সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

খ্রিষ্টান ধর্ম উত্থানের কারণ আলোচনা করো।

অথবা, খ্রিষ্টান ধর্মের উত্থানে রোমান সাম্রাজ্যের ভুমিকা লেখো।

খ্রিষ্টান ধর্ম উত্থানের কারণ    

খ্রিষ্টান ধর্ম উত্থানের কারণ আলোচনা করো।

      মিশরীয় আইসিস ও স্যারোপিস ধর্মবিশ্বাস, পারসিক মিত্র ধর্মবিশ্বাস, ইহুদি ধর্মবিশ্বাস এবং খ্রীষ্টান ধর্মবিশ্বাস-এই চারটি ধর্মবিশ্বাস কে কেন্দ্র করে রোমান সভ্যতার ধর্মীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলেছিল। এদের মধ্যে রোমান খ্রীষ্টানরা ক্রমশ ধর্মীয় সংগঠন গড়ে তুলে অন্যান্য ধর্মগুলি অপেক্ষা দ্রুত বিস্তার লাভ করেছিল। খ্রীষ্টীয় দ্বিতীয় শতকে বিশেষ করে সম্রাট এম. অরেলিয়াসের শাসনকালে (১৬১-১৮০ খ্রীষ্টাব্দ) খ্রীস্টানরা সমাজের নীচুতলা থেকে তাদের চার্চ সংগঠনকে বিভিন্ন পর্যায়ে বিভক্ত করে কেন্দ্রীয় সংগঠন গড়ে তোলে এবং সমগ্র খ্রীস্টানদের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তোলে। খ্রীস্টীয় তৃতীয় শতকে বিভিন্ন শহরের বিশপদের নিয়ে প্রাদেশিক কাউন্সিল গঠন করা হয়। নিয়মিত ধর্মসভা আহ্বান, অর্থ সংগ্রহ ও চার্চ বিষয়ক নিয়মকানুন প্রবর্তনের কথা বলা হয়। সম্রাট কনস্টান্টাইনের রাজত্বকালে একাধিক প্রদেশের বিশপদের নিয়ে বৃহত্তর ধর্ম সম্মেলনের ব্যবস্থা করা হয়।২১৪ খ্রীস্টাব্দে অরিলেটে, ৩২৫ খ্রীস্টাব্দে নিকিয়াতে ধর্ম সম্মেলন হয়। যদিও বিশ্বজনীন চার্চ গঠন ৩০০ খ্রীস্টাব্দ নাগাদ সম্পূর্ণ হয়। তবে রোমে খ্রীস্টান চার্চের একাধিপত্য প্রতিষ্টিত হয় ৪৫১ খ্রীস্টাব্দে যখন চালসিডন ধর্ম সম্মেলনে পোপ প্রথম লিওর সমস্ত চার্চের প্রধান পোপ এই দাবি প্রতিষ্টিত হয়।

        তবে খ্রীষ্টধর্মের বিস্তার কিন্তু মসৃন ভাবে সম্পন্ন হয়েছিল একথা বলা যায় না। রোমান ও গ্রীকরা ছিল বহুদেবতায় বিশ্বাসী, তাই খ্রীষ্টধর্মের একেশ্বরবাদের বিরুদ্ধে তারা আক্রমনাত্মক ভূমিকা গ্রহণ করেছিল। খ্রীস্টীয় প্রথম দুটি শতকে রোমান সাম্রাজ্যে ইহুদি, প্যাগান ও খ্রীষ্টানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল তীব্র, প্রচুর রক্তপাত ও হয়েছিল। ঐতিহাসিক গ্লোভার তার লেখা-“The conflict of Religious in the Early Roman Empire” গ্রন্থে লিখেছেন খ্রীস্টীয় প্রথম শতাব্দী গুলিতে মাত্র কয়েকজন সম্রাট খ্রীষ্টানদের পক্ষে ছিল। খ্রীষ্টানরা সম্রাটদের পূজা অস্বীকার করলে তাদের শাস্তি দেওয়া হয়। সম্রাট নিরো রোমের অগ্নিকাণ্ডের জন্য খ্রীস্টানদের দায়ী করে অনেক খ্রীস্টানকে চরম শান্তি দেন। তবে সম্রাট কনস্টান্টাইনের সময়ে আদিম রোমান ধর্মে বিশ্বাসী এবং খ্রীস্টানদের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় ছিল।

     ১১০ খ্রীস্টাব্দে সম্রাট ট্রাজান নির্দেশ দেন খ্রীস্টানদের সম্রাটের উদ্দেশ্যে পূজা ও বলিদান করে সম্রাটের প্রতি আনুগত্য প্রমান করতে হবে। নাহলে দেশদ্রোহীতার অপরাধে শাস্তি পেতে হবে। এই আইন অনেক খ্রীস্টানের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। তৃতীয় শতকে আফ্রিকা ও মিশরে খ্রীস্টানদের উপরে সম্রাট সেপ্টিমিয়াস সেভেরাস ও আলেকজান্ডার সেতেরাস অত্যাচার চালিয়েছিলেন। ২৫০ খ্রীস্টাব্দে সম্রাট ডেসিয়াস আদেশ দেন যে খ্রীস্টানরা যেন তাদের বিশ্বাস ছেড়ে প্যাগান ধর্ম পদ্ধতি মেনে চলে। ২৫৭ খ্রী: ভ্যালেরিয়ানাস খ্রীষ্টান ক্লার্জিদের রাষ্ট্রীয় আদি উৎসবগুলিতে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। এই সকল তীব্র প্রতিকূলতার মধ্যে ও খ্রীষ্টান ধর্ম তার বিস্তারের গতি অব্যাহত রেখেছিল।

     খ্রীস্টীয় সাহিত্যের বিকাশ এই ধর্মের বিস্তারেও বিশেষ সাহায্য করেছিল। ১০০ খ্রীস্টাব্দ নাগাদ যিশুর বাণী ও চার্চের নিয়ম কানুন প্রথম লিপিবদ্ধ হল। New Testament রচিত হল। সমগ্র পশ্চিম জগৎ তা লাতিন ভাষায় লাভ করে। এছাড়া প্লেটোর দর্শন, ভোগবাদী দর্শন, নির্বিকারবাদী দর্শন ইত্যাদির আলোকে খ্রীষ্টান ধর্ম ও চার্চের রীতি নীতিকে নতুন সাজে সাজানো হয়। আত্মপক্ষ সমর্থনকারী দুঃখপূর্ণ লেখাগুলি সাধারণ মানুষকে বিশেষভাবে স্পর্শ করেছিল। তাছাড়া খ্রীষ্টান ধর্মের ভ্রাতৃত্ববোধ, ক্ষমাগুন, স্বর্গ-নরক সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলকে সম দৃষ্টিতে দেখা ইত্যাদি ক্রমশ মানুষকে মুগ্ধ করেছিল যা প্যাগান বা ইহুদি ধর্ম পারেনি। ২৬০ খ্রীস্টাব্দ নাগাদ খ্রীষ্টানরা স্বাধীনভাবে বসবাস করার সুযোগ পায় এবং সম্রাটের পূজা করতে আর তারা বাদ্ধ থাকল না। তারা সৈন্যবাহিনীতে এবং সরকারি পদে চাকুরি করার অনুমতি পায়। তথাপি সম্রাট ডায়োক্লিসিয়ানের সময় তাদের অনেকের বেসামরিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, অনেককে শাস্তি দেওয়া হয় এবং অনেককে দাসে পরিণত করা হয়।

       সম্রাট কনস্টান্টাইনের সময়ে খ্রীষ্টানদের নিরাপত্তার বিষয়টি সুনিশ্চিত হয়। তিনি ৩১২ খ্রীস্টাব্দে খ্রীষ্টধর্ম গ্রহণ করলে খ্রীষ্টানরা এক নতুন জগৎ লাভ করে। নিজ ধর্ম পালনের অধিকার লাভ করে। সম্রাট খ্রীষ্টানদের পরামর্শ দাতা নিয়োগ করেন, খ্রীস্টান রীতি অনুসারে রবিবার ছুটির দিন ঘোষণা করেন এবং তিনিই প্রথম রোমান সম্রাট হিসাবে খ্রীষ্টান ধর্মকে রাষ্ট্রীয় ধর্ম রূপে ঘোষণা করেন। তিনি রোমান সাম্রাজ্যের নতুন রাজধানী কনস্টান্টিনোপল (বাইজানটিয়াম)-এ প্যাগান মন্দির নির্মাণ নিষিদ্ধ করেন, খ্রীষ্টান চার্চকে বিশেষ সুযোগ সুবিধা প্রদান করেন। তিনি নিকিয়াতে ধর্ম সম্মেলন আহ্বান করে শান্তির দূতের ভূমিকা গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে সম্রাট জুলিয়ান প্যাগান ধর্ম ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেও সফল হননি।

      তবে পশ্চিম ইউরোপে খ্রীষ্টান ধর্ম তখনও বিশেষ বিস্তার হয়নি। তবে কনস্টান্টাইনের সময় থেকে খ্রীষ্টান ধর্মীয় পুরোহিত শ্রেণী পশ্চিমে ব্যাপকভাবে খ্রীষ্টধর্ম প্রচারে ও চার্চ স্থাপনে লিপ্ত হন। এই সময়েই সেন্ট অগাস্টাইনের লেখা De Civitate Del-গ্রন্থে খ্রীষ্টানদের সহজ-সরল নিয়মকানুনগুলি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। ফলে পশ্চিম ইউরোপেও দ্রুত খ্রীষ্টান ধর্মের মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। তথাপি বলা যায় সম্রাট শার্লামানের আবির্ভাবের পূর্বে পশ্চিম ইউরোপের সংখ্যা গরিষ্ট মানুষ এই ধর্ম গ্রহণ করেনি।

     খ্রীষ্ট ধর্মের বিকাশে চার্চ ও যাজকরা বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল। এই ধর্মের উৎপত্তির পর থেকেই যিশু অনুগামীরা চার্চ স্থাপন ও ধর্ম প্রচারে লিপ্ত হন। যিশুর অনুগামী সেন্ট পলের যিশুর বাণী প্রচারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা জুডেয়া প্রভিন্সে বহু পরিবারকে আকৃষ্ট করে। তার কার্যকলাপের জন্য যীশুর বাণী খ্রীষ্টধর্ম রূপে পরিচিতি লাভ করে। পূর্বাঞ্চলের প্রভিন্সগুলিতে তিনি এই ধর্মকে ব্যাপকভাবে প্রচার করেন। যদিও রোমান শাসকরা তাকে ৬৪ খ্রীস্টাব্দে মৃত্যুদণ্ড দেন। অপর একজন বিশিষ্ট খ্রীষ্টধর্ম প্রচারক ছিলেন সেন্ট পিটার। ইহুদি ধর্মকে অনুসরণ করে খ্রীষ্টানরা খুব দ্রুত চার্চ স্থাপন করে এবং বিভিন্ন ক্রম পদ চার্চে সৃষ্টি করা হয়। পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপে অসংখ্য চার্চ স্থাপিত হয়। চার্চ অতিসাধারন ও আন্তরিকভাবে প্রচুর ইচ্ছুক মানুষকে ধর্মান্তরিত করে। চার্চে দীক্ষা অনুষ্ঠান, খ্রীষ্টধর্মীয়দের মাঝে মাঝে মিলন এবং ধর্মীয় নির্দেশগুলি মেনে চলার শপথ-সাধারণ মানুষকে চার্চ ও খ্রীষ্টান ধর্ম সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলে। অন্যদিকে চার্চকে কেন্দ্র করে ধর্ম যাজকদের জনকল্যানমূলক কাজ, শান্তির বাণী প্রচার এই ধর্মকে বিস্তারে বিশেষ সাহায্য করে। তবে এই যাজকদের মধ্যেকার বিবাদ সাময়িক সংকট সৃষ্টি করে। যদিও শেষ পর্যন্ত রোমের প্রধান যাজকের হাতে সমগ্র পশ্চিমের চার্চ ব্যাবস্থার নেতৃত্ব আসে এবং রোমের প্রধান যাজকই খ্রীষ্ট ধর্মের গুরু বা পোপ হিসাবে পরিচিত হন। পোপদের কার্যকলাপে খ্রীষ্টধর্মের বিজয়রথ উড্ডীন থাকে। খ্রীষ্টান ধর্মকে কেন্দ্র করে রোমান সাম্রাজ্য তথাকথিত ‘Universal Empire’-এ পরিণত হয়।

     এভাবে খ্রীষ্টধর্ম রোমানদের প্যাগান ধর্ম, মিথ্রদেব ধর্ম, মিশরীয় ধর্ম এবং একেশ্বরবাদী ইহুদি ধর্মকেও পিছনে ঠেলে দিল। মূলত খ্রীষ্ট ধর্মের সামগ্রিকতা, বিপ্লবী ভাবনা, সীমাহীন ভালোবাসা, দানশীলতা, সহানুভূতি সকলের কাছে এই ধর্মকে গ্রহণযোগ্য করে তুলেছিল। এবিষয়ে ঐতিহাসিক মাইকেল গ্র্যান্ট লিখেছেন-"This was a doctrine of total, revolutionary, unrestricted love, charity, and sympathy-not excluding woman, since Jesus was born of a human woman; extending to children; embracing even the totally hopeless and destitutes', those whom society had rejected." এই ধর্মের বাণী-দরিদ্র তোমরা সুখি, কারণ তোমাদের জন্য ঈশ্বরের রাজ্য অপেক্ষা করে আছে। ক্ষুদার্থ, তোমরাও সুখী, কারণ তোমাদের একদিন ক্ষুধা নিবৃত্ত হয়ে পরিতৃপ্তি আসবে। কিন্তু হায় ধনী, তোমারও সান্তনা আছে। হায় তুমি হাসছ, কারণ তুমি একসময় কাঁদবে। এই সকল বাণী, যীশুর জীবন দিয়ে আত্মত্যাগ, এই ধর্মকে ইসলামের উত্থানের পূর্ব পর্যন্ত অপ্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত করল।


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব আলোচনা করো।

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব: ভূমিকা: আধুনিক বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির উপনিবেশ প্রসারের কৌশল ‘নয়া উপনিবেশবাদ’ ও ‘নয়া সাম্রাজ্যবাদ’ নামে পরিচিত। উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে জে. এ. হবসন এবং ভি. আই. লেনিন সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ সম্পর্কে তাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। হবসনের ব্যাখ্যা:  ব্রিটিশ অর্তনীতিবিদ জে. এ. হবসন তাঁর ‘সাম্রাজ্যবাদঃ একটি সমীক্ষা’ নামক গ্রন্থে সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর ব্যাখ্যার প্রধান বিষয়গুলি হল—  [1] অর্থনৈতিক মুনাফা লাভ: হবসনের মতে, সাম্রাজ্যবাদের পিছনে কোনো মহৎ, বা উচ্চতর লক্ষ্য নয়, অর্থনৈতিক মুনাফাই ছিল নয়া উপনিবেশকারীদের প্রধানতম উদ্দেশ্য। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় সমাজে ধনসম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্যের ফলে পুঁজিপতিদের হাতে যে ‘মূলধনের পাহাড়' সৃষ্টি হয়, সেই মূলধন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে তারা মুনাফা লাভের পরিকল্পনা করে। [2] পুঁজিপতিদের চাপ: হবসন মনে করেন যে, নতুন ক্ষেত্রে মূলধন বিনিয়োগ করা...

অবশিল্পায়ন কি ? ঔপনিবেশিক ভারতে অবশিল্পায়নের কারণ ও ফলাফল লেখো ।

অবশিল্পায়নঃ        অবশিল্পায়ন বলতে বোঝায় শিল্পায়নের বিপরীত বা শিল্পের অধোগতি। অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনধীন ভারতের চিরাচরিত ও ঐতিহ্যশালী হস্তশিল্প-কুটিরশিল্পের ধ্বংস সাধনই মূলত অবশিল্পায়ন। সব্যসাচী ভট্টাচার্যের মতে যদি দেশের মানুষ শিল্প-কর্ম ছেড়ে চাষ-আবাদে জীবিকা অর্জন শুরু করে অথবা জাতীয় কৃষিজ ও অংশ বাড়তে থাকে এবং শিল্পজ অংশ কমতে থাকে তাকে অব-অবশিল্পায় বলে। অবশিল্পায়নের ফলে ভারতের অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের অবশিল্পায়ন সম্পর্কে প্রথম পর্বে দাদাভাই নাও রোজি, রমেশ চন্দ্র দত্ত, মহাদেব গোবিন্দ রানাডে প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতা এবং পরবর্তীকালে রজনীপাম দত্ত জাতীয়তাবাদী নেতা এবং পরবর্তীকালে রজনী পামদত্ত, গ্যাডগিল, বি.ডি. বসু, নরেন্দ্রকৃয় সিংহ, বিপান চন্দ্র, অমিয় বাগচি প্রমুখ ঐতিহাসিক আলোচনা করেছেন। অব-শিল্পায়নের কারণঃ (১) কাঁচামালের রপ্তানি: ভারতীয় শিল্পের ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে ভারত থেকে ইংল্যান্ডে কাঁচামাল রপ্তানি শুরু হয়। ভারত ইংল্যান্ডের কলকারখানার খোলা বাজার ও কাঁচামাল সরবরাহের উৎসে পরিণত হয়। ভারত থেকে তুলো, নীল, কফি, চা, রেশম প্রভৃতি ইং...

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। এই যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা কী ছিল ?

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: সূচনা: ১৯৬০-এর দশকের শেষদিকে আওয়ামি লিগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ববঙ্গের স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছোয়। (1) মিথ্যা মামলায় জড়ানো: শেখ মুজিবুরসহ অন্যান্য আওয়ামি লিগ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে, তারা ভারতের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এই অভিযোগে পাক সরকার ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের প্রথমদিকে শেখ মুজিবুরসহ ৩৫ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তীব্র হয়ে ওঠে। প্রবল আন্দোলনের চাপে পাক সরকার মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। (2) সাধারণ নির্বাচন: পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাকিস্তানের সরকার- বিরোধী অসন্তোষ বাড়তে থাকলে পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন। এই নির্বাচনে মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন লাভ করে। পশ্চিম পাকিস্তানের ১৪০টি আসনের মধ্যে জুলফিকার আলি ভুট্টোর পিপলস পাটি ...

সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ  সূচনা: মিশর দেশের উত্তর-পূর্ব দিকে ইংরেজ ও ফরাসিদের তত্ত্বাবধানে খনন করা একটি খাল হল সুয়েজ খাল। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ওই খাল খনন শুরু হলেও ১৮৬৯ থেকে এতে বাণিজ্যিকভাবে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। ইউনিভার্সাল সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি নামে এক সংস্থাকে একটি চুক্তির ভিত্তিতে ৯৯ বছরের জন্য খালটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই মিশরের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের এক ঘোষণাবলে সুয়েজ খাল ও সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি—দুটিকেই জাতীয়করণ করে নেন। বিশ্বজুড়ে এই সমস্যাকেই সুয়েজ সংকট বোঝায়। সুয়েজ সংকটের কারণঃ (১) ব্রিটেন ও ফ্রান্সের দায়িত্ব: আরব-ইজরায়েল দ্বন্দ্ব চলাকালে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইজরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিলে আরব দেশগুলি ক্ষুব্ধ হয় এবং নাসেরের সঙ্গেও পাশ্চাত্য দেশগুলির মনোমালিন্য শুরু হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্রিটেন ও ফ্রান্সই সুয়েজ খালের ওপর সবথেকে বেশি নির্ভরশীল ছিল। মার্কিন বিদেশমন্ত্রী ডালেস যখন সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশগুলিকে নিয়ে এক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেন তখ...

জোটনিরপেক্ষ নীতি কী ? জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব লেখো।

জোটনিরপেক্ষ নীতিঃ     দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে একদিকে সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সাম্যবাদী বা সমাজতান্ত্রিক জোট, অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুঁজিবাদী বা ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট গঠিত হয়। এই দুই জোটের কোনোটিতেই যোগ না দিয়ে, স্বাধীনভাবে উভয় জোটের সঙ্গেই বন্ধুত্ব বা সমদূরত্ব বজায় রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বৈদেশিক সম্পর্ক পরিচালনার নীতি জোটনিরপেক্ষ নীতি নামে পরিচিত। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের কারণ বা উদ্দেশ্য ঃ    মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোট ও সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোটের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব থেকে উদ্ভূত ‘ঠান্ডা লড়াই'-এর আর্বত থেকে নিজেকে দূরে রেখে, জাতীয় স্বার্থ ও নবলব্ধ স্বাধীনতাকে রক্ষার জন্য ভারত জোটনিরপেক্ষ বিদেশনীতি গ্রহণ করে। ভারতে জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের কারণগুলি হল— [1] ভৌগোলিক সুরক্ষা : এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে এমন একটা জায়গায় ভারতের অবস্থান যা তাকে মধ্যপ্রাচ্য। ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী দেশে পরিণত করেছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, চিন, ব্রহ্মদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশি...