সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

আগস্ট, ২০২৪ থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

কনসার্ট অফ ইউরোপ বা ইউরোপীয় শক্তি সমবায় পতনের কারণগুলি কী ছিল ?

কনসার্ট অফ ইউরোপ পতনের কারণ         ইংল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, রাশিয়া ও প্রাশিয়া-ভিয়েনা সম্মেলনের এই চার বৃহৎ শক্তি ফরাসি বিপ্লবের ভাবধারা যাতে ইউরোপের শান্তি বিঘ্নিত করতে না পারে সেইজন্য নিজেদের মধ্যে একটি চুক্তি সম্পাদন করে। চতুঃশক্তি মৈত্রী নামে পরিচিত এই চুক্তিকে ভিত্তি করে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির মধ্যে যে মিলননীতি স্থাপিত হয়, ইতিহাসে তা-ই ইউরোপীয় শক্তি সমবায় বা কনসার্ট অফ ইউরোপ (১৮১৫ খ্রি.) নামে খ্যাত। পরে ফ্রান্স এই শক্তি সমবায়ে যোগ দেয়। ইউরোপীয় শক্তি সমবায় গঠনের মধ্যে দিয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনগুলিকে স্তব্ধ করে দেবার চেষ্টা করা হয়। ফরাসি বিপ্লবের অব্যবহিত পরে নেপোলিয়নের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধগুলি ইউরোপ জুড়ে যে অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল তা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য গঠিত হয় কনসার্ট অব ইউরোপ। এই সংগঠন চেয়েছিল ইউরোপীয় রাজবংশগুলিকে যথাযথভাবে টিকিয়ে রাখতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই শক্তি-সমবায় ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় । এর ব্যর্থতার জন্য একাধিক কারণের সমন্বয় লক্ষ্য করা যায়।    প্রথমত, শক্তি-সমবায় গঠনের পশ্চাতে প্রধান উপাদান ছিল নেপোলিয়ন-সম্পর্কিত ভীতি। এট...

মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা কী ? নেপোলিয়ানের পতনের জন্য মহাদেশীয় ব্যবস্থা কতখানি দায়ী ছিল ?

ম হাদেশীয় অবরোধ     ‌ অসামান্য নৌ-শক্তির অধিকারী ইংল্যান্ডকে পরাজিত করা অপেক্ষাকৃত দুর্বল নৌ-শক্তি সম্পন্ন ফ্রান্সের পক্ষে সম্ভব ছিল না। নেপোলিয়ান নিজেই ফ্রান্সের এই দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠেন ইংরেজ নৌ-সেনাপতি নেলসন-এর হাতে নীলনদের যুদ্ধ ও ট্রাফালগারের যুদ্ধ দুটিতে পরাজিত হবার পর। ১৮০২ খ্রীষ্টাব্দে ইংল্যাণ্ডের সঙ্গে এ্যামিয়েন্সের সন্ধি স্বাক্ষরিত হয় বটে, তবে ঐ সন্ধি মাত্র এক বছর স্থায়ী হয়। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে গঠিত তৃতীয় শক্তিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র অস্ট্রিয়া, প্রাশিয়া ও রাশিয়া পর পর যুদ্ধে পরাজয় স্বীকার করলেও ইংল্যাণ্ড অপরাজিত থেকে যায়। ইতোমধ্যে মধ্য ইউরোপে স্বীয় শক্তি প্রতিষ্ঠিত করে নেপোলিয়ান ইংল্যান্ডকে অর্থনৈতিক অবরোধের সাহায্যে ধ্বংস করতে চান। তাঁর মতে ইংল্যাণ্ড ছিল ‘দোকানদারের জাত’। তাদের বাণিজ্য বিনষ্ট হলে ইংরাজ জাতি তাঁর সঙ্গে সন্ধি স্থাপনে বাধ্য হবে এবং তখনই সমগ্র ইউরোপে ফরাসী কর্তৃত্ব সৃষ্টি হবে। তাঁর ধারণা ছিল ইউরোপের ফ্রান্স- অধিকৃত বাজারগুলিতে ইংল্যাণ্ডে প্রস্তুত মাল আমদানি নিষিদ্ধ হলে বাজারগুলিতে ফরাসী মালের চাহিদা বাড়বে, ফ্রান্সের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটবে। তাই মহা...

তুমি কি মনে কর “সন্ত্রাসের শাসন” ন্যায়সঙ্গত ছিল ?

সন্ত্রাসের শাসন          জ্যাকোবিন একনায়কতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা ফ্রান্সে এক বিপ্লবী সরকারের জন্ম দিয়েছিল। জ্যাকোবিন একনায়কতন্ত্র ১৭৯৩-এর জুলাই থেকে ১৭৯৪-এর জুলাই পর্যন্ত এক বছর স্থায়ী ছিল। জ্যাকোবিন একনায়কতন্ত্রের এই স্বল্প স্থায়িত্বকালে ‘সন্ত্রাস’-এর বাড়বাড়ন্ত দেখা গিয়েছিল এবং বিপুল সংখ্যক মানুষ গিলোটিনে নিহত হয়েছিলেন। তাই জ্যাকোবিন একনায়কতন্ত্রের সময়কালকে ঐতিহাসিকরা ‘সন্ত্রাসের শাসন’ নামে অভিহিত করেছিল।          বিপ্লবের শত্রুদের দমন করার জন্য জ্যাকোবিনরা নিঃসন্দেহে মারাত্মক সন্ত্রাস চালিয়েছেন। বহিঃশত্রুর আক্রমণ এবং প্রতিবিপ্লবী অভ্যুত্থান মোকাবিলা করার জন্য জাতীয় কনভেনশন তার বিরোধীদের সন্ত্রস্ত করতে চেয়েছিল। জ্যাকোবিন শাসকেরা আতঙ্কিত ছিলেন যে, বাইরের ও ভেতরের শত্রুরা যে কোনো সময় বিপ্লবী নীতিগুলি পরাস্ত করে ফ্রান্সে পুনরায় রাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম করতে পারে। এই আশঙ্কা থেকেই জ্যাকোবিনরা সন্ত্রাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সন্ত্রাসের সমর্থকরা তীব্র ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, বিপ্লবের শত্রুদের সন্ত্রস্ত করেই তাঁরা বিপ্লবকে তাঁরা বিপ্লবকে রক্ষা করতে সমর...

ভিয়েনা কংগ্রেসের নীতিগুলি সম্পর্কে একটি টীকা লেখো।

ভিয়েনা কংগ্রেসের নীতি         নেপোলিয়নের পতনের পর সামগ্রিকভাবে ইউরোপের পুনর্গঠনের প্রশ্ন আলোচনার জন্য অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় একটি সম্মেলন আহ্বান করা হয়। ভিয়েনা সম্মেলনে (১৮১৪-১৫ খ্রিস্টাব্দ) যোগদানকারী বিভিন্ন দেশের রাজনীতিবিদগণ ইউরোপের রাজনৈতিক ব্যবস্থার পুনরুজ্জীবন, ইউরোপের সমাজব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস, ন্যায় ও সত্যের ভিত্তিতে ইউরোপের পুনর্গঠন, ইউরোপের অখণ্ড শক্তিস্থাপন প্রভৃতি উচ্চ আদর্শের কথা ঘোষণা করলেও কার্যক্ষেত্রে তাঁরা এই সকল ঘোষিত নীতি অনুসরণ করেননি। ইউরোপের পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে তাঁদের প্রকৃত উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায় ফরাসী বিপ্লবের পূর্বাবস্থার পুনঃস্থাপন এবং নিজ নিজ দেশের স্বার্থরক্ষা করা।        এই সম্মেলনে অস্ট্রিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স মেটারনিখ সর্বপ্রধান অংশগ্রহণ করেন। অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন রাশিয়ার সম্রাট প্রথম আলেকজাণ্ডার, ইংল্যাণ্ডের বৈদেশিক মন্ত্রী ক্যাসলরি, প্রশিয়ার রাজা তৃতীয় ফ্রেডারিক উইলিয়াম ও চ্যান্সেলর হার্ডেনবাগ, ফ্রান্সের অভিজ্ঞ কূটনীতিবিদ ট্যালির‍্যাণ্ড। তুরস্ক ব্যতীত ইউরোপের সকল দেশের রাজপুরুষেরাও এই সম্মেলন...

সঙ্গম সাহিত্যের উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখ।

সঙ্গম সাহিত্য        সংস্কৃত সাহিত্য ছাড়াও তামিল সাহিত্য থেকে দক্ষিণ ভারতের ইতিহাস রচনার জন্য মূল্যবান তথ্য সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এই তামিল সাহিত্য ইতিহাসে সঙ্গম সাহিত্য নামেই সমধিক প্রসিদ্ধ। ‘সঙ্গম’ বলতে বোঝাত তামিল কবিদের সংঘ বা সম্মেলনকে। এই সংঘ বা সম্মেলন সম্ভবত রাজা অথবা সর্দারের আনুকূল্যে আয়োজিত হত। যীশুখ্রিস্টের জন্মের পরে প্রথম কয়েক শতাব্দীর শাসকবর্গের সম্বন্ধে সঙ্গম সাহিত্যে তথ্য পাওয়া যায়। সঙ্গম সাহিত্যের সঠিক সময়কাল নিয়ে বিতর্ক থাকলেও অধিকাংশ সংকলন আনুমানিক ৩০০ থেকে ৬০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সম্পূর্ণ হয়েছিল বলে মনে করা হয়। এতদসত্ত্বেও সঙ্গম যুগ বলে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে যীশুখ্রিস্টের জন্মের কয়েকশো বছর আগে থেকে তার জন্মের কয়েকশো বছর পর পর্যন্ত সময়কালকে। সঙ্গম সাহিত্যকে ‘আখ্যান’ ও ‘উপদেশাবলী’-প্রধানত এই দুটি ভাগ করা হয়ে থাকে। এই গ্রন্থগুলি থেকে কর সংগ্রহের পদ্ধতি, বিচার ব্যবস্থা এবং বণিক, শিল্পী ও কৃষকদের সম্পর্কে নানা তথ্য আহরণ করা সম্ভব হয়ছে। নগরায়ণ সংক্রান্ত কিছু তথ্যও পাওয়া যায় এগুলি থেকে। কাঞ্চী, কাবেরীপত্তনম, মাদুরা প্রভৃতি নগরগুলির উল্লেখ এতে আছে। বিভিন্...

১৭৮৯ খ্রীষ্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের অবদান মূল্যায়ন কর।

১৭৮৯ খ্রীষ্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের অবদান        ফরাসি বিপ্লবের অব্যবহিত পূর্বে চিন্তাশীল ফরাসি জনগণের মনে এক বৈপ্লবিক তরঙ্গের সৃষ্টি হয়েছিল। যুক্তিবাদের ভিত্তিতে ফ্রান্সের সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতি প্রভৃতিকে বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন দার্শনিক প্রমাণ করেন যে প্রচলিত ভাবধারাগুলি ও রাষ্ট্রশাসনব্যবস্থার সব কিছুই যুক্তিহীন ও অবৈজ্ঞানিক। এই সব দার্শনিক সমাজ, রাষ্ট্র ও চার্চের অন্তর্গত অসঙ্গতি ও দোষত্রুটিগুলিকে জনসমক্ষে উত্থাপন করেন, তাদের সংশোধন অথবা অপসারণ দাবী করেন। তাঁরা যুক্তিহীন প্রতিষ্ঠান ও পদ্ধতিগুলিকে অপ্রয়োজনীয় বলে পরিত্যাগ করার বক্তব্যও রাখেন। দার্শনিকদের যুক্তিপূর্ণ বক্তব্যে জনসাধারণ গভীরভাবে আকৃষ্ট হন, তাদের মনোজগতে বৈষম্যহীন, যুক্তিপূর্ণ নতুন সমাজ গঠনের প্রেরণা জন্মে।        এই দার্শনিকদের মধ্যে প্রধান ছিলেন ভলতেয়ার, মন্তেস্কু, রুশো, দেনিস দিদেরো, ডি-এলেমবার্ট প্রমুখ। এঁরা এঁদের শাণিত লেখনীর দ্বারা ফ্রান্সের পুরাতন সমাজ, রাষ্ট্র, অর্থনীতির বুনিয়াদকে অসম ও অন্যায় বলে প্রতিপন্ন করেন। এঁদের রচনার মধ্য দিয়ে তৎকালীন সমস্যাগুলির প্রকৃতি বিশ্লেষ...

গিলগামেশের মহাকাব্য সম্বন্ধে তুমি কী জানো ? এই মহাকাব্যের গুরুত্ব কী ?

 গিলগামেশের মহাকাব্য          গিলগামেশ ছিলেন সুমেরের পঞ্চম রাজা। তার রাজত্বকালে উরুক শহরের চারপাশে প্রাচীর তুলে শহরকে সুরক্ষিত করা হয়েছিল। গিলগামেশ নামে প্রচলিত কাহিনী গিলগামেশের মহাকাব্যে স্থান পেয়েছে। এই মহাকাব্য সুমের তথা বিশ্ব ইতিহাসে নন্দিত। কারণ এই মহাকাব্যের বিভিন্ন ঘটনার সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন ঘটনা বিশেষত বাইবেল বর্ণিত কিছু ঘটনার মিল পাওয়া যায়।        গিলগামেশের নামে অনেক মহাকাব্যিক আখ্যান বা কাহিনি প্রচলিত আছে। এর বেশিরভাগই অসম্পূর্ণ। সবথেকে প্রচলিত যে সম্পূর্ণ কাহিনি তার রচনার সময়কাল প্রচলিত 700 অব্দ। যদিও মূল কাহিনি অনেক পুরোনো এবং তা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসছে। 3000 লাইনে লেখা এই মহাকাব্য 12টি মাটির ফলকে উদ্ধার হয়েছিল আক্কাদীয় শহর নিনেভ থেকে। গিলগামেশ মহাকাব্যের বিষয় এক এক ঐতিহাসিক রাজা গিলগামেশ, যিনি উরুক শহর শাসন করতেন প্রাক্-প্রচলিত অব্দ 2700 নাগাদ। এই মহাকাব্যের প্রধান উপজীব্য বিষয় মৃত্যুর বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ। যদিও কাহিনির শেষে গিলগামেশের উপলব্ধি হয়েছিল যে, মৃত্যু থেকে কারোরই নিস্তার নেই। সুমেরীয়দের চোখে গি...

নিয়েনডার্থাল কারা ?

নিয়েনডার্থাল          অন্তর্বর্তী প্রাচীন প্রস্তর যুগে আধুনিক হোমো স্যাপিয়েন্সের আবির্ভাব হলেও নিয়েনডার্থাল সংস্কৃতিই এই যুগের প্রধান চারিত্রিক লক্ষণ। আধুনিক মানুষের সঙ্গে নিয়েনডার্থাল মানুষের সাদৃশ্য এবং বৈসাদৃশ্য এখনও যথেষ্ট বিতর্কের বিষয়। অনেকেই মানুষের সঙ্গে এদের সাদৃশ্যের দিকটিকেই প্রধান বলে মনে করেন। তাদের মতে নিয়েনডার্থালরা আধুনিক মানুষেরই একটি উপপ্রজাতি এবং তাদের বৈজ্ঞানিক নামকরণ হওয়া উচিত হোমো স্যাপিয়েন্স নিয়েনডার্থালেনসিস। বিপরীত গোষ্ঠীর বক্তব্য অনুযায়ী স্যাপিয়েন্স শব্দটি কেবল আধুনিক মানব প্রজাতির জন্যই ব্যবহার করা উচিত। নিয়েনডার্থাল মানুষকে হোমো নিয়েনডার্থালেনসিস হিসেবেই চিহ্নিত করা উচিত।        আধুনিক মানুষের তুলনায় নিয়েনডার্থাল মানুষের শারীরিক গঠন ছিল আরও শক্তিশালী ও খর্বকায়। কিছুটা অতিরিক্ত ঠান্ডা অঞ্চলের অধিবাসীদের (এস্কিমো বা ইনুইট) মতো।গঠন থেকে বোঝা যায় হোমো নিয়েনডার্থালেনসিসদের দৈহিক শক্তি আধুনিক মানুষের তুলনায় বেশি এবং এরা ঠান্ডার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য আধুনিক মানুষের তুলনায় শারীরিকভাবে বেশি সক্ষম ছিল। তাদের খুলির গ...

খ্রিষ্টান ধর্ম উত্থানের কারণ আলোচনা করো।

অথবা, খ্রিষ্টান ধর্মের উত্থানে রোমান সাম্রাজ্যের ভুমিকা লেখো। খ্রিষ্টান ধর্ম উত্থানের কারণ            মিশরীয় আইসিস ও স্যারোপিস ধর্মবিশ্বাস, পারসিক মিত্র ধর্মবিশ্বাস, ইহুদি ধর্মবিশ্বাস এবং খ্রীষ্টান ধর্মবিশ্বাস-এই চারটি ধর্মবিশ্বাস কে কেন্দ্র করে রোমান সভ্যতার ধর্মীয় প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলেছিল। এদের মধ্যে রোমান খ্রীষ্টানরা ক্রমশ ধর্মীয় সংগঠন গড়ে তুলে অন্যান্য ধর্মগুলি অপেক্ষা দ্রুত বিস্তার লাভ করেছিল। খ্রীষ্টীয় দ্বিতীয় শতকে বিশেষ করে সম্রাট এম. অরেলিয়াসের শাসনকালে (১৬১-১৮০ খ্রীষ্টাব্দ) খ্রীস্টানরা সমাজের নীচুতলা থেকে তাদের চার্চ সংগঠনকে বিভিন্ন পর্যায়ে বিভক্ত করে কেন্দ্রীয় সংগঠন গড়ে তোলে এবং সমগ্র খ্রীস্টানদের মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তোলে। খ্রীস্টীয় তৃতীয় শতকে বিভিন্ন শহরের বিশপদের নিয়ে প্রাদেশিক কাউন্সিল গঠন করা হয়। নিয়মিত ধর্মসভা আহ্বান, অর্থ সংগ্রহ ও চার্চ বিষয়ক নিয়মকানুন প্রবর্তনের কথা বলা হয়। সম্রাট কনস্টান্টাইনের রাজত্বকালে একাধিক প্রদেশের বিশপদের নিয়ে বৃহত্তর ধর্ম সম্মেলনের ব্যবস্থা করা হয়।২১৪ খ্রীস্টাব্দে অরিলেটে, ৩২৫ খ্রীস্টাব্দে নিকিয়াতে ধর্ম সম্মেলন হ...

ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধের জন্য দায়ী কারণগুলি বিশ্লেষণ করো।

ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধের কারণ           সপ্তদশ শতাব্দীর ইংল্যান্ডের একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক বিপ্লব ছিল গৃহযুদ্ধ। স্টুয়ার্ড যুদ্ধের প্রাথমিক পর্ব থেকে রাজতন্ত্রের মধ্যে পার্লামেন্টের যে সংঘাতের সূচনা হয়েছিল সপ্তদশ শতাব্দীর ৪০ এর দশকে তার চূড়ান্ত পরিণতি লক্ষ্য করা যায়। এই চূড়ান্ত পরিণতি হল ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধ। গৃহযুদ্ধের কারণ হিসাবে আর্থ সামাজিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক পটভূমির কথা বলা যায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল 1640 খ্রীষ্টাব্দের লং পার্লামেন্ট।         অধ্যাপক ক্রিষ্টফর হিল গৃহযুদ্ধে পটভূমির প্রসঙ্গে অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে সপ্তদশ শতকের ইংল্যান্ডের কৃষির অবস্থার কথা বলা যায়। সপ্তদশ শতকের সূচনায় ইংল্যান্ড ছিল মূলত একটি কৃষি প্রধান দেশ। জনগণের বেশীরভাগই গ্রামে বাস করত এবং কৃষি উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। 1510- 1580 খ্রীঃ মধ্যে ইংল্যান্ডের মূল্য বিপ্লবের ফলে খাদ্য সামগ্রীর মূল্য প্রায় তিনগুন বৃদ্ধি পায়। সাধারণ মানুষ চরম দুরাবস্তার সম্মুখীন হয়। কিন্তু আভিজাত সম্প্রদায় ও জেন্টিরা এতে উপকৃত হয়। কারণ তারা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিল। অন্যদিকে ক...

ইউরােপে ‘ত্রিশ বছরব্যাপী যুদ্ধের’ পিছনে কোন কোন ঘটনা দায়ী ছিল ?

অথবা, ইউরোপে‌ ত্রিশ বছরব্যাপী যুদ্ধের কারণগুলি কি ছিল ? ত্রিশ বছরব্যাপী যুদ্ধের জন্য দায়ী ঘটনা /  কারণ        দীর্ঘ গৃহযুদ্ধের ফলে ফ্রান্স যখন সম্পূর্ণভাবে বিধবস্তু এবং স্পেন যখন নেদারল্যান্ডের বিদ্রোহীদের দমন করতে ব্যস্ত, জার্মানী কিন্তু সেই সময় তুলনামূলকভাবে রাজনীতি ও ধর্মক্ষেত্রে শাস্তি উপভোগ করার সুযোগ লাভ করতে সমর্থ হয়েছিল। পঞ্চম চার্লসের পরবর্তীকালের পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের দুজন সম্রাট ফার্দিনান্দ ও দ্বিতীয় ম্যাক্সিমিলিয়ান ছিলেন উদার মনোভাবাপন্ন। এর ফলে তাঁদের রাজত্বকালে প্রোটেস্ট্যান্ট মতবাদ জার্মানীতে যথেষ্ট পরিমাণে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সমর্থ হয়। কিন্তু অল্পদিনের মধে প্রতিসংস্কার আন্দোলনের আঘাতে প্রোটেস্ট্যান্ট মতবাদের অগ্রগতি রুদ্ধ হয়। দলে দলে জেসুইটগণ জার্মানীতে উপস্থিত হন এবং প্রচণ্ড ধৈর্য ও অধ্যবসায়ের দ্বারা প্রায় অর্ধেক জার্মানীতে রোমান ক্যাথলিক ধর্মের ছত্রছায়ায় আনয়ন করতে সমর্থ হন। এই সময় পবিত্র রোমান সাম্রাজ্যের সম্রাট ছিলেন রুডলফ। তিনি তাঁর পূর্বসূরীদের ধর্মসহিষ্ণুতা নীতি পরিত্যাগ করেন এবং প্রোটেস্ট্যান্টদের প্রতি ক্যাথলিকদের কঠোর ব্যবস্থার প্র...

হিউগেনো কারা ছিলেন ?

হিউগেনো      সংস্কারক জন ক্যালভিন (John Calvin)-এর স্বদেশ ফ্রান্সের ক্যালভিন পন্থীরা হিউগেন (Heugenots) নামে পরিচিত ছিলেন। ক্যালভিন প্রথমে রাষ্ট্রীয় শক্তির প্রতি নিঃশর্ত আনুগত্যের এবং অপ্রতিরোধ তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু রাজকীয় স্বৈরাচারের দৃষ্টান্ত তাঁর চিন্তায় পরিবর্তন ঘটায় এবং তিনি বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধকে বৈধ বলে স্বীকার করেন। ক্যালভিন-এর এই স্বীকৃতির পেছনে ছিল স্বদেশে তাঁর অনুগামী হিউগেনদের নিরাপত্তার চিন্তা। হিউগেনদের ক্ষেত্রে ক্যাথলিক রাজার সহিষ্ণুতা ছিল অত্যাবশ্যক। কিন্তু ফরাসি সরকারের কাছ থেকে প্রত্যাশিত ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়ে হিউগেনরা প্রথম থেকেই নির্যাতিত হচ্ছিলেন। ফরাসি রাজ প্রথম ফ্রান্সিস ক্যাথলিকবাদের সমর্থক হলেও, প্রোটেস্ট্যান্টদের সাথে সমঝোতা করতে চলতে প্রথমে ইচ্ছুক ছিলেন। ফ্রান্সের প্রোটেস্ট্যান্টরা মনে করেছিলেন যে রাজা তাঁদের মত প্রকাশের বিরোধিতা করবেন না। তাই ১৫৩৪ খ্রিস্টাব্দে তাঁরা প্যারিস শহরে ক্যাথলিক বিরোধী এক সমাবেশের আয়োজন করেন। কিন্তু রাজা মধ্যপন্থী থেকে সরে আসেন এবং অসংখ্য প্রোটেস্ট্যানকে গ্রেপ্তার করেন এবং বুঝি...

কার্ডিনাল রিশল্যু কে ছিলেন ?

কার্ডিনাল রিশল্যু         ফ্রান্সে চতুর্থ হেনরির মৃত্যুর পর তাঁর নাবালক পুত্র ত্রয়োদশ লুই (১৬১০-৪৩ খ্রীঃ) সিংহাসনে বসেন। ত্রয়োদশ লুই নাবালক থাকায় রাজমাতা হিসেবে শাসন ভার গ্ৰহণ করে মেরি ডি মেডিচি। এই সময়ে কিশোর রাজার অনভিজ্ঞতা ও দুর্বলতার সুযোগে মেরি অবাঞ্চিত ও রাজকীয় প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করে প্রশাসনকে দুর্বল করে দিয়েছিলেন। প্রশাসনিক ব্যবস্থা একেবারে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। এই সংকটজনক সময়ে ত্রয়োদশ লুই কার্ডিনাল রিশল্যুকে (১৬২৪-৪২ খ্রীঃ) ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। কিছুদিনের মধ্যেই তিনি ফ্রান্সের প্রকৃত শাসকে পরিণত হন। জন্মসূত্রে রিশল্যূ ছিলেন আভিজাত এবং পেশায় ছিলেন যাজক।        কার্ডিনাল রিশল্যু ১৫৮৫ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সের সাধারণ এক অভিজাত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ধর্মযাজক হিসেবে তিনি জীবন শুরু করেন। মাত্র ২৪ বছর বয়সে তিনি লুকোন নামক একটি জেলায় চার্চের বিশপ নিযুক্ত হন। এই লুকোনের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি ১৬১৪ খ্রিস্টাব্দে স্টেট জেনারেলের সভাই প্রতিনিধিত্ব করেন। এই সভায় রিশল্যু তার অসাধারণ প্রতিভার দ্বারা রাণী মেরি ডি মেডিচির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন...

মাইক্রোলিথ বা ক্ষুদ্রাশ্মীয় আয়ুধের উপর একটি টীকা লেখো।

মাইক্রোলিথ বা ক্ষুদ্রাশ্মীয় আয়ুধ       গ্রাহাম ক্লার্ক পাথরের তৈরি প্রাগৈতিহাসিক হাতিয়ার গুলিকে মোট পাঁচটিপ পর্যায়ে ভাগ করেছেন। এর মধ্যে পঞ্চম পর্যায়ের হাতিয়ারটি সবচেয়ে উন্নত। মাইক্রোলিথ বা ক্ষুদ্রাশ্মীয় আয়ুধ এই পঞ্চম পর্যায়েরই হাতিয়ার। এই পর্যায়ের হাতিয়ার গুলি খুবই ছোটো। দৈর্ঘ্যে এক থেকে তিন সেন্টিমিটার এবং প্রস্থ এক সেন্টিমিটারেরও কম। এই ধরনের হাতিয়ারগুলি বর্শা, তির বা হারপুন জাতীয় শিকারের অস্ত্রের ফলা হিসেবে ব্যবহার করা হত। এই ফলাগুলিকে যুক্ত করা হত কাঠ, গাছের ডাল বা হাড়ের তৈরি হাতলের সঙ্গে। এই জন্য মাইক্রোলিথ জাতীয় হাতিয়ারের একটি প্রান্ত ধারালো এবং অপর প্রান্তটি চেরা থাকত, হাতলের সঙ্গে লাগানোর সুবিধার জন্য।         এই ধরনের হাতিয়ারের সবচেয়ে বড়ো সুবিধা ছিল এই যে, ফলাটির ধার নষ্ট হয়ে গেলে বা ভেঙে গেলে গোটা অস্ত্রটিকে বাতিল না করে কেবল ফলাটিকেই বদলে নেওয়া যেত। প্রত্নতত্ত্ববিদ স্টিভেন মিথেন যে কারণে এই ধরনের হাতিয়ারকে আধুনিক যুগের ‘Plug in plug out’ প্রযুক্তির সঙ্গে তুলনা করেছেন। মাইক্রোলিথের প্রধান ব্যবহার ছিল শিকার করার স...

ক্লুনির সংস্কার আন্দোলন সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ।

ক্লুনির সংস্কার আন্দোলন         খ্রীষ্টীয় দশম শতক ইউরোপে সংস্কারের শতক। যে সংস্কার কার্য প্রথম শুরু হয় মঠগুলিতে। এক্ষেত্রে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য ৯১০ খ্রীস্টাব্দে ধর্মপ্রাণ ডিউক উইলিয়াম কতৃক প্রতিষ্ঠিত বার্গাণ্ডির ক্লুনির মঠের সংস্কার কার্যাবলী। ক্লুনির প্রভাব ও প্রসিদ্ধি ছিল দূর বিস্তৃত, সুগভীর এবং দীর্ঘস্থায়ী যা সমগ্র মহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম থেকেই এই মঠ ছিল স্বাধীন, স্বয়ংসম্পূর্ণ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। রাজতন্ত্র বা সামন্ততন্ত্র এখানে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পায়নি।          ক্লুনির সংস্কারে প্রাধান্য পেয়েছিল বেনেডিকটিয় উপাসনা পদ্ধতি এং ধর্মীয় শুদ্ধাচার। ঈশ্বর আরাধোনা, প্রার্থনা সঙ্গীত এবং ভগবৎ প্রেম ছিল ক্লুনির আদর্শ। এই মঠের ধর্মীয় পরম্পরা এবং নিষ্ঠা ছিল বিস্ময়কর। কারণ পার্থিব শক্তি অর্জনে ক্লুনির কোন উৎসাহ ছিল না। চার্চের অনাচারের প্রতিবাদ, যাজকদের ধর্মীয় বিচ্যুতি প্রতিরোধ, বিশপদের গীর্জার বিপুল সম্পত্তি ভোগ দখল, বিশপ পদ ক্রয়-বিক্রয়, বিবাহিত ব্যাক্তিদের যাজক পদ লাভ এবং মঠ জীবনের উপর রাজা বা সামন্তদের প্রভাব বিস্তারের মত কু-কর্মের প্রতিবাদ ...

গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের কারণ আলোচনা করো।

গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের কারণ         পৃথিবীর ইতিহাসে কোন সাম্রাজ্যই চিরস্থায়ী নয়, কালের অমোঘ নিয়মে একদা শক্তিশালী গুপ্ত সাম্রাজ্যকেও পতনের হাত থেকে রক্ষা করা যায়নি। সমুদ্রগুপ্ত ও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের কৃতিত্বে উত্তর ও দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে যে বৃহৎ গুপ্ত সাম্রাজ্য গড়ে উঠেছিল, অল্পকালের মধ্যেই তা পতনের পথে ধাবিত হয়। কিন্তু কোন সাম্রাজ্যের উত্থান যেমন একদিন বা আকস্মিক ভাবে হয় না, তেমনি পতনও একদিনে বা একটি মাত্র কারণে ঘটে না। গুপ্ত সম্রাজ্যের পতনের জন্যও তাই একাধিক কারণের সমন্বয় খুঁজে পাওয়া যায়।        গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল দুর্বল ও অযোগ্য উত্তরাধিকার। আমরা জানি স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থায় কেন্দ্রীয় সরকার বা রাজার যোগ্যতা, ব্যক্তিত্ব, দক্ষতা ও দূরদৃষ্টি রাজ্যের উন্নতি ও সংহতির প্রধান শর্তরূপে বিবেচিত হয়। স্কন্দগুপ্তকে গুপ্ত বংশের শেষ শক্তিশালী সম্রাট বলে ধরা হয়। তার পরবর্তী শাসকেরা ছিলেন দুর্বল ও অযোগ্য। তাদের পক্ষে বিশাল গুপ্ত সাম্রাজ্যের স্থায়িত্ব বজায় রাখা অসম্ভব হয়ে পড়ে। অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে প্রাদেশিক বিচ্ছিন্নতাবাদ ...

আলভার এবং নায়নার কারা ছিলেন ?

আলভার এবং নায়নার               সপ্তম থেকে নবম শতাব্দীর মধ্যে দক্ষিণ ভারতে বিশেষভাবে তামিলনাডুতে, বৈষ্ণব মতবাদের প্রচারকগণ আলভার ও ভক্তিবাদের প্রচারকগণ নয়নার নামে পরিচিত ছিলেন। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ুর প্রাচীনতম বৈষ্ণব সম্প্রদায় আলভার নামে পরিচিত। খ্রিস্টীয় সপ্তম ও অষ্টম শতাব্দীতে তামিলনাডুতে আলভারদের প্রচারের ফলে বৈষ্ণবধর্ম খুব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আলভার সম্প্রদায়ের নেতৃবর্গকে আচার্য বলা হত। আচার্যদের মধ্যে বিশেষভাবে সিদ্ধিলাভ করেন নাথমুনি, যমুনাচার্য এবং রামানুজ। আলভার আচার্যগণ বৌদ্ধ ও জৈন মতবাদ ছাড়াও প্রচলিত ব্রাহ্মণ্য ধর্মের বিরুদ্ধেও আন্দোলন শুরু করেন।      আলভার আচার্যদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বিখ্যাত ছিলেন রামানুজ। কাঞ্চীতে বিদ্যার্জন করার পর রামানুজ চোলরাজ অধিরাজেন্দ্রের রাজ্যের অন্তর্গত ত্রিচিনোপলির নিকট শ্রীরঙ্গমে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু শৈব ধর্মাবলম্বী রাজা অধিরাজেন্দ্রের বিরোধিতার জন্য তিনি শ্রীরঙ্গম ত্যাগ রতে বাধ্য হন এবং জৈন ধর্মাবলম্বী হোয়সলরাজ বিট্রিগ-এর রাজ্যের অন্তর্গত মহীশূরে আশ্রয় নেন। অল্প দিন পরে রাজা বিট্টিগ (১১১০-১১...

