সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের বিশেষ উল্লেখ করে চোল শাসনব্যবস্থার একটি বিবরণ দাও।

স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের বিশেষ উল্লেখসহ চোল শাসনব্যবস্থার বিবরণ 


      আনুমানিক দ্বিতীয় খ্রিস্টাব্দে চোল শাসনের সূচনা হয় পেনার ও ভেলার নদীর মধ্যবর্তী এলাকায়। কিন্তু পল্লব, চের ও পাণ্ডদের আগ্রাসনে চোলরাজ্য বিনষ্ট হয়। নবম খ্রিস্টাব্দে চোল শক্তির পুনর্ভ্যুথান ঘটে।

     উন্নত প্রশাসন ব্যবস্থা ছিল চোলদের শাসনব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। চোলরাজ রাজরাজ এবং কুলতুঙ্গের মধ্যবর্তী সময়ে চোল প্রশাসন চূড়ান্ত রূপ নেয়। কেন্দ্রীয়, প্রাদেশিক ও স্থানীয় তিন ভাগে বিভক্ত চোল শাসনব্যবস্থার সর্বোচ্চ স্তরে ছিল রাজা।

       রাজার বংশানুক্রমিক ভাবে শাসন করতেন। চোল রাজারা আড়ম্বরপূর্ণ উপাধি পছন্দ করতেন। চোল মার্তন্ড, গঙ্গাইকোমণ্ড ইত্যাদি উপাধি গ্রহণ করতেন। চোল রাজারা মৌখিক আদেশ দ্বারা রাজকোষ চালাতেন। মন্ত্রী ও অমাত্যরা রাজাকে পরামর্শ দিতেন। রাজগুরু ছিলেন রাজার বিশ্বস্ত পরামর্শদাতা। রাজার প্রাসাদ ও রাজসভা ছিল আড়ম্বরপূর্ণ।

    সুগঠিত আমলাতন্ত্রের সাহায্যে চোল রাজারা রাজকার্য পরিচালনা করতেন। যোগ্যতা ছিল রাজকর্মচারীদের উন্নতির মাপকাঠি। কর্মচারীরা নগদ টাকায় বেতন পেতেন না, জমির থেকে তাদের প্রাপ্য দেওয়া হতো। কিন্তু জমির মালিকানা কর্মচারীদের দেওয়া হতো না। চোল শাসন ব্যবস্থা পরিচালনার জন্যে বিভিন্ন বর্গের কর্মচারী ছিল। সামরিক ও অসামরিক বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের ‘আদিগারিগণ’ বলা হতো। উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের নাম ছিল ‘পেরুন্দরম্’ এবং নিম্নপদস্থ কর্মচারীদের নাম ‘সিরুদনম্’। দক্ষিণ ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলির তুলনায় চোল প্রশাসন অনেক বেশি কেন্দ্রীভূত ছিল।

      চোল সাম্রাজ্যকে শাসনের সুবিধার জন্য কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হতো। প্রদেশগুলির নাম ছিল মণ্ডলম। স্বশাসিত গ্রাম ছিল শাসনব্যবস্থার সর্বনিম্ন স্তর। কয়েকটি গ্রাম নিয়ে গঠিত হত কুররম্ বা নাড়ু। বড় বড় গ্রামগুলির নাম ছিল তনিয়ুর, কয়েকটি কুররম-এর সমষ্টি হলো বলনাডু। বলনাডুর উপরে ছিল মণ্ডলম।

       চোল আমলে ভূমিরাজস্বই ছিল আয়ের প্রধান উৎস। এই কর নগদ অর্থে অথবা ফসলের মাধ্যমে দেওয়া যেত। ভূমি রাজস্বের হার ছিল সম্ভবত এক তৃতীয়াংশ। জমির উর্বরতার তারতম্যে করের পরিমাণ কম বা বেশি হতো। বন্যা প্রতিরোধ ও বাঁধ তৈরির জন্যে বাড়তি কর আদায় করা হতো। প্রতি গ্রামে কিছু এলাকা কারমুক্ত হিসাবে গণ্য হতো। যেমন-মন্দির, শ্মশান ইত্যাদি।

     চোল বিচারব্যবস্থায় গ্রামসভাগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। গ্রামসভার বিচারে সন্তুষ্ট না হলে প্রজারা নাডুর শাসকের কাছে আবেদন জানাত। রাজকীয় আদালতগুলিকে বলা হতো ধর্মাসন। রাজা নিজে রাজদ্রোহের বিচার করতেন। দেওয়ান ও ফৌজদারি মামলায় পার্থক্য ছিল না। জরিমানা, কারাদণ্ড ও মৃত্যুদণ্ডের দ্বারা অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হতো।

      চোল যুগে সামরিক বিভাগ বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছিল। রাজা ছিলেন সেনাবাহিনীর প্রধান। চোল যুগে স্থলবাহিনী ও নৌবাহিনী গড়ে উঠেছিল। পদাতিক, হস্তী এবং অশ্বারোহী বাহিনী সে যুগে শক্তিশালী ছিল। এ ছাড়া রাজরাজ ও রাজেন্দ্র চোল বিশাল নৌবাহিনী গঠন করেছিলেন।

   চোল যুগের শাসনব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা। চোল শাসনব্যবস্থায় গ্রামীণ প্রতিষ্ঠানগুলি যথেষ্ট স্বাধীনতা ভোগ করত। গ্রামের শাসন পরিচালনার দায়িত্ব ছিল সাধারণ সভার হাতে। প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ভোটদানের ভিত্তিতে এই সভা নির্বাচিত হত। এ ছাড়া বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক গোষ্ঠী গ্রামের শাসন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করত। গ্রামের সাধারণ সভা তিনটি ভাগে বিভক্ত ছিল যথা-উর, সভা এবং নগরম।

     স্থানীয় সমিতিগুলির মধ্যে ‘উর’ ছিল সবচেয়ে সহজ। গ্রামের সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ উরের সদস্য ছিল। বয়স্ক ব্যক্তিরা সভার কাজ নিয়ন্ত্রণ করত। গ্রামের প্রতিটি পাড়া থেকে প্রতিনিধি নিয়ে উর গঠিত হত। খাজনা আদায়, খাল খনন, গ্রামীণ বিবাদের মীমাংসা প্রভৃতি কাজ উরের মাধ্যমে হত।

     ব্রাহ্মণদের গ্রামসভার নাম ছিল ‘সভা’। সরকারের হস্তক্ষেপ ছাড়া সভা তার নির্দিষ্ট কাজ করত। গ্রামের সাধারণ সভার বিভিন্ন সমিতি উর এবং ব্রাহ্মণদের সভাকে নিয়ে গঠিত হত। যোগ্য এবং শাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তিদের এই সভার সদস্য করা হত। রাজস্ব নির্ধারণ ও আদায়ের ব্যবস্থা, জলসেচ, রাস্তাঘাটের নিরাপত্তা প্রভৃতির কাজ এই সভা করত।

      নগরম ছিল আধা শহরগুলির বণিকদের সভা যা বণিকদের গিল্ডের অনুরূপ ছিল। ওই নগরমগুলি উৎপন্ন শিল্পদ্রব্য ক্রয় করে তা অন্যত্র বণ্টন করত। আবার অনেক সময় সাধারণ মানুষের টাকা জমা রেখে বণিকদের সুদের বিনিময়ে ঋণ দিত।

        চোল সাম্রাজ্যের প্রদেশগুলি কোট্টাম বা  জেলায় বিভক্ত ছিল। আবার জেলাগুলি কতকগুলি নাড়ুতে বিভক্ত ছিল। আঞ্চলিক শাসন বিভাগ নাডুরও নিজস্ব সভা ছিল। ‘নাত্তার’ নামে পরিচিত এই সভাগুলি গঠিত হতো নাড়ুর অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন গ্রামের প্রতিনিধিদের নিয়ে। 

     চোল রাজাদের লেখগুলি থেকে গ্রামশাসনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত দুই কর্মচারী ‘মধ্যস্থ’ ও ‘করণত্তার’-এর উল্লেখ পাওয়া যায়। সম্ভবত মধ্যস্থ ছিল কেন্দ্রীয় প্রশাসনের প্রতিনিধি। সভার অধিবেশনে তারা পর্যবেক্ষকরূপে উপস্থিত থাকত করণত্তার-এর কাজ ছিল হিসাব পরীক্ষকের ও জমি সীমার উপর নজর রাখা। চোল শাসনব্যবস্থার প্রকৃতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিক বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করেছেন। একদিকে নীলকণ্ঠ শাস্ত্রী, ডি. এ. ঝা, চম্পকলক্ষ্মী যেমন চোল শাসনব্যবস্থার কেন্দ্রীকরণ প্রবণতার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তেমনই স্টেইন ও স্পেনসার চোল শাসনব্যবস্থাকে বর্ণনা করেছেন দুটি প্রশাসনিক কেন্দ্রের সমাহার বলে। চোল শাসনব্যবস্থার এক প্রান্তে ছিল কেন্দ্রীভূত প্রশাসন, অপর প্রান্তে ছিল জনপ্রতিনিধিমূলক আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা। চোলরাষ্ট্রকে খণ্ডিত রাষ্ট্র হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে। মূল এলাকায় ছিল প্রভাবশালী রাজা এবং প্রান্তিক এলাকায় ছিল স্বায়ত্ত শাসনব্যবস্থা। চম্পকলক্ষ্মী নতুন আলোকে চোল শাসনব্যবস্থাকে ব্যাখ্যা করে এই অভিমত প্রকাশ করেছেন যে স্বাধীন গ্রামসভাগুলি প্রকৃতপক্ষে কেন্দ্রীয় রাজকর্মচারীদের দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হতো।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব আলোচনা করো।

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব: ভূমিকা: আধুনিক বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির উপনিবেশ প্রসারের কৌশল ‘নয়া উপনিবেশবাদ’ ও ‘নয়া সাম্রাজ্যবাদ’ নামে পরিচিত। উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে জে. এ. হবসন এবং ভি. আই. লেনিন সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ সম্পর্কে তাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। হবসনের ব্যাখ্যা:  ব্রিটিশ অর্তনীতিবিদ জে. এ. হবসন তাঁর ‘সাম্রাজ্যবাদঃ একটি সমীক্ষা’ নামক গ্রন্থে সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর ব্যাখ্যার প্রধান বিষয়গুলি হল—  [1] অর্থনৈতিক মুনাফা লাভ: হবসনের মতে, সাম্রাজ্যবাদের পিছনে কোনো মহৎ, বা উচ্চতর লক্ষ্য নয়, অর্থনৈতিক মুনাফাই ছিল নয়া উপনিবেশকারীদের প্রধানতম উদ্দেশ্য। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় সমাজে ধনসম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্যের ফলে পুঁজিপতিদের হাতে যে ‘মূলধনের পাহাড়' সৃষ্টি হয়, সেই মূলধন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে তারা মুনাফা লাভের পরিকল্পনা করে। [2] পুঁজিপতিদের চাপ: হবসন মনে করেন যে, নতুন ক্ষেত্রে মূলধন বিনিয়োগ করা...

অবশিল্পায়ন কি ? ঔপনিবেশিক ভারতে অবশিল্পায়নের কারণ ও ফলাফল লেখো ।

অবশিল্পায়নঃ        অবশিল্পায়ন বলতে বোঝায় শিল্পায়নের বিপরীত বা শিল্পের অধোগতি। অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনধীন ভারতের চিরাচরিত ও ঐতিহ্যশালী হস্তশিল্প-কুটিরশিল্পের ধ্বংস সাধনই মূলত অবশিল্পায়ন। সব্যসাচী ভট্টাচার্যের মতে যদি দেশের মানুষ শিল্প-কর্ম ছেড়ে চাষ-আবাদে জীবিকা অর্জন শুরু করে অথবা জাতীয় কৃষিজ ও অংশ বাড়তে থাকে এবং শিল্পজ অংশ কমতে থাকে তাকে অব-অবশিল্পায় বলে। অবশিল্পায়নের ফলে ভারতের অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের অবশিল্পায়ন সম্পর্কে প্রথম পর্বে দাদাভাই নাও রোজি, রমেশ চন্দ্র দত্ত, মহাদেব গোবিন্দ রানাডে প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতা এবং পরবর্তীকালে রজনীপাম দত্ত জাতীয়তাবাদী নেতা এবং পরবর্তীকালে রজনী পামদত্ত, গ্যাডগিল, বি.ডি. বসু, নরেন্দ্রকৃয় সিংহ, বিপান চন্দ্র, অমিয় বাগচি প্রমুখ ঐতিহাসিক আলোচনা করেছেন। অব-শিল্পায়নের কারণঃ (১) কাঁচামালের রপ্তানি: ভারতীয় শিল্পের ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে ভারত থেকে ইংল্যান্ডে কাঁচামাল রপ্তানি শুরু হয়। ভারত ইংল্যান্ডের কলকারখানার খোলা বাজার ও কাঁচামাল সরবরাহের উৎসে পরিণত হয়। ভারত থেকে তুলো, নীল, কফি, চা, রেশম প্রভৃতি ইং...

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। এই যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা কী ছিল ?

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: সূচনা: ১৯৬০-এর দশকের শেষদিকে আওয়ামি লিগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ববঙ্গের স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছোয়। (1) মিথ্যা মামলায় জড়ানো: শেখ মুজিবুরসহ অন্যান্য আওয়ামি লিগ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে, তারা ভারতের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এই অভিযোগে পাক সরকার ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের প্রথমদিকে শেখ মুজিবুরসহ ৩৫ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তীব্র হয়ে ওঠে। প্রবল আন্দোলনের চাপে পাক সরকার মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। (2) সাধারণ নির্বাচন: পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাকিস্তানের সরকার- বিরোধী অসন্তোষ বাড়তে থাকলে পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন। এই নির্বাচনে মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন লাভ করে। পশ্চিম পাকিস্তানের ১৪০টি আসনের মধ্যে জুলফিকার আলি ভুট্টোর পিপলস পাটি ...

সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ  সূচনা: মিশর দেশের উত্তর-পূর্ব দিকে ইংরেজ ও ফরাসিদের তত্ত্বাবধানে খনন করা একটি খাল হল সুয়েজ খাল। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ওই খাল খনন শুরু হলেও ১৮৬৯ থেকে এতে বাণিজ্যিকভাবে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। ইউনিভার্সাল সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি নামে এক সংস্থাকে একটি চুক্তির ভিত্তিতে ৯৯ বছরের জন্য খালটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই মিশরের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের এক ঘোষণাবলে সুয়েজ খাল ও সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি—দুটিকেই জাতীয়করণ করে নেন। বিশ্বজুড়ে এই সমস্যাকেই সুয়েজ সংকট বোঝায়। সুয়েজ সংকটের কারণঃ (১) ব্রিটেন ও ফ্রান্সের দায়িত্ব: আরব-ইজরায়েল দ্বন্দ্ব চলাকালে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইজরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিলে আরব দেশগুলি ক্ষুব্ধ হয় এবং নাসেরের সঙ্গেও পাশ্চাত্য দেশগুলির মনোমালিন্য শুরু হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্রিটেন ও ফ্রান্সই সুয়েজ খালের ওপর সবথেকে বেশি নির্ভরশীল ছিল। মার্কিন বিদেশমন্ত্রী ডালেস যখন সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশগুলিকে নিয়ে এক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেন তখ...

জোটনিরপেক্ষ নীতি কী ? জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব লেখো।

জোটনিরপেক্ষ নীতিঃ     দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে একদিকে সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সাম্যবাদী বা সমাজতান্ত্রিক জোট, অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুঁজিবাদী বা ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট গঠিত হয়। এই দুই জোটের কোনোটিতেই যোগ না দিয়ে, স্বাধীনভাবে উভয় জোটের সঙ্গেই বন্ধুত্ব বা সমদূরত্ব বজায় রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বৈদেশিক সম্পর্ক পরিচালনার নীতি জোটনিরপেক্ষ নীতি নামে পরিচিত। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের কারণ বা উদ্দেশ্য ঃ    মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোট ও সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোটের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব থেকে উদ্ভূত ‘ঠান্ডা লড়াই'-এর আর্বত থেকে নিজেকে দূরে রেখে, জাতীয় স্বার্থ ও নবলব্ধ স্বাধীনতাকে রক্ষার জন্য ভারত জোটনিরপেক্ষ বিদেশনীতি গ্রহণ করে। ভারতে জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের কারণগুলি হল— [1] ভৌগোলিক সুরক্ষা : এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে এমন একটা জায়গায় ভারতের অবস্থান যা তাকে মধ্যপ্রাচ্য। ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী দেশে পরিণত করেছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, চিন, ব্রহ্মদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশি...