সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

চীনের ৪ ঠা মে আন্দোলনের কারণ ও প্রভাব আলোচনা করো।

সূচনা: বিংশ শতকের দ্বিতীয় দশকে চিনে রাজতন্ত্রী ও প্রজাতন্ত্রী বিপ্লবীদের মধ্যে প্রবল সংগ্রাম শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে চিনে বিদেশিদের আধিপত্যের অবসানের লক্ষ্যে সেদেশে প্রবল এক বৌদ্ধিক আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ মে শুরু হওয়া এই আন্দোলন ৪ মে-র আন্দোলন (May Fourth Movement) নামে পরিচিত।

৪ মে-র আন্দোলনের কারণ:


[1] ইউয়ান-সি-কাই-এর নৃশংসতা: চিনে ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পর চিনের রাষ্ট্রপতি সান-ইয়াৎ-সেন দেশের গৃহযুদ্ধ এড়াতে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দের ১২ ফেব্রুয়ারি সমরনায়ক ইউয়ান-সি-কাই- এর সমর্থনে স্বেচ্ছায় রাষ্ট্রপতির পদ ত্যাগ করেন। কিন্তু ইউয়ান-সি-কাই চিনের ক্ষমতা লাভের পর ধীরে ধীরে চিনে সামরিক একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং চিনে বিদেশিদের বিভিন্ন সুবিধা দেন। তিনি তাঁর বিরোধীদের একে একে হত্যা করেন। কুয়োমিনতাং দলের নেতা মুং চিয়াও-জেন নিহত হলে তাদের সরকার গঠনের আশা ভঙ্গ হয়। ফলে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেন, ফ্রান্স, জাপান-সহ কয়েকটি দেশ ইউয়ান সরকারকে যথেষ্ট পরিমাণ ঋণ দেয়।

[2] কুয়োমিনতাং দল নিষিদ্ধ: চিনে গৃহযুদ্ধ এড়িয়ে শান্তি ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সান-ইয়াৎ-সেন রাষ্ট্রপতির পদ ছেড়েছিলেন। কিন্তু এই উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ব্যর্থ হওয়ায় তিনি ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে ইউয়ান- এর বিরুদ্ধে ‘দ্বিতীয় বিপ্লব'-এর ডাক দেন। কয়েক মাসের মধ্যে ইউয়ান বিপ্লবীদের দমন করে। ইউয়ান যুদ্ধে জয়লাভের পর কুয়োমিনতাং দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।

[3] জাপানের একুশ দফা দাবি : ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে জাপান চিনের শান্টুং প্রদেশে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। এরপর সমগ্র চিনকে নিজেদের উপনিবেশে পরিণত করার উদ্দেশ্যে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জানুয়ারি জাপান চিনের কাছে ‘একুশ দফা দাবি’ পেশ করে এবং এই দাবিগুলি পূরণের জন্য চিনকে মাত্র ৪৮ ঘণ্টা সময় দেয়। বলা বাহুল্য, নিজ সার্বভৌমত্ব বিসর্জন দিয়ে কোনো স্বাধীন রাষ্ট্রের পক্ষেই এরূপ দাবি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। চিনা জাতীয়তাবাদীরা ধ্বনি তোলে যে, ‘দেশকে বাঁচাও'।

[4] একুশ দফা দাবির প্রতিবাদ: চিনের সাধারণ মানুষ জাপানের একুশ দফা দাবি'র বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়ে। এর বিরোধিতায় চিনে 'নাগরিকদের দেশপ্রেমী সমিতি' গড়ে ওঠে (১৯১৫ খ্রি.)। সাংহাই শহরে প্রতিষ্ঠিত ‘জাপ-বিরোধী কমরেডদের জাতীয় সমিতি’ চিনে জাপানি পণ্য বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়। চিনের অন্যান্য শহরেও এই বয়কট আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। একুশ দফা দাবির বিরুদ্ধে আমেরিকায় পাঠরত চিনের ছাত্রদের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।

[5] ইউয়ান-এর গোপন চুক্তি : চিন সাধারণতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি ইউয়ান- সি-কাই চিনের ‘সম্রাট' পদ লাভে অত্যন্ত আগ্রহী ছিলেন। নিজের ব্যক্তিস্বার্থ সিদ্ধি করার উদ্দেশ্যে তিনি জাপানের সঙ্গে এক গোপন চুক্তি সম্পাদন করেন। এর দ্বারা তিনি জাপানের দাবিগুলি মেনে নিয়ে চিনে জাপানের উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করে দেন। ইতিমধ্যে তিনি ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দের ১ জানুয়ারি চিনের ‘সম্রাট’ পদে অভিষিক্ত হবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। জাপানের চাপে ইউয়ান সরকার বয়কট আন্দোলন প্রত্যাহারের নির্দেশ দেয়। এসব ঘটনার বিরুদ্ধে চিনে তীব্র জনরোষের সৃষ্টি হয় ।

[6] বিদেশি পণ্যের বাজার: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় চিনে চিনে বিদেশি পণ্যের প্রবেশ যথেষ্ট পরিমাণে কমে যায়। কিন্তু যুদ্ধ শেষে জাপান-সহ অন্যান্য পুঁজিপতি দেশগুলি আবার চিনের অভ্যন্তরে বাজার দখলের উদ্দেশ্যে প্রবেশ করে। ফলে চিনের সদ্যোজাত শিল্পগুলি তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ে এবং অস্তিত্বের সংকটে পড়ে যায়।

[7] প্রত্যক্ষ কারণ : চিন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রপক্ষে যোগ দেয়। চিন আশা করেছিল যে, এর ফলে মিত্রপক্ষ যুদ্ধে জয়লাভ করলে বিদেশিদের কাছ থেকে চিন তার রাজ্যাংশগুলি ফেরত পাবে এবং বিদেশিদের সঙ্গে অসম চুক্তিগুলি বাতিল হবে। যুদ্ধাবসানের পর চিন প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে (১৯১৯ খ্রি.) ‘একুশ দফা দাবি’-সহ সব অসম চুক্তি এবং শান্টুং প্রদেশে জাপানি কর্তৃত্ব বাতিলের দাবি জানায়। কিন্তু ইউরোপীয় কর্তৃপক্ষ চিনের আবেদনে কর্ণপাত করেননি কারণ তাঁদের মতে, চিনের দাবিগুলি ছিল ‘আলোচনা বহির্ভূত' বিষয় ফলে চিনের প্রতিনিধিরা শূন্য হাতে দেশে ফিরে আসেন।

উপসংহার: উপরোক্ত বিভিন্ন কারণে চিনের সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। এই অবস্থায় পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চেন-তু-শিউ-র আহ্বানে হাজার হাজার ছাত্র ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ মে পিকিং-এর ‘তিয়েন-আন-মেন স্কোয়ার’-এ জড়ো হয়ে বিদেশি শক্তির অপসারণ, বিভিন্ন অসম চুক্তি বাতিল, দেশদ্রোহীদের শাস্তি, জাপানি পণ্য বয়কট প্রভৃতি দাবিতে বিক্ষোভ দেখায়। এই বিদ্রোহ শীঘ্রই দেশের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে।


৪ মে-র আন্দোলনের প্রভাব:


[1] শ্রমিক শ্রেণির গুরুত্ব: ৪ মে-র আন্দোলনের দ্বারা চিনে শ্রমিক শ্রেণির গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। এই আন্দোলনে শ্রমিকরা অর্থনৈতিক দাবিদাওয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক সংগ্রামের পথে অগ্রসর হয়।

[2] জাতীয়তাবোধের প্রসার: ৪ মে-র আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই চিনে আধুনিকতা, দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধের প্রসার ঘটে। প্রথম পর্বে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধে উদ্‌বুদ্ধ ছাত্র ও বুদ্ধিজীবীরা ছিল এই আন্দোলনের চালিকা শক্তি। লি তা চাও এই আন্দোলনকে মানবমুক্তির সংগ্রাম বলে অভিহিত করেছেন।

[3] সাংস্কৃতিক অগ্রগতি : আন্দোলন শুরু হওয়ার পর চিনে বহু বইপত্র ও পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হলে সাংস্কৃতিক অগ্রগতি ঘটে। চিনের পুরোনো কনফুসীয় মতাদর্শ সমালোচিত হতে থাকে এবং নতুন সংস্কৃতিকে সবাই স্বাগত জানায়। ঐতিহাসিক ইমান্যুয়েল সু-র মতে, এই আন্দোলন চিনের সাংস্কৃতিক জগতে সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন আনে।

[4] আন্দোলনের সাফল্য: আন্দোলনের চাপের কাছে চিন সরকার নতি স্বীকার করলে আন্দোলনের সাফল্য ঘোষিত হয়। আন্দোলনের চাপে সরকার আন্দোলনকারী ধৃত ছাত্রদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। চিনের পক্ষে ভার্সাই সন্ধিপত্রে স্বাক্ষর না করার কথা সরকার শেষপর্যন্ত ঘোষণা করে (২৮ জুন, ১৯১৯ খ্রি.)।

[5] কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠা: ৪ মে-র আন্দোলনের ফলে চিনে কুয়োমিনতাং দলের পুনর্গঠন হয় এবং কমিউনিস্ট পার্টির উত্থান ঘটে। এই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন নেতা ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে চিনে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। পরবর্তীকালে এই পার্টি চিনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

[6] ব্যাপকতা: চিনে ১৯১১-র বিপ্লব ছিল একটি আঞ্চলিক বিপ্লব। কেবল দক্ষিণ চিন এবং সন্নিহিত অঞ্চলেই তা সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ৪ মে-র আন্দোলনের প্রভাব ছিল চিনের সর্বত্র এবং এর গণভিত্তি ছিল। ব্যাপক।



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব আলোচনা করো।

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব: ভূমিকা: আধুনিক বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির উপনিবেশ প্রসারের কৌশল ‘নয়া উপনিবেশবাদ’ ও ‘নয়া সাম্রাজ্যবাদ’ নামে পরিচিত। উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে জে. এ. হবসন এবং ভি. আই. লেনিন সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ সম্পর্কে তাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। হবসনের ব্যাখ্যা:  ব্রিটিশ অর্তনীতিবিদ জে. এ. হবসন তাঁর ‘সাম্রাজ্যবাদঃ একটি সমীক্ষা’ নামক গ্রন্থে সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর ব্যাখ্যার প্রধান বিষয়গুলি হল—  [1] অর্থনৈতিক মুনাফা লাভ: হবসনের মতে, সাম্রাজ্যবাদের পিছনে কোনো মহৎ, বা উচ্চতর লক্ষ্য নয়, অর্থনৈতিক মুনাফাই ছিল নয়া উপনিবেশকারীদের প্রধানতম উদ্দেশ্য। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় সমাজে ধনসম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্যের ফলে পুঁজিপতিদের হাতে যে ‘মূলধনের পাহাড়' সৃষ্টি হয়, সেই মূলধন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে তারা মুনাফা লাভের পরিকল্পনা করে। [2] পুঁজিপতিদের চাপ: হবসন মনে করেন যে, নতুন ক্ষেত্রে মূলধন বিনিয়োগ করা...

অবশিল্পায়ন কি ? ঔপনিবেশিক ভারতে অবশিল্পায়নের কারণ ও ফলাফল লেখো ।

অবশিল্পায়নঃ        অবশিল্পায়ন বলতে বোঝায় শিল্পায়নের বিপরীত বা শিল্পের অধোগতি। অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনধীন ভারতের চিরাচরিত ও ঐতিহ্যশালী হস্তশিল্প-কুটিরশিল্পের ধ্বংস সাধনই মূলত অবশিল্পায়ন। সব্যসাচী ভট্টাচার্যের মতে যদি দেশের মানুষ শিল্প-কর্ম ছেড়ে চাষ-আবাদে জীবিকা অর্জন শুরু করে অথবা জাতীয় কৃষিজ ও অংশ বাড়তে থাকে এবং শিল্পজ অংশ কমতে থাকে তাকে অব-অবশিল্পায় বলে। অবশিল্পায়নের ফলে ভারতের অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের অবশিল্পায়ন সম্পর্কে প্রথম পর্বে দাদাভাই নাও রোজি, রমেশ চন্দ্র দত্ত, মহাদেব গোবিন্দ রানাডে প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতা এবং পরবর্তীকালে রজনীপাম দত্ত জাতীয়তাবাদী নেতা এবং পরবর্তীকালে রজনী পামদত্ত, গ্যাডগিল, বি.ডি. বসু, নরেন্দ্রকৃয় সিংহ, বিপান চন্দ্র, অমিয় বাগচি প্রমুখ ঐতিহাসিক আলোচনা করেছেন। অব-শিল্পায়নের কারণঃ (১) কাঁচামালের রপ্তানি: ভারতীয় শিল্পের ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে ভারত থেকে ইংল্যান্ডে কাঁচামাল রপ্তানি শুরু হয়। ভারত ইংল্যান্ডের কলকারখানার খোলা বাজার ও কাঁচামাল সরবরাহের উৎসে পরিণত হয়। ভারত থেকে তুলো, নীল, কফি, চা, রেশম প্রভৃতি ইং...

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। এই যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা কী ছিল ?

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: সূচনা: ১৯৬০-এর দশকের শেষদিকে আওয়ামি লিগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ববঙ্গের স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছোয়। (1) মিথ্যা মামলায় জড়ানো: শেখ মুজিবুরসহ অন্যান্য আওয়ামি লিগ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে, তারা ভারতের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এই অভিযোগে পাক সরকার ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের প্রথমদিকে শেখ মুজিবুরসহ ৩৫ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তীব্র হয়ে ওঠে। প্রবল আন্দোলনের চাপে পাক সরকার মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। (2) সাধারণ নির্বাচন: পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাকিস্তানের সরকার- বিরোধী অসন্তোষ বাড়তে থাকলে পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন। এই নির্বাচনে মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন লাভ করে। পশ্চিম পাকিস্তানের ১৪০টি আসনের মধ্যে জুলফিকার আলি ভুট্টোর পিপলস পাটি ...

সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ  সূচনা: মিশর দেশের উত্তর-পূর্ব দিকে ইংরেজ ও ফরাসিদের তত্ত্বাবধানে খনন করা একটি খাল হল সুয়েজ খাল। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ওই খাল খনন শুরু হলেও ১৮৬৯ থেকে এতে বাণিজ্যিকভাবে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। ইউনিভার্সাল সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি নামে এক সংস্থাকে একটি চুক্তির ভিত্তিতে ৯৯ বছরের জন্য খালটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই মিশরের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের এক ঘোষণাবলে সুয়েজ খাল ও সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি—দুটিকেই জাতীয়করণ করে নেন। বিশ্বজুড়ে এই সমস্যাকেই সুয়েজ সংকট বোঝায়। সুয়েজ সংকটের কারণঃ (১) ব্রিটেন ও ফ্রান্সের দায়িত্ব: আরব-ইজরায়েল দ্বন্দ্ব চলাকালে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইজরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিলে আরব দেশগুলি ক্ষুব্ধ হয় এবং নাসেরের সঙ্গেও পাশ্চাত্য দেশগুলির মনোমালিন্য শুরু হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্রিটেন ও ফ্রান্সই সুয়েজ খালের ওপর সবথেকে বেশি নির্ভরশীল ছিল। মার্কিন বিদেশমন্ত্রী ডালেস যখন সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশগুলিকে নিয়ে এক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেন তখ...

জোটনিরপেক্ষ নীতি কী ? জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব লেখো।

জোটনিরপেক্ষ নীতিঃ     দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে একদিকে সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সাম্যবাদী বা সমাজতান্ত্রিক জোট, অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুঁজিবাদী বা ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট গঠিত হয়। এই দুই জোটের কোনোটিতেই যোগ না দিয়ে, স্বাধীনভাবে উভয় জোটের সঙ্গেই বন্ধুত্ব বা সমদূরত্ব বজায় রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বৈদেশিক সম্পর্ক পরিচালনার নীতি জোটনিরপেক্ষ নীতি নামে পরিচিত। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের কারণ বা উদ্দেশ্য ঃ    মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোট ও সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোটের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব থেকে উদ্ভূত ‘ঠান্ডা লড়াই'-এর আর্বত থেকে নিজেকে দূরে রেখে, জাতীয় স্বার্থ ও নবলব্ধ স্বাধীনতাকে রক্ষার জন্য ভারত জোটনিরপেক্ষ বিদেশনীতি গ্রহণ করে। ভারতে জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের কারণগুলি হল— [1] ভৌগোলিক সুরক্ষা : এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে এমন একটা জায়গায় ভারতের অবস্থান যা তাকে মধ্যপ্রাচ্য। ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী দেশে পরিণত করেছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, চিন, ব্রহ্মদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশি...