সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মর্লে মিন্টো সংস্কার আইন 1909 খ্রিস্টাব্দ – ভারতীয় কাউন্সিল অ্যাক্ট সম্পর্কে আলোচনা করো।

মর্লে মিন্টো সংস্কার আইন:

সূচনা: বঙ্গভঙ্গের পরে ভারতীয় রাজনীতিতে চরমপন্থা ও সশস্ত্র বৈপ্লবিক ধারার উদ্ভব ঘটলে ব্রিটিশ বিভিন্নভাবে ভারতীয়দের সঙ্গে আপস মীমাংসার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। এই সূত্রেই ভারত-সচিব জন মর্গে এবং বড়োলাট মিন্টো ভারতের শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে যে সংস্কার আইন প্রবর্তন করেন (১৯০৯ খ্রি.) তা মর্লে- মিন্টো শাসন সংস্কার বা ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের কাউন্সিল আইন নামে পরিচিত। এই শাসনসংস্কার নীতির দ্বারা ব্রিটিশ হিন্দু-মুসলিম বিভেদনীতিকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় আন্দোলনের প্রসার রোধ করতে চেয়েছিল।

আইন প্রবর্তনের কারণ:

এই শাসনসংস্কার আইনটির পটভূমি বিশ্লেষণে দেখা যায় — (১) ১৯০৭ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সুরটি অধিবেশনে নরমপন্থী বা মডারেটদের পাশাপাশি চরমপন্থী বা এক্সট্রিমিস্টদের উদ্ভব ঘটে। এই দ্বন্দ্বকে কাজে লাগানোর সুযোগ পায় ব্রিটিশ। (২) সশস্ত্র বিপ্লবী ভাবধারায় উদ্‌বুদ্ধ হয়ে বাংলা ও মহারাষ্ট্রে গোপন বিপ্লবী সংঘ প্রতিষ্ঠা ও প্রকাশ্যে রাজনৈতিক হত্যার ঘটনা শুরু হয়, যা ব্রিটিশের কাছে ছিল সন্ত্রাসবাদ। (৩) আগাগোড়াই মুসলিম নেতারা জাতীয় কংগ্রেসের বিরোধিতা করেছিল বা জাতীয় কংগ্রেস থেকে দূরে সরেছিল। ১৯০৬ খ্রি. মুসলিম লিগ প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তারা পৃথক নির্বাচনের দাবি জানায়। তারা ব্রিটিশের কাছ থেকে কিছু সুযোগসুবিধা পাওয়ার আশায় দিন গুণছিল। (৪) ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা হলে আগা খাঁর নেতৃত্বে ৩৫ জনের একটি মুসলিম প্রতিনিধি দল বড়োলাট মিন্টোর সঙ্গে দেখা করে আলিগড় কলেজের অধ্যক্ষ আর্চবোল্ড- এর লেখা এক স্মারকলিপি জমা দেন ও মুসলমানদের জন্য আলাদা নির্বাচনের অধিকারসহ বেশ কিছু সুযোগসুবিধার দাবি জানান। অপরদিকে ভারতবাসীর স্বায়ত্তশাসনের দাবি ক্রমশ উত্তাল হয়ে উঠতে শুরু করলে ব্রিটিশ মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইন প্রবর্তন করে।

আইনের শর্তাবলি:

১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত মর্লে-মিন্টো শাসনতান্ত্রিক সংস্কার আইনের শর্তাবলির দুটি দিক ছিল। যথা—কার্যনির্বাহক পরিষদ এবং আইন পরিষদ।

[1] কার্যনির্বাহক পরিষদ : মর্লে-মিন্টো শাসনতান্ত্রিক সংস্কার আইনে কেন্দ্রে এবং বিভিন্ন প্রদেশে কার্যনির্বাহক পরিষদ গঠনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

i. কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহক পরিষদ: এই আইন অনুসারে কেন্দ্রে বড়োলাটের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহক পরিষদে একজন করে ভারতীয় প্রতিনিধি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই হিসেবে প্রথম ভারতীয় সদস্য হিসেবে নিযুক্ত হন সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ।

ii. প্রাদেশিক কার্য নির্বাহক পরিষদ: মলে-মিন্টো শাসনতান্ত্রিক সংস্কার আইন অনুসারে প্রতিটি প্রাদেশিক পরিষদেও একজন করে ভারতীয় প্রতিনিধি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে বাংলা, বোম্বাই, মাদ্রাজ প্রভৃতি প্রদেশের গভর্নরের কার্যনির্বাহক পরিষদের সদস্য সংখ্যা ১ থেকে বাড়িয়ে ৪ জন করা হয়। কিন্তু বিষয়টি বাধ্যতামূলক ছিল না। রাজা কিশোরীলাল গোস্বামীকে বাংলার কার্যনির্বাহক পরিষদের সদস্য হিসেবে নিয়োগ করা হয়।

[2] আইন পরিষদ: মর্লে-মিন্টো আইনের দ্বারা কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন পরিষদের গঠন ও ক্ষমতার বিষয়ে কয়েকটি পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

i. কেন্দ্রীয় আইন পরিষদ : কেন্দ্রীয় আইন পরিষদের সদস্য সংখ্যা ১৬ থেকে বাড়িয়ে ৬০ জন করা হয়। এই আইন পরিষদ বাজেট তৈরি, বাজেট পাস, বাজেট সম্পর্কে আলোচনা, ভোটদানের অধিকার এবং দেশের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনা ও সুপারিশ করার ক্ষমতা পায়। কেন্দ্রীয় আইন পরিষদে মুসলিম সম্প্রদায়কে আলাদাভাবে সদস্য নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয়।

ii. প্রাদেশিক আইন পরিষদ: প্রাদেশিক আইন পরিষদগুলির সদস্য সংখ্যা ৩০ থেকে ৫০-এর মধ্যে রাখা এবং নির্বাচিত সদস্য সংখ্যার তুলনায় মনোনীত সদস্যদের সংখ্যা সর্বদা বেশি থাকবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই পরিষদগুলিও বাজেট তৈরি, বাজেট পাস, বাজেট সম্পর্কে আলোচনা ও ভোটদানের অধিকার পায়। গভর্নর- জেনারেল ও প্রাদেশিক গভর্নরগণ তাঁদের অপছন্দের যে-কোনো সদস্যকে আইন পরিষদ থেকে অপসারণের অধিকার পান।

আইনের বৈশিষ্ট্য:

মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইনের দুটি অংশ ছিল—

[1] কার্যনির্বাহক পরিষদ : এর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বৈশিষ্ট ছিল — (১) বড়োলাটের কার্যনির্বাহক পরিষদে একজন ভারতীয় স্থান পান। তিনি হলেন রায়পুরের জমিদার ব্যারিস্টার সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ। তিনি বড়োলাটের আইন সচিব নিযুক্ত হন। (২) এ ছাড়াও মাদ্রাজ ও বোম্বাইয়ের কার্যনির্বাহক পরিষদের সদস্যসংখ্যা বৃদ্ধি করে ২থেকে ৪ করা হয়। (৩) বাংলার ছোটোলাটের জন্যও তৈরি হয় একটি কার্যনির্বাহক পরিষদ, যাতে স্থান পান শ্রীরামপুরের জমিদার রাজা কিশোরীলাল গোস্বামী।

[2] আইন পরিষদ : কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক উভয় আইন পরিষদেই পরিবর্তন আনা হয়। (১)কেন্দ্রীয় পরিষদে সদস্যসংখ্যা ১৬ থেকে বাড়িয়ে ৬০ করা হয়। (২) প্রাদেশিক পরিষদের ক্ষেত্রে ওই সংখ্যা ৩০ থেকে ৫০-এর মধ্যে রাখা হয়। (৩) মুসলিম সম্প্রদায়কে পৃথকভাবে সদস্য নির্বাচনের অধিকার দেওয়া হয়। এইভাবে সাম্প্রদায়িক প্রতিনিধিত্বের দাবি স্বীকৃত হয়।

মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইনের গুরুত্ব:

[1] বেসরকারি সদস্য বৃদ্ধি: মলে-মিন্টো আইনের দ্বারাই ভারতের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইনসভাগুলিতে প্রথম বেসরকারি সদস্যের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়। এর দ্বারা ভারতে প্রগতিশীল শ্রেণি সরকারের আইন রচনার কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় ।

[2] শাসনবিভাগে অংশগ্রহণ: মর্লে-মিন্টো আইনের দ্বারা বড়োলাটের শাসন পরিষদে একজন ভারতীয় সদস্য গ্রহণ করা হয়। এর ফলে সরকারি প্রশাসনে ভারতীয়দের যুক্ত করার ব্যবস্থা করা হয়। 

[3] স্বায়ত্তশাসনের সোপান: ভারতে স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে মর্লে-মিন্টো আইন। ব্রিটেনের সাংসদ হেনরি কটন এই আইনকে ভারতে স্বায়ত্ত্বশাসন প্রবর্তনের লক্ষ্যে একটি ধীর পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করেছেন।

[4] অহিনের শাসন: ব্রিটিশ শাসন প্রবর্তনের আগে ভারতে মোগল যুগ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া যে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন প্রচলিত ছিল, তার পরিবর্তে মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইন ভারতে সাংবিধানিক রীতিনীতির প্রচলন ও আইনের শাসনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে।

ভারতবাসীর প্রতিক্রিয়া :

মর্লে-মিন্টো সংস্কার আইন প্রবর্তিত হওয়ার পর রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে সমাজের সকল স্তরের মানুষ এই আইনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায়। এই আইনে মুসলিমদের আলাদা নির্বাচন অধিকার দান করায় দ্বিজাতিতত্ত্ব প্রকাশ পায়। তাই গান্ধিজি গভীর দুঃখের সঙ্গে জানান— মর্লে-মিন্টো আইন ভারতবাসীর পক্ষে মৃত্যুশেলের কাজ করেছে (The Moreley Minto reforms have been our undoing) | জওহরলালও এই আলাদা নির্বাচন ব্যবস্থার তীব্র নিন্দা করেন। মর্লে-মিন্টো আইনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে লাহোর কংগ্রেসের (১৯০৯ খ্রি.) সভাপতির ভাষণে মদনমোহন মালব্য বলেন—এই আইনে সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সংখ্যালঘিষ্ঠ জনগণের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছে।

সমালোচনা:

মলে-মিন্টো সংস্কার আইন শেষপর্যন্ত সফল হয়নি। (১) জনসাধারণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে কোনো ক্ষমতাই ছিল না। এই আইনের দ্বারা ব্রিটিশ সরকার ভারতে কোনো দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা স্থাপন করতে পারেনি। (২) মুসলিম সম্প্রদায়ের আলাদা নির্বাচনব্যবস্থা সাম্প্রদায়িকতার পথকেই প্রশস্ত করেছিল। (৩) প্রাদেশিক শাসনকার্য সংরক্ষিত ও হস্তান্তরিত—এই দুই ভাগে ভাগ হওয়ায় একদিকে ক্ষমতাহীন দায়িত্ব ও অপরদিকে দায়িত্বহীন ক্ষমতা অর্পিত হয়েছিল। (৪) সকল ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন বড়োলাট।

উপসংহার: ভারতবাসী এতদিন ধরে ব্রিটিশ সরকারের কাছে এক দায়িত্বশীল নির্বাচিত স্বশাসিত সরকারের আশা করে আসছিল। মর্লে-মিন্টো আইন তাদের সে প্রত্যাশা পূরণ না করলেও এই আইনের মাধ্যমে ভবিষ্যতের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার সোপান রচিত হয়েছিল। তাই এই আইনের প্রশংসা করে পার্সিভাল স্পিয়ার বলেছেন—ভারতের স্বায়ত্তশাসন লাভের ক্ষেত্রে ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের আইন ছিল একটি প্রধান দিক চিহ্ন।



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব আলোচনা করো।

উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিষয়ে হবসন-লেনিনের তত্ত্ব: ভূমিকা: আধুনিক বিশ্বের সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলির উপনিবেশ প্রসারের কৌশল ‘নয়া উপনিবেশবাদ’ ও ‘নয়া সাম্রাজ্যবাদ’ নামে পরিচিত। উপনিবেশবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে জে. এ. হবসন এবং ভি. আই. লেনিন সাম্রাজ্যবাদ ও উপনিবেশবাদ সম্পর্কে তাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। হবসনের ব্যাখ্যা:  ব্রিটিশ অর্তনীতিবিদ জে. এ. হবসন তাঁর ‘সাম্রাজ্যবাদঃ একটি সমীক্ষা’ নামক গ্রন্থে সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর ব্যাখ্যার প্রধান বিষয়গুলি হল—  [1] অর্থনৈতিক মুনাফা লাভ: হবসনের মতে, সাম্রাজ্যবাদের পিছনে কোনো মহৎ, বা উচ্চতর লক্ষ্য নয়, অর্থনৈতিক মুনাফাই ছিল নয়া উপনিবেশকারীদের প্রধানতম উদ্দেশ্য। পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থায় সমাজে ধনসম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে ব্যাপক বৈষম্যের ফলে পুঁজিপতিদের হাতে যে ‘মূলধনের পাহাড়' সৃষ্টি হয়, সেই মূলধন নতুন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে তারা মুনাফা লাভের পরিকল্পনা করে। [2] পুঁজিপতিদের চাপ: হবসন মনে করেন যে, নতুন ক্ষেত্রে মূলধন বিনিয়োগ করা...

অবশিল্পায়ন কি ? ঔপনিবেশিক ভারতে অবশিল্পায়নের কারণ ও ফলাফল লেখো ।

অবশিল্পায়নঃ        অবশিল্পায়ন বলতে বোঝায় শিল্পায়নের বিপরীত বা শিল্পের অধোগতি। অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনধীন ভারতের চিরাচরিত ও ঐতিহ্যশালী হস্তশিল্প-কুটিরশিল্পের ধ্বংস সাধনই মূলত অবশিল্পায়ন। সব্যসাচী ভট্টাচার্যের মতে যদি দেশের মানুষ শিল্প-কর্ম ছেড়ে চাষ-আবাদে জীবিকা অর্জন শুরু করে অথবা জাতীয় কৃষিজ ও অংশ বাড়তে থাকে এবং শিল্পজ অংশ কমতে থাকে তাকে অব-অবশিল্পায় বলে। অবশিল্পায়নের ফলে ভারতের অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। ব্রিটিশ শাসনকালে ভারতের অবশিল্পায়ন সম্পর্কে প্রথম পর্বে দাদাভাই নাও রোজি, রমেশ চন্দ্র দত্ত, মহাদেব গোবিন্দ রানাডে প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতা এবং পরবর্তীকালে রজনীপাম দত্ত জাতীয়তাবাদী নেতা এবং পরবর্তীকালে রজনী পামদত্ত, গ্যাডগিল, বি.ডি. বসু, নরেন্দ্রকৃয় সিংহ, বিপান চন্দ্র, অমিয় বাগচি প্রমুখ ঐতিহাসিক আলোচনা করেছেন। অব-শিল্পায়নের কারণঃ (১) কাঁচামালের রপ্তানি: ভারতীয় শিল্পের ধ্বংসের সঙ্গে সঙ্গে ভারত থেকে ইংল্যান্ডে কাঁচামাল রপ্তানি শুরু হয়। ভারত ইংল্যান্ডের কলকারখানার খোলা বাজার ও কাঁচামাল সরবরাহের উৎসে পরিণত হয়। ভারত থেকে তুলো, নীল, কফি, চা, রেশম প্রভৃতি ইং...

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। এই যুদ্ধে ভারতের ভূমিকা কী ছিল ?

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ: সূচনা: ১৯৬০-এর দশকের শেষদিকে আওয়ামি লিগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পূর্ববঙ্গের স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছোয়। (1) মিথ্যা মামলায় জড়ানো: শেখ মুজিবুরসহ অন্যান্য আওয়ামি লিগ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যে, তারা ভারতের সঙ্গে মিলে পাকিস্তানের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। এই অভিযোগে পাক সরকার ১৯৬৮ খ্রিস্টাব্দের প্রথমদিকে শেখ মুজিবুরসহ ৩৫ জন নেতাকে গ্রেপ্তার করে মিথ্যা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়। ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ তীব্র হয়ে ওঠে। প্রবল আন্দোলনের চাপে পাক সরকার মামলা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়। (2) সাধারণ নির্বাচন: পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাকিস্তানের সরকার- বিরোধী অসন্তোষ বাড়তে থাকলে পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করেন। এই নির্বাচনে মুজিবের নেতৃত্বাধীন আওয়ামি লিগ পূর্ব পাকিস্তানের ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন লাভ করে। পশ্চিম পাকিস্তানের ১৪০টি আসনের মধ্যে জুলফিকার আলি ভুট্টোর পিপলস পাটি ...

সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

সুয়েজ সংকটের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ  সূচনা: মিশর দেশের উত্তর-পূর্ব দিকে ইংরেজ ও ফরাসিদের তত্ত্বাবধানে খনন করা একটি খাল হল সুয়েজ খাল। ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ওই খাল খনন শুরু হলেও ১৮৬৯ থেকে এতে বাণিজ্যিকভাবে জাহাজ চলাচল শুরু হয়। ইউনিভার্সাল সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি নামে এক সংস্থাকে একটি চুক্তির ভিত্তিতে ৯৯ বছরের জন্য খালটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই মিশরের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি গামাল আবদেল নাসের এক ঘোষণাবলে সুয়েজ খাল ও সুয়েজ ক্যানাল কোম্পানি—দুটিকেই জাতীয়করণ করে নেন। বিশ্বজুড়ে এই সমস্যাকেই সুয়েজ সংকট বোঝায়। সুয়েজ সংকটের কারণঃ (১) ব্রিটেন ও ফ্রান্সের দায়িত্ব: আরব-ইজরায়েল দ্বন্দ্ব চলাকালে ব্রিটেন ও ফ্রান্স ইজরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহের সিদ্ধান্ত নিলে আরব দেশগুলি ক্ষুব্ধ হয় এবং নাসেরের সঙ্গেও পাশ্চাত্য দেশগুলির মনোমালিন্য শুরু হয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্রিটেন ও ফ্রান্সই সুয়েজ খালের ওপর সবথেকে বেশি নির্ভরশীল ছিল। মার্কিন বিদেশমন্ত্রী ডালেস যখন সুয়েজ খাল ব্যবহারকারী দেশগুলিকে নিয়ে এক সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দেন তখ...

জোটনিরপেক্ষ নীতি কী ? জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব লেখো।

জোটনিরপেক্ষ নীতিঃ     দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে একদিকে সোভিয়েত রাশিয়ার নেতৃত্বে সাম্যবাদী বা সমাজতান্ত্রিক জোট, অপরদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুঁজিবাদী বা ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট গঠিত হয়। এই দুই জোটের কোনোটিতেই যোগ না দিয়ে, স্বাধীনভাবে উভয় জোটের সঙ্গেই বন্ধুত্ব বা সমদূরত্ব বজায় রেখে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বৈদেশিক সম্পর্ক পরিচালনার নীতি জোটনিরপেক্ষ নীতি নামে পরিচিত। জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের কারণ বা উদ্দেশ্য ঃ    মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোট ও সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোটের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব থেকে উদ্ভূত ‘ঠান্ডা লড়াই'-এর আর্বত থেকে নিজেকে দূরে রেখে, জাতীয় স্বার্থ ও নবলব্ধ স্বাধীনতাকে রক্ষার জন্য ভারত জোটনিরপেক্ষ বিদেশনীতি গ্রহণ করে। ভারতে জোটনিরপেক্ষ নীতি গ্রহণের কারণগুলি হল— [1] ভৌগোলিক সুরক্ষা : এশিয়া মহাদেশের দক্ষিণে এমন একটা জায়গায় ভারতের অবস্থান যা তাকে মধ্যপ্রাচ্য। ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী দেশে পরিণত করেছে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, চিন, ব্রহ্মদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশি...