সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান পর্যালোচনা করো ।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে সুভাষচন্দ্রের ভূমিকাঃ


ভূমিকা: ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস যাঁর নামটি এক বিশাল জ্যোতিষ্কের মতো চিরদিন ভাস্বর হয়ে থাকবে তিনি হলেন সুভাষচন্দ্র বসু। দুঃসাধ্যের সাধক, দুর্গম পথের নির্ভীক এই যাত্রীকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ আশীর্বাদ করে বলেছিলেন— “সুভাষচন্দ্র, বাঙালি কবি আমি, বাংলা দেশের হয়ে তোমাকে দেশনায়কের পদে বরণ করি।”

(১) রাজনীতিতে অংশগ্রহণ: ছাত্রজীবন থেকেই সুভাষচন্দ্র ইংরেজ শাসনবিরোধী এক তীব্র মনোভাব পোষণ করতেন। তাই তিনি ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের লোভনীয় চাকরিকে প্রত্যাখ্যান করেন। দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের অনুপ্রেরণায় তিনি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন। কংগ্রেসের মধ্যে যে বামপন্থী চিন্তাধারার অনুপ্রবেশ ঘটে তাতে জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে তিনিও নেতৃত্ব দেন।

(২) গান্ধিজির সঙ্গে মতবিরোধ: ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে হরিপুরা কংগ্রেসে তিনি সভাপতি নির্বাচিত হন। সুভাষচন্দ্রের সংগ্রামী দৃষ্টিভঙ্গি গান্ধিজি ও তাঁর অনুগামীদের ক্ষুব্ধ করে। গান্ধিজি ত্রিপুরি কংগ্রেসে (১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ) সভাপতি হিসেবে পট্টভি সীতারামাইয়ার নাম প্রস্তাব করেন। কিন্তু সুভাষচন্দ্র পুনরায় সভাপতি নির্বাচিত হন। এতে গান্ধিজি ও তাঁর সমর্থকরা সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে কোনোরকম সহযোগিতা না করার সিদ্ধান্ত নেন। ফলে বাধ্য হয়ে সুভাষচন্দ্র সভাপতির পদ ত্যাগ করেন। জাতীয় আন্দোলনকে গতিশীল ও সংগ্রামমুখী করে তুলতে তিনি ফরওয়ার্ড ব্লক নামে একটি নতুন দল গঠন করেন (২২ জুন, ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দ)। পরিণতি হিসেবে সুভাষচন্দ্র কংগ্রেস থেকে বহিষ্কৃত হন।

(৩) ভারত ত্যাগ : ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে সুভাষের যুদ্ধবিরোধী মনোভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে ব্রিটিশ তাঁকে ভারত রক্ষা আইন-এ গ্রেফতার করে (২ জুলাই, ১৯৪০ খ্রি.)। মুক্তির দাবিতে সুভাষ কারাগারের মধ্যেই আমৃত্যু অনশন করেন। স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলে পুলিশ তাঁকে স্বগৃহে অন্তরিন করে রাখে (৫ ডিসেম্বর, ১৯৪০ খ্রি.)। কিন্তু ব্রিটিশের কড়া প্রহরা এড়িয়ে, জিয়াউদ্দিনের ছদ্মবেশে সুভাষ দেশত্যাগ করেন (১৭ জানুয়ারি, ১৯৪১ খ্রি.)।

(৪) জার্মানিতে কার্যকলাপ: দিল্লি থেকে সুভাষ পৌঁছোন আফগানিস্তানের কাবুলে। কাবুল থেকে তিনি রাশিয়ায় যান ভারতবাসীর স্বাধীনতালাভে রুশ সাহায্যের লক্ষ্যে। কিন্তু রুশ রাষ্ট্রপ্রধান স্টালিন এসময় রাশিয়ার ওপর জার্মানির সম্ভাব্য আক্রমণের পরিস্থিতিতে ইংরেজদের সঙ্গে মিত্রতা আশা করেছিলেন। তাই সাহায্যের কোনো আশ্বাস না পেয়ে । তিনি বিমানযোগে জার্মানির বার্লিনে চলে আসেন (২৮ মার্চ, ১৯৪১ খ্রি.)। বার্লিনে সুভাষ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী রিবেনট্রপের সঙ্গে দেখা করেন এবং জার্মানির সহযোগিতায় ব্রিটিশবিরোধী প্রচার ও বন্দি ৪০০ ভারতীয় সেনাদের নিয়ে একটি মুক্তি সেনা গঠনের প্রয়াস চালাতে থাকেন। জার্মানির বিদেশ দপ্তরের তথ্যকেন্দ্রের সহায়তায় সুভাষচন্দ্র গঠন করেন ওয়ার্কিং গ্রুপ ইন্ডিয়া, যা পরে ‘স্পেশাল ইন্ডিয়া ডিপার্টমেন্ট'-এ রূপান্তরিত হয়। ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের শেষার্ধে সুভাষচন্দ্র বার্লিনে গিরিজা মুখার্জি, এম. আর, ব্যাস, এ. সি. এন. নাম্বিয়ার সহ ২০ জন ভারতীয়কে নিয়ে গঠন করেন ‘ফ্রি ইন্ডিয়া সেন্টার’। এর মুখপত্র হয় ইংরেজি ও হিন্দি দ্বিভাষিক পত্রিকা ‘আজাদ হিন্দ’। জার্মানির হাতে বন্দি ভারতীয় সৈন্যদের নিয়ে সুভাষ ‘ইন্ডিয়ান লিজিয়ন’ বা ‘ফ্রি ইন্ডিয়া আর্মি’ নামে এক সেনাদল গঠন করেন (ডিসেম্বর, ১৯৪২ খ্রি.)। এটাই ছিল আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠনের প্রথম পরিকল্পনা। উল্লম্মানকারী ব্যাঘ্র ছিল সেনাবাহিনীর প্রতীক। এই সেনাদল, সুভাষচন্দ্রের দেশপ্রেম ও বিপ্লবী আদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে সর্বপ্রথম তাকে নেতাজি অভিধায় ভূষিত করে এবং ‘জয়হিন্দ’ ধ্বনি দিয়ে অভিবাদন জানায়। ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামকে গতিশীল করে তোলার উদ্দেশ্যে তিনি ‘আজাদ হিন্দ রেডিয়ো’, ‘ন্যাশনাল কংগ্রেস রেডিয়ো’ ও ‘আজাদ মুসলিম রেডিয়ো’ নামে তিনটি গোপন প্রচার কেন্দ্র থেকে ফারসি, ইংরেজি, হিন্দি, গুজরাতি, বাংলা ভাষাতে নিয়মিত প্রচারের ব্যবস্থা করেছিলেন।

(৫) জাপানি সরকারের প্রতিশ্রুতি আদায়: এদিকে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসে জার্মানির হঠাৎ রাশিয়া আক্রমণ এবং ওই বছর ৭ ডিসেম্বর ব্রিটেন ও আমেরিকার বিরুদ্ধে জাপানের যুদ্ধ ঘোষণায় বিশ্বযুদ্ধের পট পরিবর্তন ঘটে। সুভাষচন্দ্র উপলব্ধি করেন যে ভারতের মুক্তি প্রচেষ্টায় জাপানি সহযোগিতাই অধিকতর কার্যকারী হবে। ঠিক এই সময় জাপান-প্রবাসী বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সুভাষচন্দ্র ৩ মাসের অধিক সময় ধরে এক দুঃসাহসিক সাবমেরিন অভিযান শেষে টোকিও উপস্থিত হন (১৩ জুন, ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দ)। ভারতের স্বাধীনতার প্রশ্নে সুভাষচন্দ্র পরপর দু-বার জাপানি প্রধানমন্ত্রী হিদেকি তোজো (Hideki Tojo)-র সঙ্গে দেখা করেন। জাপানের আইনসভা ডায়েট (Diet)-এ সুভাষচন্দ্রের উপস্থিতিতে তোজো ভারতের পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য জাপানের তরফে সুভাষকে নিঃশর্ত সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে জাপানি সরকারের সর্বতোভাবে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি নিয়ে সুভাষচন্দ্র সিঙ্গাপুরে যান।

(৬) আজাদ হিন্দ সরকার প্রতিষ্ঠা: সিঙ্গাপুরে ৪ জুলাই রাসবিহারী সুভাষচন্দ্রের হাতে তাঁর প্রতিষ্ঠিত ইন্ডিয়ান ইনডিপেন্ডেন্স লিগ বা ভারতীয় স্বাধীনতা সংঘের দায়িত্বভার অর্পণ করেন। পরে ২৫ আগস্ট নেতাজি আনুষ্ঠানিকভাবে আজাদ হিন্দ ফৌজ-এর সর্বাধিনায়কত্ব গ্রহণ করেন এবং ২১ অক্টোবর আজাদ হিন্দ সরকার নামে অস্থায়ী ভারত সরকার প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর আজাদ হিন্দ সরকার ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।

(৭) দিল্লি অভিযান: ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে ৪ জানুয়ারি নেতাজি রেঙ্গুনে এসে তাঁর সামরিক দপ্তর স্থাপন করেন। ইতিমধ্যে আজাদ হিন্দ ফৌজ পাঁচটি ব্রিগেডে বিভক্ত হয়ে যায়, যথা— গান্ধি ব্রিগেড, আজাদ ব্রিগেড, নেহরু ব্রিগেড, সুভাষ ব্রিগেড, ঝাঁসির রানি ব্রিগেড। সুভাষচন্দ্র সেনাদলের সামনে ধ্বনি দেন ‘দিল্লি চলো’। জাপানি নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায়, নেতাজির বলিষ্ঠ নেতৃত্বে এবং উজ্জীবনী মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে আজাদ হিন্দ বাহিনী প্রবল বিক্রমে যুদ্ধ চালায়। তারা মণিপুরের কোহিমা শহরটি দখল করে (৬ এপ্রিল, ১৯৪৪ খ্রি.) জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে এবং রাজধানী ইম্ফল দখলের জন্য অগ্রসর হয়। শেষ পর্যন্ত বিশ্বযুদ্ধে জাপান তথা অক্ষশক্তির পরাজয় আসন্ন হয়ে পড়লে আজাদ হিন্দ সেনাদল দিল্লি পর্যন্ত পৌঁছোতে ব্যর্থ হয়।

মূল্যায়ন: সুভাষচন্দ্র ও তাঁর আজাদ হিন্দ ফৌজের নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ ও সংগ্রাম তাৎক্ষণিক বিচারে ভারতকে স্বাধীন করতে পারেনি সত্য, কিন্তু তাঁর পরিকল্পনা, দেশপ্রেম, আদর্শ ও আত্মত্যাগ স্বাধীনতা অর্জনের পথকে যে প্রশস্ত ও সুগম করেছিল এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব আলোচনা করো।

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব: ভূমিকা: আধুনিক বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির উপনিবেশ প্রসারের কৌশল ‘নয়া উপনিবেশবাদ’ ও ‘নয়া সাম্রাজ্যবাদ’ নামে পরিচিত। উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে জে. এ. হবসন এবং ভি. আই. লেনিন সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ সম্পর্কে তাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। হবসনের ব্যাখ্যা:  ব্রিটিশ অর্তনীতিবিদ জে. এ. হবসন তাঁর ‘সাম্রাজ্যবাদঃ একটি সমীক্ষা’ নামক গ্রন্থে সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর ব্যাখ্যার প্রধান বিষয়গুলি হল—  [1] অর্থনৈতিক মুনাফা লাভ: হবসনের মতে, সাম্রাজ্যবাদের পিছনে কোনো মহৎ, বা উচ্চতর লক্ষ্য নয়, অর্থনৈতিক মুনাফাই ছিল নয়া উপনিবেশকারীদের প্রধানতম উদ্দেশ্য। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় সমাজে ধনসম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্যের ফলে পুঁজিপতিদের হাতে যে ‘মূলধনের পাহাড়' সৃষ্টি হয়, সেই মূলধন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে তারা মুনাফা লাভের পরিকল্পনা করে। [2] পুঁজিপতিদের চাপ: হবসন মনে করেন যে, নতুন ক্ষেত্রে মূলধন বিনিয়োগ করা...

অবশিল্পায়ন কি ? ঔপনিবেশিক ভারতে অবশিল্পায়নের কারণ ও ফলাফল লেখো ।

অবশিল্পায়নঃ        অবশিল্পায়ন বলতে বোঝায় শিল্পায়নের বিপরীত বা শিল্পের অধোগতি। অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনধীন ভারতের চিরাচরিত ও ঐতিহ্যশালী হস্তশিল্প-কুটিরশিল্পের ধ্বংস সাধনই মূলত অবশিল্পায়ন। সব্যসাচী ভট্টাচার্যের মতে যদি দেশের মানুষ শিল্প-কর্ম ছেড়ে চাষ-আবাদে জীবিকা অর্জন শুরু করে অথবা জাতীয় কৃষিজ ও অংশ বাড়তে থাকে এবং শিল্পজ অংশ কমতে থাকে তাকে অব-অবশিল্পায় বলে। অবশিল্পায়নের ফলে ভারতের অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের অবশিল্পায়ন সম্পর্কে প্রথম পর্বে দাদাভাই নাও রোজি, রমেশ চন্দ্র দত্ত, মহাদেব গোবিন্দ রানাডে প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতা এবং পরবর্তীকালে রজনীপাম দত্ত জাতীয়তাবাদী নেতা এবং পরবর্তীকালে রজনী পামদত্ত, গ্যাডগিল, বি.ডি. বসু, নরেন্দ্রকৃয় সিংহ, বিপান চন্দ্র, অমিয় বাগচি প্রমুখ ঐতিহাসিক আলোচনা করেছেন। অব-শিল্পায়নের কারণঃ (১) কাঁচামালের রপ্তানি: ভারতীয় শিল্পের ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে ভারত থেকে ইংল্যান্ডে কাঁচামাল রপ্তানি শুরু হয়। ভারত ইংল্যান্ডের কলকারখানার খোলা বাজার ও কাঁচামাল সরবরাহের উৎসে পরিণত হয়। ভারত থেকে তুলো, নীল, কফি, চা, রেশম প্রভৃতি ইং...

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। এই যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা কী ছিল ?

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: সূচনা: ১৯৬০-এর দশকের শেষদিকে আওয়ামি লিগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ববঙ্গের স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছোয়। (1) মিথ্যা মামলায় জড়ানো: শেখ মুজিবুরসহ অন্যান্য আওয়ামি লিগ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে, তারা ভারতের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এই অভিযোগে পাক সরকার ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের প্রথমদিকে শেখ মুজিবুরসহ ৩৫ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তীব্র হয়ে ওঠে। প্রবল আন্দোলনের চাপে পাক সরকার মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। (2) সাধারণ নির্বাচন: পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাকিস্তানের সরকার- বিরোধী অসন্তোষ বাড়তে থাকলে পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন। এই নির্বাচনে মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন লাভ করে। পশ্চিম পাকিস্তানের ১৪০টি আসনের মধ্যে জুলফিকার আলি ভুট্টোর পিপলস পাটি ...

সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ  সূচনা: মিশর দেশের উত্তর-পূর্ব দিকে ইংরেজ ও ফরাসিদের তত্ত্বাবধানে খনন করা একটি খাল হল সুয়েজ খাল। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ওই খাল খনন শুরু হলেও ১৮৬৯ থেকে এতে বাণিজ্যিকভাবে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। ইউনিভার্সাল সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি নামে এক সংস্থাকে একটি চুক্তির ভিত্তিতে ৯৯ বছরের জন্য খালটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই মিশরের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের এক ঘোষণাবলে সুয়েজ খাল ও সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি—দুটিকেই জাতীয়করণ করে নেন। বিশ্বজুড়ে এই সমস্যাকেই সুয়েজ সংকট বোঝায়। সুয়েজ সংকটের কারণঃ (১) ব্রিটেন ও ফ্রান্সের দায়িত্ব: আরব-ইজরায়েল দ্বন্দ্ব চলাকালে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইজরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিলে আরব দেশগুলি ক্ষুব্ধ হয় এবং নাসেরের সঙ্গেও পাশ্চাত্য দেশগুলির মনোমালিন্য শুরু হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্রিটেন ও ফ্রান্সই সুয়েজ খালের ওপর সবথেকে বেশি নির্ভরশীল ছিল। মার্কিন বিদেশমন্ত্রী ডালেস যখন সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশগুলিকে নিয়ে এক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেন তখ...

জোটনিরপেক্ষ নীতি কী ? জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব লেখো।

জোটনিরপেক্ষ নীতিঃ     দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে একদিকে সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সাম্যবাদী বা সমাজতান্ত্রিক জোট, অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুঁজিবাদী বা ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট গঠিত হয়। এই দুই জোটের কোনোটিতেই যোগ না দিয়ে, স্বাধীনভাবে উভয় জোটের সঙ্গেই বন্ধুত্ব বা সমদূরত্ব বজায় রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বৈদেশিক সম্পর্ক পরিচালনার নীতি জোটনিরপেক্ষ নীতি নামে পরিচিত। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের কারণ বা উদ্দেশ্য ঃ    মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোট ও সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোটের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব থেকে উদ্ভূত ‘ঠান্ডা লড়াই'-এর আর্বত থেকে নিজেকে দূরে রেখে, জাতীয় স্বার্থ ও নবলব্ধ স্বাধীনতাকে রক্ষার জন্য ভারত জোটনিরপেক্ষ বিদেশনীতি গ্রহণ করে। ভারতে জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের কারণগুলি হল— [1] ভৌগোলিক সুরক্ষা : এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে এমন একটা জায়গায় ভারতের অবস্থান যা তাকে মধ্যপ্রাচ্য। ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী দেশে পরিণত করেছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, চিন, ব্রহ্মদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশি...