমস্যাকেই সুয়েজ সংকট বোঝায়। সুয়েজ সংকটের কারণঃ (১) ব্রিটেন ও ফ্রান্সের দায়িত্ব: আরব-ইজরায়েল দ্বন্দ্ব চলাকালে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইজরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিলে আরব দেশগুলি ক্ষুব্ধ হয় এবং নাসেরের সঙ্গেও পাশ্চাত্য দেশগুলির মনোমালিন্য শুরু হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্রিটেন ও ফ্রান্সই সুয়েজ খালের ওপর সবথেকে বেশি নির্ভরশীল ছিল। মার্কিন বিদেশমন্ত্রী ডালেস যখন সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশগুলিকে নিয়ে এক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেন তখ...

জোটনিরপেক্ষ নীতি কী ? জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব লেখো।

জোটনিরপেক্ষ নীতিঃ     দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে একদিকে সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সাম্যবাদী বা সমাজতান্ত্রিক জোট, অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুঁজিবাদী বা ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট গঠিত হয়। এই দুই জোটের কোনোটিতেই যোগ না দিয়ে, স্বাধীনভাবে উভয় জোটের সঙ্গেই বন্ধুত্ব বা সমদূরত্ব বজায় রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বৈদেশিক সম্পর্ক পরিচালনার নীতি জোটনিরপেক্ষ নীতি নামে পরিচিত। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের কারণ বা উদ্দেশ্য ঃ    মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোট ও সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোটের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব থেকে উদ্ভূত ‘ঠান্ডা লড়াই'-এর আর্বত থেকে নিজেকে দূরে রেখে, জাতীয় স্বার্থ ও নবলব্ধ স্বাধীনতাকে রক্ষার জন্য ভারত জোটনিরপেক্ষ বিদেশনীতি গ্রহণ করে। ভারতে জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের কারণগুলি হল— [1] ভৌগোলিক সুরক্ষা : এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে এমন একটা জায়গায় ভারতের অবস্থান যা তাকে মধ্যপ্রাচ্য। ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী দেশে পরিণত করেছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, চিন, ব্রহ্মদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশি...