সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েতীকরণের উদ্দেশ্য কি ছিল? বিভিন্ন দেশে এর কি প্রভাব পড়েছিল?

পূর্ব ইউরোপে রুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠাঃ


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানে সোভিয়েত রাশিয়ার লালফৌজ পূর্ব ইউরোপীয় অঞ্চল জার্মানির হাত থেকে মুক্ত করে সেখানে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়া এসব অঞলে কমিউনিস্ট ভাবাদর্শের প্রসার ও রাশিয়ার অনুগত কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে। রাশিয়া তার ভূখণ্ড সংলগ্ন লাটভিয়া, এস্তোনিয়া, লিথুয়ানিয়া প্রভৃতি ছোটো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিকে সরাসরি রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করে। এ ছাড়া পূর্ব ইউরোপের যুগোশ্লাভিয়া, চেকোশ্লোভাকিয়া, বুলগেরিয়া, আলবেনিয়া, হাঙ্গেরি, রুমানিয়া, পোল্যান্ড ও পূর্ব জার্মানি—এই আটটি দেশে রুশ-অনুগত কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।


রুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যেঃ

পূর্ব ইউরোপে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পিছনে রাশিয়ার যেসব উদ্দেশ্যগুলি ছিল তা হল-

[১] সাম্যবাদী আদর্শের প্রসার: স্ট্যালিন মনে করতেন যে, সকল বিজেতাই বিজিত অঞ্চলের ওপর নিজেদের মতাদর্শ ও সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাই পূর্ব ইউরোপের বিজিত অঞ্চলে রাশিয়ার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা যুক্তিসংগত। এজন্য সাম্যবাদী ভাবধারার ধারাবাহিক প্রসারের জন্য এই অঞ্চলে রাশিয়ার আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন ছিল।

[২] শক্তিশূন্যতা: যুদ্ধবিধ্বস্ত ইংল্যান্ড, ফ্রান্স প্রভৃতি দেশের আর্থিক ও সামরিক শক্তি নিঃশেষ হওয়ার ফলে ইউরোপে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয় রাশিয়া তা কাজে লাগাতে পূর্ব ইউরোপে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে।

[৩] নিরাপত্তা বলয়: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পূর্ব ইউরোপের ওপর দিয়ে জার্মানির হিটলার কর্তৃক রাশিয়া আক্রমণের ঘটনা রুশ নিরাপত্তাকে বিঘ্নিত করেছিল। পূর্ব ইউরোপে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে রাশিয়া নিজের জন্য একটি নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিল।

[৪] অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন: যুদ্ধবিধ্বস্ত রাশিয়ার অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনের জন্য পূর্ব ইউরোপের সম্পদের ব্যবহার; এবং এখানকার বাজার দখল রাশিয়ার কাছে খুবই প্রয়োজন ছিল।

[৫] কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতার অবসান: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে রাশিয়া কূটনৈতিক দিক থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলিতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিজস্ব প্রভাব-বলয় তৈরি করে রাশিয়া সেই বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটাতে চেয়েছিল।

   স্ট্যালিন ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে রাজা মাইকেলকে কমিউনিস্টদের নিয়ে একটি জাতীয় গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের নির্দেশ দেন। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে রুমানিয়ার সাধারণ নির্বাচনে কমিউনিস্ট সমর্থিত জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট বিপুল ভোটে জয়লাভ করে। ক্ষমতা লাভ করে নতুন সরকার কমিউনিস্ট বিরোধীদের ওপর সীমাহীন অত্যাচার শুরু করে। 

 রাজা মাইকেলের পদত্যাগ: নতুন সরকারের তীব্র অত্যাচারে রাজা মাইকেল ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে পদত্যাগ করেন। কিছুদিনের মধ্যে সকল বিরোধীদের নিধন করে, একমাত্র অনুগতদের নিয়ে রুমানিয়ান ওয়ার্কার্স পার্টি' (Rumanian Workers' Party) গঠিত হয়।

 স্বদেশভূমি ফ্রন্ট: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে বুলগেরিয়ায় কমিউনিস্ট, অকমিউনিস্ট সকলকে নিয়ে সোভিয়েত-অনুগত একটি 'স্বদেশভূমি ফ্রন্ট' (Fatherland Front) গঠন করা হয়। (২) কমিউনিস্ট নিধন: এরপর ক্রমে অকমিউনিস্টদের নিধন শুরু হয়। জাতীয়তাবাদী নেতা নিকোলা পেটকভ এর নেতৃত্বে 'পেজেন্টস্ ইউনিয়ন' দল কমিউনিস্টদের প্রবল বিরোধিতা করে।

 চেকোশ্লোভাকিয়া: প্রেসিডেন্ট নেনেস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের পর চেকোশ্লোভাকিয়ার ভূতপূর্ব অকমিউনিস্ট প্রেসিডেন্ট এডওয়ার্ড বেনেস রাশিয়া থেকে ফিরে এসে চেকোশ্লোভাকিয়ার প্রেসিডেন্ট পদ লাভ করেন।

     বেনেসের সরকার ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে আমেরিকার ঘোষিত মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলে রাশিয়া শঙ্কিত হয় যে, চেকোশ্লোভাকিয়ায় সাম্যবাদ-বিরোধী সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সেখানে রুশ আধিপত্য বিনষ্ট হবে। ফলে স্ট্যালিনের নির্দেশে চেকোশ্লোভাকিয়ায় অকমিউনিস্ট নিধন শুরু হয়। 

  কমিউনিস্ট অফিসার নিয়োগ: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নোসেক ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজধানী প্রাগের আটজন পুলিশ অফিসারকে পদচ্যুত করে কমিউনিস্ট মনোভাবাপন্ন নতুন আটজন অফিসার নিয়োগ করেন। সরকারের অধিকাংশ মন্ত্রী এই ঘটনার প্রতিবাদ করে পদচ্যুত অফিসারদের পুনর্নিয়োগের দাবি জানান। 

 অকমিউনিস্ট মন্ত্রীদের পদত্যাগ: কমিউনিস্ট প্রধানমন্ত্রী গোটওয়াল্ড এবিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সমর্থন করলে বেশ কয়েকজন অকমিউনিস্ট মন্ত্রী পদত্যাগপত্র পেশ করেন। দেশে কমিউনিস্ট ও অকমিউনিস্টদের মধ্যে প্রবল বিরোধ শুরু হয়। কমিউনিস্ট পরিচালিত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলিতে ধর্মঘট চলতে থাকে। শেষপর্যন্ত প্রেসিডেন্ট বেনেস মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র গ্রহণে বাধ্য হন এবং দেশে কমিউনিস্ট সংখ্যাগরিষ্ঠ মন্ত্রীসভা গঠিত হয়।



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব আলোচনা করো।

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব: ভূমিকা: আধুনিক বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির উপনিবেশ প্রসারের কৌশল ‘নয়া উপনিবেশবাদ’ ও ‘নয়া সাম্রাজ্যবাদ’ নামে পরিচিত। উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে জে. এ. হবসন এবং ভি. আই. লেনিন সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ সম্পর্কে তাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। হবসনের ব্যাখ্যা:  ব্রিটিশ অর্তনীতিবিদ জে. এ. হবসন তাঁর ‘সাম্রাজ্যবাদঃ একটি সমীক্ষা’ নামক গ্রন্থে সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর ব্যাখ্যার প্রধান বিষয়গুলি হল—  [1] অর্থনৈতিক মুনাফা লাভ: হবসনের মতে, সাম্রাজ্যবাদের পিছনে কোনো মহৎ, বা উচ্চতর লক্ষ্য নয়, অর্থনৈতিক মুনাফাই ছিল নয়া উপনিবেশকারীদের প্রধানতম উদ্দেশ্য। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় সমাজে ধনসম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্যের ফলে পুঁজিপতিদের হাতে যে ‘মূলধনের পাহাড়' সৃষ্টি হয়, সেই মূলধন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে তারা মুনাফা লাভের পরিকল্পনা করে। [2] পুঁজিপতিদের চাপ: হবসন মনে করেন যে, নতুন ক্ষেত্রে মূলধন বিনিয়োগ করা...

অবশিল্পায়ন কি ? ঔপনিবেশিক ভারতে অবশিল্পায়নের কারণ ও ফলাফল লেখো ।

অবশিল্পায়নঃ        অবশিল্পায়ন বলতে বোঝায় শিল্পায়নের বিপরীত বা শিল্পের অধোগতি। অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনধীন ভারতের চিরাচরিত ও ঐতিহ্যশালী হস্তশিল্প-কুটিরশিল্পের ধ্বংস সাধনই মূলত অবশিল্পায়ন। সব্যসাচী ভট্টাচার্যের মতে যদি দেশের মানুষ শিল্প-কর্ম ছেড়ে চাষ-আবাদে জীবিকা অর্জন শুরু করে অথবা জাতীয় কৃষিজ ও অংশ বাড়তে থাকে এবং শিল্পজ অংশ কমতে থাকে তাকে অব-অবশিল্পায় বলে। অবশিল্পায়নের ফলে ভারতের অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের অবশিল্পায়ন সম্পর্কে প্রথম পর্বে দাদাভাই নাও রোজি, রমেশ চন্দ্র দত্ত, মহাদেব গোবিন্দ রানাডে প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতা এবং পরবর্তীকালে রজনীপাম দত্ত জাতীয়তাবাদী নেতা এবং পরবর্তীকালে রজনী পামদত্ত, গ্যাডগিল, বি.ডি. বসু, নরেন্দ্রকৃয় সিংহ, বিপান চন্দ্র, অমিয় বাগচি প্রমুখ ঐতিহাসিক আলোচনা করেছেন। অব-শিল্পায়নের কারণঃ (১) কাঁচামালের রপ্তানি: ভারতীয় শিল্পের ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে ভারত থেকে ইংল্যান্ডে কাঁচামাল রপ্তানি শুরু হয়। ভারত ইংল্যান্ডের কলকারখানার খোলা বাজার ও কাঁচামাল সরবরাহের উৎসে পরিণত হয়। ভারত থেকে তুলো, নীল, কফি, চা, রেশম প্রভৃতি ইং...

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। এই যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা কী ছিল ?

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: সূচনা: ১৯৬০-এর দশকের শেষদিকে আওয়ামি লিগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ববঙ্গের স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছোয়। (1) মিথ্যা মামলায় জড়ানো: শেখ মুজিবুরসহ অন্যান্য আওয়ামি লিগ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে, তারা ভারতের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এই অভিযোগে পাক সরকার ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের প্রথমদিকে শেখ মুজিবুরসহ ৩৫ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তীব্র হয়ে ওঠে। প্রবল আন্দোলনের চাপে পাক সরকার মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। (2) সাধারণ নির্বাচন: পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাকিস্তানের সরকার- বিরোধী অসন্তোষ বাড়তে থাকলে পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন। এই নির্বাচনে মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন লাভ করে। পশ্চিম পাকিস্তানের ১৪০টি আসনের মধ্যে জুলফিকার আলি ভুট্টোর পিপলস পাটি ...

সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ  সূচনা: মিশর দেশের উত্তর-পূর্ব দিকে ইংরেজ ও ফরাসিদের তত্ত্বাবধানে খনন করা একটি খাল হল সুয়েজ খাল। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ওই খাল খনন শুরু হলেও ১৮৬৯ থেকে এতে বাণিজ্যিকভাবে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। ইউনিভার্সাল সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি নামে এক সংস্থাকে একটি চুক্তির ভিত্তিতে ৯৯ বছরের জন্য খালটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই মিশরের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের এক ঘোষণাবলে সুয়েজ খাল ও সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি—দুটিকেই জাতীয়করণ করে নেন। বিশ্বজুড়ে এই সমস্যাকেই সুয়েজ সংকট বোঝায়। সুয়েজ সংকটের কারণঃ (১) ব্রিটেন ও ফ্রান্সের দায়িত্ব: আরব-ইজরায়েল দ্বন্দ্ব চলাকালে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইজরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিলে আরব দেশগুলি ক্ষুব্ধ হয় এবং নাসেরের সঙ্গেও পাশ্চাত্য দেশগুলির মনোমালিন্য শুরু হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্রিটেন ও ফ্রান্সই সুয়েজ খালের ওপর সবথেকে বেশি নির্ভরশীল ছিল। মার্কিন বিদেশমন্ত্রী ডালেস যখন সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশগুলিকে নিয়ে এক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেন তখ...

জোটনিরপেক্ষ নীতি কী ? জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব লেখো।

জোটনিরপেক্ষ নীতিঃ     দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে একদিকে সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সাম্যবাদী বা সমাজতান্ত্রিক জোট, অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুঁজিবাদী বা ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট গঠিত হয়। এই দুই জোটের কোনোটিতেই যোগ না দিয়ে, স্বাধীনভাবে উভয় জোটের সঙ্গেই বন্ধুত্ব বা সমদূরত্ব বজায় রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বৈদেশিক সম্পর্ক পরিচালনার নীতি জোটনিরপেক্ষ নীতি নামে পরিচিত। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের কারণ বা উদ্দেশ্য ঃ    মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোট ও সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোটের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব থেকে উদ্ভূত ‘ঠান্ডা লড়াই'-এর আর্বত থেকে নিজেকে দূরে রেখে, জাতীয় স্বার্থ ও নবলব্ধ স্বাধীনতাকে রক্ষার জন্য ভারত জোটনিরপেক্ষ বিদেশনীতি গ্রহণ করে। ভারতে জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের কারণগুলি হল— [1] ভৌগোলিক সুরক্ষা : এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে এমন একটা জায়গায় ভারতের অবস্থান যা তাকে মধ্যপ্রাচ্য। ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী দেশে পরিণত করেছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, চিন, ব্রহ্মদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশি...