সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

১৭৮৯ খ্রীষ্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের অবদান মূল্যায়ন কর।

১৭৮৯ খ্রীষ্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের অবদান

১৭৮৯ খ্রীষ্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের অবদান মূল্যায়ন কর।

       ফরাসি বিপ্লবের অব্যবহিত পূর্বে চিন্তাশীল ফরাসি জনগণের মনে এক বৈপ্লবিক তরঙ্গের সৃষ্টি হয়েছিল। যুক্তিবাদের ভিত্তিতে ফ্রান্সের সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতি প্রভৃতিকে বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন দার্শনিক প্রমাণ করেন যে প্রচলিত ভাবধারাগুলি ও রাষ্ট্রশাসনব্যবস্থার সব কিছুই যুক্তিহীন ও অবৈজ্ঞানিক। এই সব দার্শনিক সমাজ, রাষ্ট্র ও চার্চের অন্তর্গত অসঙ্গতি ও দোষত্রুটিগুলিকে জনসমক্ষে উত্থাপন করেন, তাদের সংশোধন অথবা অপসারণ দাবী করেন। তাঁরা যুক্তিহীন প্রতিষ্ঠান ও পদ্ধতিগুলিকে অপ্রয়োজনীয় বলে পরিত্যাগ করার বক্তব্যও রাখেন। দার্শনিকদের যুক্তিপূর্ণ বক্তব্যে জনসাধারণ গভীরভাবে আকৃষ্ট হন, তাদের মনোজগতে বৈষম্যহীন, যুক্তিপূর্ণ নতুন সমাজ গঠনের প্রেরণা জন্মে।

       এই দার্শনিকদের মধ্যে প্রধান ছিলেন ভলতেয়ার, মন্তেস্কু, রুশো, দেনিস দিদেরো, ডি-এলেমবার্ট প্রমুখ। এঁরা এঁদের শাণিত লেখনীর দ্বারা ফ্রান্সের পুরাতন সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতির বুনিয়াদকে অসম ও অন্যায় বলে প্রতিপন্ন করেন। এঁদের রচনার মধ্য দিয়ে তৎকালীন সমস্যাগুলির প্রকৃতি বিশ্লেষণ ও অন্যায় প্রথাগুলির প্রতিকারের বিভিন্ন প্রয়োজন সম্পর্কে চেতনা জনগণের মনে সঞ্চার করেন। এই বৈপ্লবিক স্পৃহাতে উদ্দীপিত ফরাসী জনগণ ক্রমশঃ রোমান ক্যাথলিক চার্চ, স্বৈরাচারী রাজতন্ত্র ও সুবিধাভোগী অভিজাততন্ত্রের বিনাশ সাধনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে ওঠেন। এই জনজাতির মূল কথা ছিল তদানীন্তন প্রথা ও পদ্ধতিগুলিকে যুক্তির ও বুদ্ধির কষ্টিপাথরে যাচাই করে নেওয়া। এক কথায়, দার্শনিকবৃন্দ এক সুন্দর, শোষণহীন, বৈষম্যহীন রাষ্ট্রীয় জীবন ও সমাজদর্শন প্রচার করেন। সমাজজীবনের চরম অসাম্য ও দুর্নীতিতে ক্লিষ্ট সুশিক্ষিত, সংস্কৃতিবান ও প্রতিভাবান মধ্যবিত্ত শ্রেণী এঁদের-চিন্তাধারায় উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন। 

       দার্শনিকদের মধ্যে সর্বপ্রথম উল্লেখযোগ্য ছিলেন মন্তেস্কু। তিনি ঘোষণা করেন ফরাসী রাজার দৈব-অধিকার-দর্শন ভ্রান্ত। মন্তেস্কু নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের সমর্থক ছিলেন। তাছাড়া তিনি রাজার স্বৈরাচারের অবসানকল্পে রাষ্ট্রের শাসন বিভাগ, আইন বিভাগ ও বিচার বিভাগগুলিকে পৃথক করার পক্ষে মতপ্রকাশ করেন। তিনি বলেন, শাসন, আইন ও বিচার বিভাগ ফরাসী রাজের হাতে একত্রিত ছিল বলেই স্বৈরাচার সম্ভব হয়েছিল। তিনি সমাজব্যবস্থা, অভিজাততন্ত্র ও স্বৈরাচারী রাজতন্ত্রের বিভিন্ন দুর্বলতা ও ত্রুটির কঠোর সমালোচনা করে সংশ্লিষ্ট বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়কে বিপ্লবমুখী করেছেন।

        ভলতেয়ার ছিলেন মানুষের চিন্তা, কর্ম ও বিবেক-স্বাধীনতার প্রবক্তা। তিনি ব্যঙ্গ রচনার মধ্যে দিয়ে ক্যাথলিক চার্চের কুসংস্কার, অন্ধ বিশ্বাস ও অত্যাচারের মুখোশ খুলে দেন। তিনি যুক্তি ও বিচার-বুদ্ধি ছাড়া কোনও কিছুকে গ্রহণ করার ঘোর বিরোধী ছিলেন। তাঁর কাব্য, নাটক ও প্রবন্ধগুলি দ্বারা তিনি দুর্নীতিগ্রস্ত ও সুবিধাভোগী যাজক শ্রেণীকে সমালোচনায় জর্জতির করেন। সংগঠিত যাজক সম্প্রদায়কে তিনি সমাজের পরম শত্রু বলে বর্ণনা করেন। সমসাময়িক সমাজে তিনি বিশেষ প্রভাব বিস্তার করেন।

         তবে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ও জনপ্রিয় দার্শনিক ছিলেন রুশো। তিনি সরাসরি রাজনীতি বিষয়ে মত প্রকাশ করেন। তিনি সর্বপ্রথম সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতার বাণী প্রচার করেন। তিনি জনসাধারণের সার্বভৌম ক্ষমতায় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি বলেন জনগণই শাসককে চুক্তির মাধ্যমে শাসনক্ষমতা দান করেছে। সুতরাং শাসনক্ষেত্রে ব্যর্থ শাসককে জনগণ অপসারিত করতে পারে। গণতন্ত্রে বিশ্বাসী রুশো তীর ভাষায় প্রচলিত রাষ্ট্র, সমাজ ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাগুলিকে জনস্বার্থ- বিরোধী হিসাবে গণ্য করেন। রুশোর সামাজিক চুক্তির মতবাদ বিপ্লবীদের মূল মন্ত্রে পরিণত হয়। তাঁর রচনা সারা দেশে প্রচণ্ড আলোড়নের সৃষ্টি করে। এর ফলে জনগণের ভাবজগতে দারুণ বৈপ্লবিক তৎপরতা দেখা দেয়। তিনিই বিখ্যাত গ্রন্থ ‘সোসাল কন্ট্যাক্ট’-এ প্রথম বলেন, ‘মানুষ স্বাধীন হয়েই জন্মায়’।

       এঁরা তিনজন ছাড়া ছিলেন দেনিস দিদেরো ও ডি-এলেমবার্ট প্রমুখ দার্শনিকেরা। তাঁরা রাষ্ট্র ও চার্চের দুর্নীতির ও অন্যায়ের কঠোর সমালোচনা করেন। দিদেরোর পরিচালনায় যুক্তিবাদী, প্রগতিশীল একদল লেখক ‘বিশ্বকোষ’ নামে এক গ্রন্থমালা রচনা করেন। এর বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গী প্রগতিশীল মতবাদের স্রষ্টা হিসাবে কাজ করে প্রাচীন যুক্তিহীন প্রথা ও পদ্ধতিগুলিকে ধ্বংস করতে এই ‘বিশ্বকোষ’ খুবই সহায়ক হয়। দিদেরো মানুষের চিন্তাজগতে নবদিগন্তের পথ দেখান।

        ফিজিওক্র্যাট নামে পরিচিত একদল অর্থনীতিবিদ ফ্রান্সের প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কঠোর সমালোচনা করেন। তাঁরা অবাধ বাণিজ্যের প্রবর্তন ও মার্কেন্টাইল মতবাদের অবসানের দ্বারা ফরাসী অর্থনীতিকে পুষ্ট করার পক্ষপাতী ছিলেন।

        ফরাসী বিপ্লবের ঠিক পূর্বক্ষণে এক পরিবর্তনকামী বৈপ্লবিক পরিস্থিতির উদ্ভবের জন্য এই সকল দার্শনিকবৃন্দ দায়ী ছিলেন। তাঁদের প্রেরণাতে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সম্প্রদায় নিঃসন্দেহে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। দার্শনিকদের সমালোচনার ফলে নিপীড়িত ফরাসী জনগণের মন থেকে শাসক-ভীতি দূরীভূত হয়; প্রচলিত প্রথা ও প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি তাদের শ্রদ্ধা বিনষ্ট হয়। পরিবর্তে নতুন শোষণ-মুক্ত ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের প্রেরণা জন্মায়।