ভারত সম্পর্কে আল-বিরুনির দৃষ্টিভঙ্গি কী ছিল ?

ভারত সম্পর্কে আল-বিরুনির দৃষ্টিভঙ্গি    অনন্যসাধারণ প্রতিভার অধিকারী বিখ্যাত প্রাচ্যতত্ত্ববিদ অল বিরুনি মধ্য এশিয়ায় অবস্থিত খোয়ারজিয় রাজ্যের রাজধানী খিভাতে ৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। গজনীর শাসনকর্তা সুলতান মামুদ যখন খিভা অধিকার করেন সেই সময় অলবিরুনি বন্দী হন। বন্দী অবস্থায় তাঁকে গজনীতে নিয়ে আসা হয়। সুলতান মামুদ অলবিরুনির প্রতিভা ও পাণ্ডিত্যের পরিচয় পেয়ে তাঁকে আপন রাজসভায় সভাসদ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। সুলতান মামুদের ভারত আক্রমণের কালে অলবিরুনি এদেশে এসে এখানকার পণ্ডিতদের জ্ঞান ও বিদ্যাচর্চার প্রতি নিষ্ঠা দেখে অভিভূত হন। তিনি ভারতীয় দর্শন, জ্যোতির্বিজ্ঞান, গণিত প্রভৃতি বিষয়ে গভীর আগ্রহ প্রকাশ করতে থাকেন। তিনি সংস্কৃত ভাষা আয়ত্ত করেন এবং ভারতীয় ঞ্জান- বিজ্ঞানের চর্চায় নিজেকে নিযুক্ত করেন। তিনি ভারতবর্ষ সম্পর্কে একটি গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর রচিত গ্রন্থটি ‘তহকিক-ই-হিন্দ’ নামে পরিচিত। এই গ্রন্থ থেকে দশম শতাব্দীর শেষভাগ এবং একাদশ শতাব্দীর প্রথমভাগের উত্তর, মধ্য ও উত্তর-পশ্চিম ভারতের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনের একটি মনোজ্ঞ চিত্র পাওয়া যায়। সুলতান মামুদের ভারত আক্রমণে এদ...

স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের বিশেষ উল্লেখ করে চোল শাসনব্যবস্থার একটি বিবরণ দাও।

স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের বিশেষ উল্লেখসহ চোল শাসনব্যবস্থার বিবরণ        আনুমানিক দ্বিতীয় খ্রিস্টাব্দে চোল শাসনের সূচনা হয় পেনার ও ভেলার নদীর মধ্যবর্তী এলাকায়। কিন্তু পল্লব, চের ও পাণ্ডদের আগ্রাসনে চোলরাজ্য বিনষ্ট হয়। নবম খ্রিস্টাব্দে চোল শক্তির পুনর্ভ্যুথান ঘটে।      উন্নত প্রশাসন ব্যবস্থা ছিল চোলদের শাসনব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। চোলরাজ রাজরাজ এবং কুলতুঙ্গের মধ্যবর্তী সময়ে চোল প্রশাসন চূড়ান্ত রূপ নেয়। কেন্দ্রীয়, প্রাদেশিক ও স্থানীয় তিন ভাগে বিভক্ত চোল শাসনব্যবস্থার সর্বোচ্চ স্তরে ছিল রাজা।        রাজার বংশানুক্রমিক ভাবে শাসন করতেন। চোল রাজারা আড়ম্বরপূর্ণ উপাধি পছন্দ করতেন। চোল মার্তন্ড, গঙ্গাইকোমণ্ড ইত্যাদি উপাধি গ্রহণ করতেন। চোল রাজারা মৌখিক আদেশ দ্বারা রাজকোষ চালাতেন। মন্ত্রী ও অমাত্যরা রাজাকে পরামর্শ দিতেন। রাজগুরু ছিলেন রাজার বিশ্বস্ত পরামর্শদাতা। রাজার প্রাসাদ ও রাজসভা ছিল আড়ম্বরপূর্ণ।     সুগঠিত আমলাতন্ত্রের সাহায্যে চোল রাজারা রাজকার্য পরিচালনা করতেন। যোগ্যতা ছিল রাজকর্মচারীদের উন্নতির মাপকাঠি। কর্মচারীরা নগদ টাকায়...

চোলদের সময়কালে বঙ্গোপসাগরকে ‘চোল সমুদ্রম’ বা ‘চোল হ্রদ’ বলা হয় কেন ?

চোল সমুদ্র বা চোল হ্রদ      খ্রীষ্টীয় দশম শতকে দক্ষিণ-ভারতীয় রাজ্যগুলির মধ্যে চোল-রাজ্য ছিল বিশেষ শক্তিশালী। চোল-রাজাদের উল্লেখযোগ্য কৃতিত্ব ছিল সামুদ্রিক ক্ষেত্রে প্রাধান্যলাভ। চোলদের সামুদ্রিক কার্যকলাপের সূচনা করেন চোলরাজ প্রথম রাজরাজ। পরবর্তী কালে প্রথম রাজেন্দ্র চোলের নেতৃত্বে সামুদ্রিক এদের ক্রিয়াকলাপ আরও বিস্তৃত হয় ।        তবে চোলদের সামুদ্রিক কার্যকলাপের উদ্দেশ্য কি ছিল-এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ আছে। অনেকের মতে, চোলদের সামুদ্রিক কার্যকলাপের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল ব্যবসাবাণিজ্য বৃদ্ধি করা। আবার কেউ কেউ মনে করেন, সুপরিকল্পিত কোন কর্মসূচী অনুযায়ী চোলেরা সামুদ্রিক কাজ চালায়নি। এ কথা সত্য যে, সামুদ্রিক প্রাধান্যলাভের ফলে চোল রাজ্যের বাণিজ্য বিস্তৃত হয়েছিল। তামিল ব্যবসায়ীরা দক্ষিণ-ভারতে বণিক-সংঘ গড়ে তুলেছিলেন এবং এর সদস্যরা বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও চীন দেশে গমন করেছিলেন। চীনদেশীয় তথ্য থেকেও প্রমাণিত হয়েছে যে, চোল-রাজ্যের সাথে চীনে বাণিজ্য বিনিময় চলত। তবে সব সময়েই যে ব্যবসাবাণিজ্য প্রসারে চোলদের সামুদ্রিক ক্রিয়াকলাপ সীমাবদ্ধ ...

কেমন করে দাস প্রথা রোমের কৃষি অর্থনীতিকে টিকিয়ে রেখেছিল ?

দাস প্রথা ও রোমের কৃষি অর্থনীতি    রোমের কৃষিক্ষেত্রে ঠিক কোন সময় থেকে দাসশ্রমের নিয়মিত প্রচলন হয় তা আমাদের অজানা। অনুমান করা যায় রাজতান্ত্রিক আমল থেকেই রোমের অভিজাতবর্গ বড়ো বড়ো খামারের ক্ষেত্রে দাসশ্রমের প্রয়োগ করতেন। কারণ প্রজাতন্ত্রের গোড়ারদিকে বারো টেবিলের আইন পাশের সময় (প্রাঃপ্রঃ ৪৫০ অব্দ) রোমে দাসপ্রথা চালু ছিলো বলে পরবর্তীকালের সূত্র থেকে জানা যায়। কিন্তু সমসাময়িক উপাদান থেকে মনে হয় দাসব্যবস্থা তখনও পর্যন্ত রোমের কৃষিক্ষেত্রে প্রধান শ্রমের যোগানদার হয়ে ওঠেনি। উৎপাদন প্রধানত পরিচালিত হতো ছোটো ও মাঝারি উৎপাদকদের দ্বারা। উৎপাদনের প্রধান লক্ষ্য ছিলো গ্রাসাচ্ছাদন।        পরিস্থিতির বদল ঘটতে শুরু করে প্রাক প্রচলিত চতুর্থ শতাব্দী থেকে। ইতিমধ্যে যুদ্ধ নানাভাবেই ছাপ ফেলেছে রোমান অর্থনীতিতে। প্রথমত, সাম্রাজ্যবাদী বিস্তারের ফলে রোমের অভিজাতদের (প্যট্রিসিয়ান ও প্লেবিয়ান) হাতে প্রচুর জমি আসে। এই জমি কেবল ইটালিতেই সীমাবদ্ধ ছিলো না। পূর্ব ও পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে এবং ইটালির উপদ্বীপ অঞ্চলে রোমান অভিজাতরা বিশাল বিশাল খামার তৈরী করে। ল্যাটিফান্ডিয়া (Latifundia) না...

হরপ্পাবাসীদের ধর্মীয় বিশ্বাস সম্পর্কে আলোচনা করো।

হরপ্পাবাসীদের ধর্মীয় বিশ্বাস:       হরপ্পা সভ্যতার মতো বিশাল সভ্যতায় ধর্মব্যবস্থা কেমন ছিল অর্থাৎ তৎকালীন মানুষ কীভাবে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করত, কোন ধর্মের প্রতি তাদের আসক্তি ছিল প্রভৃতি বিষয়ে তথ্য খুবই অপ্রতুল। কারণ, হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো অথবা অন্য কোনো শহর থেকে দেবায়তনের কোনো স্পষ্ট নিদর্শন পাওয়া যায়নি। এছাড়া সীলমোহরগুলিতে উৎকীর্ণ লিপিগুলির পাঠোদ্ধার না হওয়ায় সেগুলিও এ সম্পর্কে নীরব। এতদসত্ত্বেও বিভিন্ন শহরের ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রাপ্ত মাতৃ মূর্তি, কিছু লিঙ্গজাতীয় প্রতীক, মহেঞ্জোদারোর স্নানাগারটির উপস্থিতি ও সীলমোহরগুলি আলোচ্য সভ্যতার ধর্মীয় ব্যবস্থা সম্পর্কে ইঙ্গিত দেয়। হরপ্পায় প্রাপ্ত একটি সীলে একটি নগ্ন নারীমূর্তি অঙ্কিত আছে। এই মূর্তিটির মাথা নীচের দিকে এবং পা দুটি ওপর দিকে উত্থান ভঙ্গিতে অঙ্কিত। একটি চারাগাছ ঐ নারীমূর্তির গর্ভ থেকে নির্গত হয়েছে। মনে হয়, পৃথিবীর অধিষ্ঠাত্রী দেবীর ইঙ্গিত তুলে ধরা হয়েছে এই মূর্তিটির মাধ্যমে। ঐ সীলমোহরটির অপরদিকে একটি দেবীমূর্তির সামনে নরবলি দেবার চিত্র উপস্থিত। আবার অনেক সীলমোহরে গাছপালার উপাসনার নিদর্শন বিদ্যমান। এর প্রকৃষ্ট প...