       ফরাসী বিপ্লবের ক্ষেত্রে দার্শনিকদের অবদান সম্বন্ধে ঐতিহাসিকগণ অবশ্য একমত হতে পারেন নি। অনেকের মতে দার্শনিকরাই ফরাসী জনগণকে প্রতিবাদ-মুখর করে তুলেছিল। আবার অন্যেরা বলেন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষোভই ছিল বিপ্লবের কারণ। যর্স স্টিফেনস বলেন বিপ্লবের কারণগুলি ছিল প্রধানতঃ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক; দার্শনিক বা সামাজিক নয়। টমসন বলেন দার্শনিকদের সঙ্গে বিপ্লবের কোনও প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল না। অবশ্য দার্শনিকদের সমালোচনার প্রভাব তিনি অস্বীকার করেন নি। তবে নতুন দৃষ্টিভঙ্গীসম্পন্ন ঐতিহাসিক রুদে বলেন যে, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শোষণ ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভকে সমন্বিত করার জন্যে যে ভাবাদর্শের প্রয়োজন ছিল তা দার্শনিকেরা প্রস্তুত করেছিলেন। দার্শনিকদের রচিত সাহিত্য, কাব্য প্রভৃতির মধ্যে দিয়েই পরিবর্তনকামী মানুষের আশা-আকাঙক্ষা ও সংস্কারের অস্পষ্ট চেতনা প্রতিফলিত হয়েছিল।

        আসলে তৎকালীন রাজনৈতিক ও আর্থিক অবস্থা ফরাসী বিপ্লবের পটভূমিটি রচনা করেছিল। দার্শনিকরা সার্বিক সংস্কার চেয়ে মানুষের আশা-আকাঙক্ষাকে বিপ্লবমুখী করে দিয়েছিলেন। তাঁরা পুরাতন সমাজ-ব্যবস্থার ভিত্তিকে দুর্বল করে দিয়েছিলেন, আবার অন্যদিকে সাধারণ মানুষকে শক্তি ও ভরসা যোগান দিয়েছিলেন বৈষম্যহীন নতুন সমাজকে প্রস্তুত করতে। অন্যভাবে বলা চলে যে, ফরাসী বিপ্লবে দার্শনিকদের অবস্থান ছিল “ক্ষীণ ও পরোক্ষ”।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব আলোচনা করো।

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব: ভূমিকা: আধুনিক বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির উপনিবেশ প্রসারের কৌশল ‘নয়া উপনিবেশবাদ’ ও ‘নয়া সাম্রাজ্যবাদ’ নামে পরিচিত। উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে জে. এ. হবসন এবং ভি. আই. লেনিন সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ সম্পর্কে তাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। হবসনের ব্যাখ্যা:  ব্রিটিশ অর্তনীতিবিদ জে. এ. হবসন তাঁর ‘সাম্রাজ্যবাদঃ একটি সমীক্ষা’ নামক গ্রন্থে সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর ব্যাখ্যার প্রধান বিষয়গুলি হল—  [1] অর্থনৈতিক মুনাফা লাভ: হবসনের মতে, সাম্রাজ্যবাদের পিছনে কোনো মহৎ, বা উচ্চতর লক্ষ্য নয়, অর্থনৈতিক মুনাফাই ছিল নয়া উপনিবেশকারীদের প্রধানতম উদ্দেশ্য। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় সমাজে ধনসম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্যের ফলে পুঁজিপতিদের হাতে যে ‘মূলধনের পাহাড়' সৃষ্টি হয়, সেই মূলধন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে তারা মুনাফা লাভের পরিকল্পনা করে। [2] পুঁজিপতিদের চাপ: হবসন মনে করেন যে, নতুন ক্ষেত্রে মূলধন বিনিয়োগ করা...

অবশিল্পায়ন কি ? ঔপনিবেশিক ভারতে অবশিল্পায়নের কারণ ও ফলাফল লেখো ।

অবশিল্পায়নঃ        অবশিল্পায়ন বলতে বোঝায় শিল্পায়নের বিপরীত বা শিল্পের অধোগতি। অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনধীন ভারতের চিরাচরিত ও ঐতিহ্যশালী হস্তশিল্প-কুটিরশিল্পের ধ্বংস সাধনই মূলত অবশিল্পায়ন। সব্যসাচী ভট্টাচার্যের মতে যদি দেশের মানুষ শিল্প-কর্ম ছেড়ে চাষ-আবাদে জীবিকা অর্জন শুরু করে অথবা জাতীয় কৃষিজ ও অংশ বাড়তে থাকে এবং শিল্পজ অংশ কমতে থাকে তাকে অব-অবশিল্পায় বলে। অবশিল্পায়নের ফলে ভারতের অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের অবশিল্পায়ন সম্পর্কে প্রথম পর্বে দাদাভাই নাও রোজি, রমেশ চন্দ্র দত্ত, মহাদেব গোবিন্দ রানাডে প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতা এবং পরবর্তীকালে রজনীপাম দত্ত জাতীয়তাবাদী নেতা এবং পরবর্তীকালে রজনী পামদত্ত, গ্যাডগিল, বি.ডি. বসু, নরেন্দ্রকৃয় সিংহ, বিপান চন্দ্র, অমিয় বাগচি প্রমুখ ঐতিহাসিক আলোচনা করেছেন। অব-শিল্পায়নের কারণঃ (১) কাঁচামালের রপ্তানি: ভারতীয় শিল্পের ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে ভারত থেকে ইংল্যান্ডে কাঁচামাল রপ্তানি শুরু হয়। ভারত ইংল্যান্ডের কলকারখানার খোলা বাজার ও কাঁচামাল সরবরাহের উৎসে পরিণত হয়। ভারত থেকে তুলো, নীল, কফি, চা, রেশম প্রভৃতি ইং...

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। এই যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা কী ছিল ?

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: সূচনা: ১৯৬০-এর দশকের শেষদিকে আওয়ামি লিগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ববঙ্গের স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছোয়। (1) মিথ্যা মামলায় জড়ানো: শেখ মুজিবুরসহ অন্যান্য আওয়ামি লিগ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে, তারা ভারতের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এই অভিযোগে পাক সরকার ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের প্রথমদিকে শেখ মুজিবুরসহ ৩৫ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তীব্র হয়ে ওঠে। প্রবল আন্দোলনের চাপে পাক সরকার মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। (2) সাধারণ নির্বাচন: পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাকিস্তানের সরকার- বিরোধী অসন্তোষ বাড়তে থাকলে পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন। এই নির্বাচনে মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন লাভ করে। পশ্চিম পাকিস্তানের ১৪০টি আসনের মধ্যে জুলফিকার আলি ভুট্টোর পিপলস পাটি ...

সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ  সূচনা: মিশর দেশের উত্তর-পূর্ব দিকে ইংরেজ ও ফরাসিদের তত্ত্বাবধানে খনন করা একটি খাল হল সুয়েজ খাল। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ওই খাল খনন শুরু হলেও ১৮৬৯ থেকে এতে বাণিজ্যিকভাবে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। ইউনিভার্সাল সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি নামে এক সংস্থাকে একটি চুক্তির ভিত্তিতে ৯৯ বছরের জন্য খালটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই মিশরের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের এক ঘোষণাবলে সুয়েজ খাল ও সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি—দুটিকেই জাতীয়করণ করে নেন। বিশ্বজুড়ে এই সমস্যাকেই সুয়েজ সংকট বোঝায়। সুয়েজ সংকটের কারণঃ (১) ব্রিটেন ও ফ্রান্সের দায়িত্ব: আরব-ইজরায়েল দ্বন্দ্ব চলাকালে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইজরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিলে আরব দেশগুলি ক্ষুব্ধ হয় এবং নাসেরের সঙ্গেও পাশ্চাত্য দেশগুলির মনোমালিন্য শুরু হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্রিটেন ও ফ্রান্সই সুয়েজ খালের ওপর সবথেকে বেশি নির্ভরশীল ছিল। মার্কিন বিদেশমন্ত্রী ডালেস যখন সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশগুলিকে নিয়ে এক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেন তখ...

জোটনিরপেক্ষ নীতি কী ? জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব লেখো।

জোটনিরপেক্ষ নীতিঃ     দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে একদিকে সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সাম্যবাদী বা সমাজতান্ত্রিক জোট, অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুঁজিবাদী বা ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট গঠিত হয়। এই দুই জোটের কোনোটিতেই যোগ না দিয়ে, স্বাধীনভাবে উভয় জোটের সঙ্গেই বন্ধুত্ব বা সমদূরত্ব বজায় রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বৈদেশিক সম্পর্ক পরিচালনার নীতি জোটনিরপেক্ষ নীতি নামে পরিচিত। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের কারণ বা উদ্দেশ্য ঃ    মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোট ও সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোটের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব থেকে উদ্ভূত ‘ঠান্ডা লড়াই'-এর আর্বত থেকে নিজেকে দূরে রেখে, জাতীয় স্বার্থ ও নবলব্ধ স্বাধীনতাকে রক্ষার জন্য ভারত জোটনিরপেক্ষ বিদেশনীতি গ্রহণ করে। ভারতে জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের কারণগুলি হল— [1] ভৌগোলিক সুরক্ষা : এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে এমন একটা জায়গায় ভারতের অবস্থান যা তাকে মধ্যপ্রাচ্য। ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী দেশে পরিণত করেছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, চিন, ব্রহ্মদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশি...