সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পোস্টগুলি

2025 থেকে পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে

মর্লে মিন্টো সংস্কার আইন 1909 খ্রিস্টাব্দ – ভারতীয় কাউন্সিল অ্যাক্ট সম্পর্কে আলোচনা করো।

মর্লে মিন্টো সংস্কার আইন: সূচনা: বঙ্গভঙ্গের পরে ভারতীয় রাজনীতিতে চরমপন্থা ও সশস্ত্র বৈপ্লবিক ধারার উদ্ভব ঘটলে ব্রিটিশ বিভিন্নভাবে ভারতীয়দের সঙ্গে আপস মীমাংসার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। এই সূত্রেই ভারত-সচিব জন মর্গে এবং বড়োলাট মিন্টো ভারতের শাসনতান্ত্রিক পরিবর্তনের লক্ষ্যে যে সংস্কার আইন প্রবর্তন করেন (১৯০৯ খ্রি.) তা মর্লে- মিন্টো শাসন সংস্কার বা ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দের কাউন্সিল আইন নামে পরিচিত। এই শাসনসংস্কার নীতির দ্বারা ব্রিটিশ হিন্দু-মুসলিম বিভেদনীতিকে কাজে লাগিয়ে জাতীয় আন্দোলনের প্রসার রোধ করতে চেয়েছিল। আইন প্রবর্তনের কারণ: এই শাসনসংস্কার আইনটির পটভূমি বিশ্লেষণে দেখা যায় — (১) ১৯০৭ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সুরটি অধিবেশনে নরমপন্থী বা মডারেটদের পাশাপাশি চরমপন্থী বা এক্সট্রিমিস্টদের উদ্ভব ঘটে। এই দ্বন্দ্বকে কাজে লাগানোর সুযোগ পায় ব্রিটিশ। (২) সশস্ত্র বিপ্লবী ভাবধারায় উদ্‌বুদ্ধ হয়ে বাংলা ও মহারাষ্ট্রে গোপন বিপ্লবী সংঘ প্রতিষ্ঠা ও প্রকাশ্যে রাজনৈতিক হত্যার ঘটনা শুরু হয়, যা ব্রিটিশের কাছে ছিল সন্ত্রাসবাদ। (৩) আগাগোড়াই মুসলিম নেতারা জাতীয় কংগ্রেসের বিরোধিতা করেছিল বা...

ভিতারি স্তম্ভলিপি সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত টিকা লেখো।

ভিতারি স্তম্ভলিপি: প্রথম কুমারগুপ্তের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র স্কন্দগুপ্ত গুপ্ত সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেন। অনেকের মতে, কুমারগুপ্তের মৃত্যুর পর ঘটোৎকচগুপ্ত কিছুকাল সিংহাসনে বসেছিলেন। রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে, কুমারগুপ্তের মৃত্যুর পর সিংহাসন দখলকে কেন্দ্র করে ভ্রাতৃবিরোধ শুরু হয় ও শেষপর্যন্ত ৪৫৫ খ্রিস্টাব্দে স্কন্দগুপ্ত সম্রাট হন। ফদগুপ্তের রাজত্বকাল সম্পর্কে জানার জন্য দুটি লিপির সাহায্য নিতে হয়, যথা— জুনাগড় শিলালিপি ও ভিতারি মুণ্ডলিপি । ভিতারি লিপিটি সংস্কৃত ভাষায় লেখা এবং প্রায় ২৪ ফুট উঁচু স্তত্ত্বের ওপর মোট ১৯টি লাইনের এই লিপিটি তৈরি করা হয়েছিল। বর্তমান উত্তরপ্রদেশের গাজীপুরের নিকট ভিতারি অবস্থিত। ঐতিহাসিক আর পি ত্রিপাঠীর মতে এই লিপিটি থেকে স্কন্দগুপ্তের সঙ্গে পুষ্যমিত্র ও চুন শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রামের বিবরণ পাওয়া যায়। ভিতারি লিপির প্রথম পাঁচটি লাইনের মধ্যে সমুদ্রগুপ্ত, দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত এবং প্রথম কুমারগুপ্তের গৌরবময় জীবনের কথা বলা হয়েছে। সমুদ্রগুপ্তকে ইন্দ্র, বরুণ প্রমুখ দেবতার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। তেমনই গোদান, স্বর্গদান প্রভৃতি দানশীলতার কথাও উল্লিখিত রয়েছে। তা ছাড়া...

ফ্যাসিবাদ কী ? ফ্যাসিবাদের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো

ফ্যাসিবাদ:   প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ইউরোপের অন্যান্য দেশের মতো ইতালিতেও শ্রমিক ও কৃষক আন্দোলন শুরু হয়। ইতালির সর্বত্র অর্থনৈতিক ও সামাজিক সংকট, বেকারত্ব, হতাশা ও অবসাদ নেমে আসে।ইতালিবাসীর জীবনে এই সংকটমোচনের জন্য হাল ধরেন বেনিতো মুসোলিনি। তাঁর নেতৃত্বে ফ্যাসিস্ট দল ইতালির রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে। এই ফ্যাসিস্ট দলের মতবাদই ফ্যাসিবাদ নামে পরিচিত। লাতিন শব্দ ফাসেস ( Fasces ) এবং ইতালীয় ফ্যাসিও ( Fascio ) শব্দ থেকে উদ্ভূত হয়েছে ফ্যাসিসমো ( Fascismo ) শব্দটি। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হল ফ্যাসিজ্ম ( Fascism ) বাংলায় যা ফ্যাসিবাদ নামে পরিচিত। ঐতিহাসিক বেনেদিত ক্রোচ-এর মতে—ফ্যাসিবাদ হল খণ্ড খণ্ড সমষ্টি ও একটি ভিত্তিহীন সংস্কৃতির দিকে পৌঁছানোর বন্ধ্যা মানসিক প্রয়াসমাত্র । ফ্যাসিবাদের প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্যসমূহ : ইউরোপের বিভিন্ন দেশে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্যাসিবাদের আবির্ভাব ঘটে। প্রথমে ফ্যাসিবাদীদের লক্ষ্য ছিল পুঁজিবাদের বিরোধিতা করা। পরবর্তীকালে তাদের চরম লক্ষ্য হয়ে ওঠে শ্রমিকশ্রেণির সংগঠনগুলিকে ধ্বংস করে পুঁজিবাদকে রক্ষা করা। এই কারণেই ফ্যাসিবাদকে একটি প্রতিক্রিয়াশীল মতাদর্শ ...

ঠান্ডা লড়াই-এর প্রকৃতি ও বৈশিষ্ট্য লেখো।

ঠান্ডা লড়াই: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষে একদিকে থাকে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট, অপরদিকে থাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমি ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক ও সামরিক আধিপত্য গড়ে তোলার জন্য এই দুই রাষ্ট্রজোটের মধ্যে যে গোপন লড়াই শুরু হয় তা ঠান্ডা লড়াই নামে পরিচিত। মার্কিন সাংবাদিক ওয়াল্টার লিপম্যান ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ‘ The Cold War ’ গ্ৰন্থে সর্বপ্রথম ‘ঠান্ডা লড়াই’ কথাটি ব্যবহার করেন। ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রকৃতি: বিশ্বে জুড়ে ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে— যুদ্ধপরিবেশ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয় পক্ষই নিজেদের মধ্যে সরাসরি কোনো শক্তিপরীক্ষায় অবতীর্ণ না হলেও এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশগুলিকে পরোক্ষভাবে মদত দিয়ে যুদ্ধের বাতাবরণ বজায় রেখেছিল। এসময় উভয় পক্ষই বিপজ্জনক পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। সংঘর্ষহীনতা: উদ্দেশ্যমূলক প্রচার, অন্তর্ঘাত, এমনকি সীমিত কিছু নাশকতামূলক কাজকর্মকে ঠান্ডা লড়াই উৎসাহ দিলেও কোনো ক্ষেত্রেই তা শেষপর্যন্ত ব্যাপক সংঘর্ষে পরিণত হয়নি। উভয়পক্ষের মধ্যে চরম ...

ভারতে রেলপথ প্রবর্তনের উদ্দেশ্য ও প্রভাব আলোচনা করো।

রেলপথ স্থাপনের উদ্দেশ্য ও প্রভাব: সূচনা: ভারতের বড়োলাট লর্ড ডালহৌসির আমলে 'গ্রেট ইন্ডিয়ান পেনিনসুলার রেল কোম্পানি' (GIPR) ভারতে সর্বপ্রথম রেলপথের প্রতিষ্ঠা করে। ডালহৌসিকে ভারতীয় রেলপথের জনক বলা হয়। তাঁর আমলে ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে (১৬ এপ্রিল) বোম্বাই থেকে থানে পর্যন্ত ২১ মাইল রেলপথ স্থাপিত হয়। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে পূর্বভারতের হাওড়া থেকে হুগলি পর্যন্ত ভারতের দ্বিতীয় রেলপথ চালু হয়। ডালহৌসির আমলে ভারতের প্রায় ২০০ মাইল রেলপথ নির্মিত হয়। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে ভারতীয় রেলপথের জাতীয়করণ করা হয় ও এটি বিশ্বের বৃহত্তম নেটওয়ার্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। নিজেদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামরিক ও অন্যান্য প্রয়োজনে বড়োলাট লর্ড ডালহৌসি ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে সর্বপ্রথম রেলপথ স্থাপন করেন। রেলপথ স্থাপনের উদ্দেশ্য:  [1] ডালহৌসির উদ্দেশ্য: লর্ড ডালহৌসি বিশেষ কয়েকটি উদ্দেশ্য নিয়ে ভারতে রেলপথ স্থাপনের উদ্যোগ নেন। এই উদ্দেশ্যগুলি হল— [i] ভারতের দূরবর্তী অঞ্চলগুলিতে দ্রুত সেনাবাহিনী পাঠানো। [ii] রেলপথ স্থাপনের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়ে বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো। [iii] দেশে শিল্প পরিকাঠামো গড়ে...

কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট: সংক্ষিপ্ত পরিচয় ও গুরুত্ব

কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকট:  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ঠান্ডা যুদ্ধের সময় আর একটি সংকট বিশ্বকে আণবিক যুদ্ধের দিকে এগিয়ে দিয়েছিল, তা ছিল কিউবা সংকট। কিউবা হল ক্যারিবিয়ান সাগরে অবস্থিত পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে সর্ববৃহৎ দ্বীপ। দেশটি চিনি উৎপাদনের জন্য জগৎবিখ্যাত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত লাইন ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল এই দেশটির উপর। নিজেদের অস্তিত্বের প্রয়োজনে কিউবা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল ছিল। মার্কিন পৃষ্ঠপোষকতায় ফ্যালজেনিকো বাতিস্তা ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে কিউবার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ফিদেল কাস্ত্রোর ক্ষমতালাভ: বাতিস্তা সরকারের আমলে দেশে দারিদ্র্য, দুর্নীতি, অসাম্য, স্বৈরাচার প্রভৃতি চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছায়। ফলে মার্কিন মদতপুষ্ট এই সরকারের প্রতি কিউবার জনগণের সমর্থন ছিল না। বাতিস্তা সরকারের অপদার্থতার সুযোগে ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে ১ জানুয়ারি ফিদেল কাস্ত্রো কিউবায় এক অভ্যন্তরীণ বিপ্লব ঘটিয়ে দেশের শাসন ক্ষমতা দখল করেন। কিউবাতে বেশ কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে এবং রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগী হলে আমেরিকার সাথে কিউবার বিরোধের স...

ঠান্ডা লড়াই বলতে কী বোঝায়? ঠান্ডা লড়াই-এর তাত্ত্বিক ভিত্তি ব্যাখ্যা করো।

ঠান্ডা লড়াই: ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসানের পর ভাবদর্শগত দিক থেকে সমগ্র পৃথিবী দুটি শক্তি শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একদিকে ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন গণতান্ত্রিক বা ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট। অন্যদিকে ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বাধীন সমাজতান্ত্রিক বা সাম্যবাদী রাষ্ট্রজোট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই দুটি রাষ্ট্রজোট সমগ্র পৃথিবীতে নিজেদের সামরিক ও রাজনৈতিক প্রভাব প্রতিপত্তি বিস্তারের উদ্দেশ্যে যে লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয় তা ঠান্ডা লড়াই নামে খ্যাত। কারণ এই লড়াই কোনো সশস্ত্র লড়াই ছিল না। এটি ছিল এক ভাবাদর্শগত বা মতাদর্শগত লড়াই এবং তা কেবলমাত্র কূটনৈতিক স্তরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ঠান্ডা লড়াই - এর তাত্ত্বিক ভিত্তি/ উদ্ভবের কারণ:- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ধনতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোট এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রজোটের মধ্যে সংগঠিত ঠান্ডা লড়াইয়ের উদ্ভব নিয়ে ঐতিহাসিকরা বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যা একত্রে তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা নামে পরিচিত। এগুলি হল- [১] ঐতিহ্যবাহী বা রক্ষণশীল ব্যাখ্যা:  এই মতবাদে বিশ্বাসীদের মতে, ঠান্ডা যুদ্ধ ছিল আদর্শগত বিরোধ এবং এর জন্য ...

রাওলাট আইন ১৯১৯: উদ্দেশ্য‌ ও গান্ধিজির বিরোধিতা ।

রাওলাট আইন: সূচনা: প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে ভারতীয়দের ব্রিটিশ বিরোধী গণ আন্দোলন ও বৈপ্লবিক কার্যকলাপ সম্পূর্ণ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার যে সমস্ত দমনমূলক আইন প্রবর্তন করেছিল। তার সার্থক প্রয়াস ছিল ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে প্রবর্তিত রাওলাট আইন। ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার ইংল্যান্ডের বিচারপতি স্যার সিডনি রাওলাট-এর সভাপতিত্বে পাঁচজন সদস্যকে নিয়ে একটি 'সিডিশন কমিশন' বা রাওলাট কমিশন গঠন করেন। এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ভারতের কেন্দ্রীয় আইনসভায় ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাসে একটি দমনমূলক বিল উত্থাপিত হয়। ভারতীয় সদস্যদের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে ১৮ মার্চ বিলটি আইনে পরিণত হয়। এই রাওলাট আইন (Rowlatt Act) নামে পরিচিত। উদ্দেশ্য:  ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয়তাবাদ, গণ আন্দোলন, বিপ্লবী কার্যকলাপ প্রভৃতি ধ্বংস করার উদ্দেশ্যেই কুখ্যাত রাওলাট আইনটি প্রণয়ন করা হয়। এই আইনে যে সমস্ত ধারা রাখা হয় তা হল- (১) সরকার বিরোধী যে-কোনো প্রচারকার্য দণ্ডনীয় অপরাধ বলে গণ্য করা হবে। (২) সন্দেহভাজন যে-কোনো ব্যক্তিকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তার করা যাবে। (৩) গ্রেপ্তারের পর বিনা বিচারে তাদের অনির্দিষ্টকাল আটকে...

লক্ষ্ণৌ চুক্তি ১৯১৬: শর্তাবলী ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব ।

লক্ষ্ণৌ চুক্তি: পটভূমিকাঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ভারতের জাতীয় আন্দোলন অনেকটাই স্তিমিত হয়ে পড়ে। হিন্দু ও মুসলমান উভয় সম্প্রদায় নিজেদের মধ্যে গণ্ডগোল ভুলে গিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে উদ্দ্যোগী হয় এবং এর বাস্তব প্রয়োগ ছিল ১৯১৬ সালের লক্ষ্ণৌ চুক্তি।। শর্তাবলী: লক্ষ্ণৌ চুক্তির মূলকথা ছিল প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন, বিকেন্দ্রীকরণ, এবং ভারতীয়করণ। জাতীয় কংগ্রেস এবং মুসলিম লিগের যৌথ উদ্দ্যোগে সম্পাদিত লক্ষ্ণৌ চুক্তিতে বলা হয়েছিল,- (i) পৃথক নির্বাচনের ভিত্তিতে জাতীয় কংগ্রেস মুসলিমদের প্রতিনিধিত্বের দাবিগুলি মেনে নেবে। (ii) কংগ্রেসের স্বরাজের দাবিকে মুসলিম লিগ সমর্থন করবে। (iii) কেন্দ্রীয় আইন পরিষদ এবং প্রাদেশিক আইন সভার সদস্যদের ১/৩ অংশ হবে মুসলিম প্রতিনিধি। তবে সংরক্ষিত আসন ছাড়া অন্য কোনো আসনের, কেন্দ্র ও প্রদেশে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে না। (iv) কংগ্রেস এবং মুসলিম লিগ উভয়দল যৌথভাবে শাসন সংস্কারের দাবি উত্থাপন করবে। (v) ভারত সচিবের দুজন সরকারীর মধ্যে একজন হবে ভারতীয়। (vi) অন্য ডোমিনিয়ানের মর্যাদা এবং প্রতিনিধিত্ব ভারতকে দিতে হবে। গুরুত্বঃ (i) ১৯১৬ সালে লক্ষ্ণৌ...

হাে-চি-মিনের নেতৃত্বে ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধের একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধ: ভূমিকা :  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়কালে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাসে এক দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত ছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধ। হো-চি-মিনের নেতৃত্বে, ভিয়েতনামবাসীরা দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে (১৯৪৫-৭৫ খ্রি.) যে সংগ্রাম চালিয়েছিল তা ইতিহাসে ভিয়েতনাম যুদ্ধ নামে পরিচিত। তৃতীয় বিশ্বের উপনিবেশবাদ-বিরোধী সংগ্রামকে গৌরবান্বিত করেছিল এই ভিয়েতনাম যুদ্ধ। ভিয়েতনাম যুদ্ধে ভিয়েতনামিরা প্রথমে ফরাসি সাম্রাজ্যবাদ ও পরে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে ধ্বংস করে স্বাধীনতা অর্জন করে। [1] পটভূমি    যেসব ঘটনা ভিয়েতনাম যুদ্ধের পটভূমি রচনায় সাহায্য করেছিল, সেগুলি হল- [i] দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ঔপনিবেশিক বিরোধিতা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে থেকেই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্তর্গত মালয়, শ্যাম (থাইল্যান্ড), ব্রহ্মদেশ (মায়ানমার) সহ বিভিন্ন দেশে উপনিবেশ-বিরোধী সম্মেলন শুরু হয়েছিল। যার অংশীদার হয়েছিল হো-চি-মিনের নেতৃত্বে ভিয়েতনামও।  [ii] রুশ-জাপান যুদ্ধের ফলাফল: রুশ-জাপান যুদ্ধের ফলাফল জাপানের অনুকূলে যাওয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াবাসীর মতো ভিয়েতনামবাসীর মন থেকেও শ্বেতাঙ্গ ভীতি দূর হয়। ত...

জেনেভা সম্মেলন– ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ । পটভূমি, শর্তাবলি, ফলাফল ও গুরুত্ব

জেনেভা সম্মেলন– ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দ:  সূচনা: দিয়েন-বিয়েন-ফু ঘটনায় ফরাসিদের ব্যর্থতার পর জেনেভা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় (১৯৫৪ খ্রি., ৮ মে)। ইন্দোচিন সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ফরাসি প্রধানমন্ত্রী পিয়ের মেন্ডেস ফ্রাঁস জেনেভা সম্মেলন আহবান করেন। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র প্রথম দিকে জেনেভা সম্মেলনের ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ না দেখালেও অবশেষে জেনেভা সম্মেলনের সিদ্ধান্তগুলিকে স্বীকৃতি জানিয়েছিল। জেনেভা সম্মেলনের চূড়ান্ত ঘোষণায় বলা হয়, সম্মেলন স্বীকার করে যে, ভিয়েতনাম সম্পর্কিত চুক্তির প্রকৃত উদ্দেশ্য হল যুদ্ধের অবসান ঘটানোর জন্য সামরিক প্রশ্নের একটা মীমাংসা করা। সম্মেলনের পটভূমি:   উত্তর ভিয়েতনামে দিয়েন-বিয়েন-ফু (১৯৫৪ খ্রি.)-র শোচনীয় ব্যর্থতার পর ফ্রান্স আর ভিয়েতনামে যুদ্ধ চালাতে রাজি ছিল না। তার রাজি না হওয়ার পেছনে দুটি প্রধান কারণ ছিল। সেগুলি হল— (1) মান- সম্মান বজায় থাকতে থাকতেই ফ্রান্স নিজেকে ভিয়েতনাম থেকে সরিয়ে নিতে চেয়েছিল। (2) ইতিপূর্বেই জাতীয় নির্বাচনে ফ্রান্সে রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন হয়ে গেছে। নতুন প্রধানমন্ত্রী পিয়ের মেন্ডেস ফ্রাঁস ছিলেন যুদ্ধবিরোধী। তিনি চেয়েছিলেন ইন্দোচিন সমস্যার সমাধান আ...

খুত ও মুকদ্দম কাদের বলা হত? কে, কেন তাদের কঠোরভাবে দমন করার চেষ্টা করেন ?

খুত ও মুকদ্দম:‌         বাজার দর নিয়ন্ত্রণ এবং জীবন নির্বাহের ব্যয় হ্রাস করেই আলাউদ্দিন খলজি সন্তুষ্ট হতে পারেননি। রাজ্যের অর্থনৈতিক অবস্থাকে আরও সমৃদ্ধ করার জন্য তিনি বিভিন্ন ব্যবস্থা অবলম্বন করার জন্য সচেষ্টও হয়ে ওঠেন। এই উদ্দেশ্যে তিনি রাজস্ব বিভাগের সংস্কারের দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে শুরু করেন। রাষ্ট্রের অধীনে খাদ্য ও জমি বৃদ্ধির জন্য তিনি সর্বপ্রথম বিভিন্ন শ্রেণীর অবলম্বন করার জন্য সচেষ্ট হয়ে ওঠেন। তিনি মুসলিম অভিজাত সম্প্রদায় ও ধার্মিক ব্যক্তিদের মিলক্, ইনাম, ইদ্দ্ররাৎ এবং ওয়াকফ জমি রাষ্ট্রের অধীনে পুনরায় আনয়নের চেষ্টা করেন। মুসলিম অভিজাত সম্প্রদায়র ও ধার্মিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পরই সুলতান অলাউদ্দিন খলজি খুত, চৌধুরী ও মুকদ্দম নামে পরিচিত হিন্দু অভিজাতবর্গের প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করেন। “খুত” শব্দটির প্রকৃত সংজ্ঞা সম্পর্কে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও সম্ভবত পরবর্তীকালে যার জমিদার নামে পরিচিতি লাভ করেন আলাউদ্দিনের-রাজত্বকালে তাঁরা খুত নামে পরিচিত ছিলেন। “চৌধুরী” ছিলেন পরগণার প্রধান ব্যক্তি এবং “মুকদ্দম” ছিলেন গ্রামের প্রধান। রাষ্ট্রের ...

মৌখিক ঐতিহ্য (Oral Traditions)-র বিভিন্ন দিক আলোচনা করো।

মৌখিক ঐতিহ্যের বিভিন্ন দিক: সূচনা: ভাষা এবং গানের মধ্যে মৌখিক ঐতিহ্যগুলি রূপ নিয়েছে। লোককাহিনি, প্রবাদ, গাথাকাহিনি, গান এবং স্তুতি হিসেবে। মৌখিক ঐতিহ্যের সংজ্ঞা: মৌখিক ঐতিহ্য হল এমন এক সংস্কৃতিগত ধারণা যা এক প্রজন্ম থেকে অপর প্রজন্মে লোকমুখে প্রচলিত হয়। বিভিন্ন দিক থেকে মৌখিক ঐতিহ্যের সংজ্ঞা দেওয়া যায়। সাক্ষাৎকারের তথ্য সংগ্রহভিত্তিক: শ্রবণ, শ্রবণ-বীক্ষণ প্রভৃতি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে পূর্বনির্ধারিত বা পরিকল্পিত সাক্ষাৎকার গ্রহণের দ্বারা ব্যক্তি বিশেষ বা ঘটনাভিত্তিক তথ্য সংগ্রহ বা চর্চাকে মৌখিক ঐতিহ্য (Oral Traditions) বলে। মৌখিক বার্তাভিত্তিক: জান ভ্যানসিনা (Jan Vansina) তাঁর 'Oral Tradition as History' গ্রন্থে লিখেছেন মৌখিক ঐতিহ্য হল “এক ধরনের মৌখিক বার্তা যা কথা, গান প্রভৃতির মাধ্যমে মুখে মুখে পূর্ববর্তী প্রজন্ম অতিক্রম করে পরবর্তী প্রজন্মে পৌঁছোয়। তথ্য বিশ্লেষণ ও চর্চাভিত্তিক: ওরাল হিস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (Oral History Association) -এর মতে “অতীতের ঘটনা সম্পর্কে মানুষের কণ্ঠস্বর, স্মৃতিকথা, বিভিন্ন সম্প্রদায় ও অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিশ্লেষণ ও চর্চা...

জাহান্দারী ও জাওবিৎ কী ?

জাহান্দারী ও জাওবিৎ:         দিল্লীর সুলতানরা এমন রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুললেন যা প্রাচীন পারস্যদেশীয় সাসানীয় নৃপতিদের থেকে স্বতন্ত্র ছিল না। সুলতানই ছিলেন এই শাসনব্যবস্থায় প্রজাদের নিকট প্রভু এবং মালিক, তাদের ধন-প্রাণ স্বাধীনতার একছত্র অধিপতি, আইন ও ন্যায়ধর্মের অদ্বিতীয় প্রতিষ্ঠান স্বরূণ, নিজেরা অভ্রান্ত, দায়-দায়িত্বমুক্ত, দুর্নিবার– রাষ্ট্রে তিনিই ঈশ্বর।         কিন্তু সুলতানরা তত্ত্বগতভাবে সার্বভৌম এবং অসীম ক্ষমতার অধিকারী হলেও, ভারতীয় পরিবেশে বাস্তবক্ষেত্রে কতকগুলো সুনির্দিষ্ট ক্ষমতার সীমাবদ্ধতাকে তাঁরা মেনে নিয়েছিলেন। তাঁদের শাসনতান্ত্রিক কার্যাবলীকে প্রধানত তিনটি ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ রাখতেন, যথা- ‘জাহানগিরি’, ‘জাহান্দারি’ ও ‘জওবিৎ’ অর্থাৎ রাজ্যজয়, নববিজিত রাজ্যগুলোতে অধিকার সুসংহত করা এবং সামরিক বাহিনীকে সন্তুষ্ট রাখা। ক্ষুদ্র, সুশাসিত ও সমৃদ্ধ রাজ্যগঠনের স্থান তাঁদের রাজনৈতিক চিন্তায় ছিল না। একের পর এক রাজ্যজয়ই ছিল তাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্য। বলবনই একমাত্র রাষ্ট্রের সংহতিসাধনের কাজ প্রায় গণিতের সূত্রের মতো নির্ভুলভাবে তাঁর অভিপ্র...

ট্রুম্যান নীতি ও মার্শাল পরিকল্পনা – সংক্ষিপ্ত আলোচনা।

ট্রুম্যান নীতি ও মার্শাল পরিকল্পনা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব রাজনীতিতে একটি নতুন যুগের সূচনা হয়, যা শীতল যুদ্ধ নামে পরিচিত। এই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের দুটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি – ট্রুম্যান নীতি এবং মার্শাল পরিকল্পনা – বিশ্বব্যবস্থাকে গড়ে তোলে। এই নীতিগুলো কেবল কমিউনিজমের বিস্তার রোধ করেনি, বরং ইউরোপের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করে। ট্রুম্যান নীতি :  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বরাজনীতিতে এক নতুন দ্বন্দ্বের সূচনা হয় – পুঁজিবাদ বনাম সাম্যবাদ। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সোভিয়েত প্রভাব দ্রুত বিস্তার লাভ করছিল, যা পশ্চিমা শক্তিগুলির জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই প্রেক্ষাপটেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস. ট্রুম্যান ১৯৪৭ সালের ১২ মার্চ মার্কিন কংগ্রেসে এক ঐতিহাসিক নীতি ঘোষণা করেন, যা ইতিহাসে ‘ট্রুম্যান নীতি’ নামে পরিচিত। ঘোষণার পটভূমি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েত প্রভাব দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছিল। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি অঙ্গরাজ্যের ফালটন শহরে বক্তৃতা দিয়ে এই পরিস্থিতিকে “আয়রন কার্টেন” নামে অভিহিত করেন এবং স...

সার্ক (SAARC) প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট আলোচনা করো । সার্ক-এর উদ্দেশ্য কী ছিল ?

‘সার্ক’ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট: [1] জিয়াউর রহমানের শ্রীলঙ্কা সফর : দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে নিয়ে কোনো আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ সর্বপ্রথম ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে শুরু হয়। এ বিষয়ে সর্বপ্রথম উদ্যোগ নেন স্বাধীন বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান (১৯৩৬-১৯৮১ খ্রি.)। তিনি ১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দে শ্রীলঙ্কা সফরকালে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার উদ্দেশ্যে একটি আঞ্চলিক সংস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন এবং নিজে সক্রিয় উদ্যোগ নেন। [2] সার্ক গঠনের সিদ্ধান্ত : দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলিকে নিয়ে একটি সহযোগিতা সংস্থা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপের বিদেশমন্ত্রীগণ বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উদ্যোগে অনুপ্রাণিত হন। পরবর্তী কয়েক বছরে কলম্বো (১৯৮১ খ্রি.), কাঠমান্ডু (১৯৮১ খ্রি.), ইসলামাবাদ (১৯৮২ খ্রি.), ঢাকা (১৯৮৩ খ্রি.) প্রভৃতি স্থানে একাধিক সম্মেলনে মিলিত হন। অবশেষে এসব দেশের বিদেশমন্ত্রীগণ ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দের দিল্লি সম্মেলনে সমবেত হয়ে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (South Asian Association for Regional Co...

পলাশি ও বক্সারের যুদ্ধ: ফলাফলের তুলনামূলক বিশ্লেষণ ।

পলাশি ও বক্সারের যুদ্ধের ফলাফলের তুলনামূলক আলোচনা :        পলাশির যুদ্ধে ১৭৫৭, ২৩ জুন ভাগীরথীর তীরে পলাশীর আম্রকাননে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদৌল্লার সাথে ক্লাইভের নেতৃত্ব ইংরেজদের যে লড়াই হয়েছিল তা ভারত ইতিহাসে পলাশীর যুদ্ধ নামে পরিচিত।    এই যুদ্ধে সিরাজের পরাজয়ের ফলে বাংলার স্বাধীনতা সূর্য প্রায় ২০০ বছরের জন্য অস্তমিত হয়। তাই এই যুদ্ধের ফলাফল ছিল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী। এই পলাশির যুদ্ধের ফলাফল বা গুরত্বগুলি হল-      পলাশির যুদ্ধের হতাহতের সংখ্যা ও ব্যাপকতার দিক থেকে এটি ছিল একটি খণ্ডযুদ্ধ মাত্র। এই যুদ্ধে নবাবের পক্ষে ৫০০ জন এবং ইংরেজদের পক্ষে মাত্র ২২জন সেনার মৃত্যু হয়। পলাশির যুদ্ধের হতাহতের সংখ্যা ও ব্যাগপকতার দিক থেকে এটি ছিল একটি খণ্ডযুদ্ধ মাত্র। মীরজাফর ব্রিটিশ সাথে মিলে নবাবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল।        এই যুদ্ধে হেরে ভারতের পূর্বদিকে সমৃদ্ধ অঞ্চল বিদেশিদের অধীনে গেল। ইংরেজরা ভারতে বিশেষ ক্ষমতার অধিকারী হয়ে পড়ে। তারা নৃপতি বানানোর চেষ্টায় উদ্যত হয়। নিজেদের অনুগত মানুষকে বাংলার সিংহাসনে বসিয়ে বাংলা থেকে ব...

১৫২৫ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মুঘল-আফগান দ্বন্দ্বের বিবরণ দাও।

মুঘল-আফগান দ্বন্দ্ব:      ভারতে মুঘল শক্তির উত্থান ও বিকাশের সঙ্গে মুঘল আফগানি দ্বন্দ্বের সমান্তরাল অবস্থান দেখা যায়। ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মুঘল আফগান দ্বন্দ্ব চলতে থাকে।      খানুয়ার যুদ্ধ: ১৫২৭ খ্রিস্টাব্দে মেবারের রানা সংগ্রাম সিংহের সঙ্গে বাবরের যুদ্ধ সংগঠিত হয়। যুদ্ধে রানা সংগ্রাম সিংহ পরাজিত হন। এই যুদ্ধে রাজপুতদের সঙ্গে আফগানরা সহযোগিতা করেনি। রাজপুতদের সঙ্গে সঙ্গে আফগানরাও যদি মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করত তাহলে হয়ত ভারতের ইতিহাসের গতি অন্য পথে প্রবাহিত হতে পারত।     ঘর্ঘরার যুদ্ধ (১৫২৯ খ্রিস্টাব্দ): বাবর আফগানদের বিরুদ্ধে অগ্রসর হয়ে বিহারের সীমান্তে পৌঁছান। পূর্ব ভারতে মুঘল আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য জৌনপুরের শাসনকর্তা মামুদ লোদি বিহারের আফগান নেতা শেরশাহ, এবং বাংলার সুলতান মুঘল শক্তির বিরুদ্ধে সম্মিলিত ঐক্যশক্তি জোট গঠন করেন। বাবর নুসরৎশাহের কাছে দূত পাঠিয়ে তাঁর বশ্যতা স্বীকার করতে বলেন। এর পর মামুদ লোদি, ও শেরশাহ মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। বাবর এলাহাবাদ, বারাণসী দখল করে বিহারের আরো জেলা অধিকার করার জন্...

১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দ ও কনস্ট্যান্টিনোপোলের পতনের গুরুত্ব।

কনস্ট্যান্টিনোপোলের পতনের গুরুত্ব:                খ্রিস্টপূর্ব ৬৫৭ অব্দে গ্রিক উপনিবেশ হিসেবে কনস্ট্যান্টিনোপল নগরীর পত্তন হয়েছিল। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকে (৩৩০ খ্রিস্টাব্দ) এটি পূর্ব রোম সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। সাতটি ছোটো ছোটো পাহাড়বেষ্টিত এবং চোদ্দটি জেলায় বিভক্ত এই শহরকে 'নতুন রোম'ও বলা হত। প্রথমে এটি ছিল রোম সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় রাজধানী। পরে ৩৯৫ খ্রিস্টাব্দে এটি পূর্ব রোম সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসেবে গণ্য হয়। ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দে বর্বর আক্রমণের ফলে পশ্চিম রোম সাম্রাজ্যের পতন হলেও, পূর্ব রোমকে কেন্দ্র করে রোমান সাম্রাজ্য ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য প্রবহমান ছিল। পূর্ব রোম সাম্রাজ্য বাইজান্টাইন সাম্রাজ্য নামেও পরিচিত ছিল। রোমান সাম্রাজ্যের অর্থনীতির ভিত্তি ভূমধ্যসাগরীয় বাণিজ্যকেও সচল রাখার কাজে পূর্ব রোম সফল ছিল। শেষ পর্যন্ত ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে কনস্ট্যান্টিনোপল অটোমান তুর্কিদের দখলে চলে যায়। এটি অটোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী রূপে গণ্য হয়। এর নতুন নাম হয় 'ইস্তাম্বুল'। ইউরোপের ইতিহাসে কনস্ট্যান্টিনোপলের উত্থান যেমন গুরুত্বপূর্ণ একটি ঘটনা, তেমনি এই সাম্র...

আদিনা মসজিদ কে তৈরি করেন? এর স্থাপত্যগত বৈশিষ্ট্যগুলো কি ছিল?

আদিনা মসজিদ এর স্থাপত্যগত বৈশিষ্ট্য:       আদিনা মসজিদ – ইলিয়াস শাহী বংশের দ্বিতীয় সুলতান সিকন্দর শাহ ১৩৬৯ বা ১৩৭৪ খ্রিস্টাব্দে এই মসজিদটির নির্মাণ কার্য শেষ করেন। মালদহ জেলার পান্ডুয়ার এক মাইল উত্তরে এই মসজিদের অবস্থান। মুসলিম যুগের বাংলাদেশের স্থাপত্য শিল্পের প্রথম নিদর্শন আদিনা মসজিদ পূর্বভারতের বৃহত্তম এবং ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম মসজিদ। এই মসজিদ দৈর্ঘে ৫০৭ ফুট ৬ ইঞ্চি, এবং প্রস্থে ২৮৫ ফুট ৬ ইঞ্চি। চারদিকের আচ্ছাদিত পথ বাদেও এই মসজিদের প্রাঙ্গণের দৈর্ঘ্য ৩৯৭ ফুট এবং প্রস্থ ১৫২ ফুট। মসজিদের পিছনের প্রাচীরের নিকট মিহবার অর্থাৎ প্রার্থনার কুলুঙ্গি এবং উত্তর দিকে মিমবার বা প্রাচীর বেদী অবস্থিত। প্রাচীর বেদীর কিছু দূরে আটফুট উঁচুতে বাদশাহ-কা-তক্ত- সম্ভবত রাজ-পরিবারের সদস্যদের জন্য এই স্থানটি নির্দিষ্ট ছিল। বর্তমানে মসজিদটি অনেকাংশই প্রাকৃতিক কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং এর ধবংসাবশেষের মধ্যে হিন্দু মন্দিরের উপকরণ দেখতে পাওয়া যায়। বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি, পদ্মফুল এবং অন্যান্য হিন্দু স্থাপত্যের নিদর্শন দেখে অনেকেই মনে করেন যে সম্ভবত কোন হিন্দুমন্দির ধবংস করেই এই বিশালাকৃতির মস...

ম্যানর ব্যবস্থা বলতে কি বোঝ ?

ম্যানর ব্যবস্থা:        সামন্ততন্ত্রের ভিতর থেকে তার আবশ্যিক অঙ্গ হিসাবে ম্যানর প্রথার বিকাশ ঘটেছিল। ম্যানর প্রথা প্রকৃতপক্ষে সামন্তযুগের কৃষিভিত্তিক সমাজে একটি অর্থনৈতিক সংগঠন, একে সামন্ততান্ত্রিক উৎপাদন পদ্ধতির গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ম্যানর প্রথা অনেক সময় সিনোরীয় প্রথা নামেও পরিচিত। মূলত সামন্ততন্ত্রে ভূস্বামী কর্তৃক কৃষক শোষণের যে পরিকাঠামো গড়ে উঠেছিল ম্যানর প্রথা ছিল তারই সাংগঠনিক ভিত্তি। সামন্তপ্রভু এবং ম্যানরে বসবাসকারী শ্রমজীবী মানুষের খাদ্যের জোগান আসত ম্যানর থেকে।        ম্যানরের অভ্যন্তরীণ কাঠামো ছিল বৈচিত্র্যপূর্ণ। একটি ম্যানরের জমিকে দুইভাগে ভাগ করা হত—(1) সামন্তপ্রভুর খাস জমি বা ডিমেইনে, (2) স্বাধীনস্বত্বসম্পন্ন জমি বা ভিলেইন। এই জমির মাধ্যমে কৃষক সামন্তপ্রভুর সঙ্গে একটি অচ্ছেদ্য বন্ধনে আবদ্ধ থাকত। সামন্ততন্ত্রের মতো ম্যানর প্রথার উৎস রয়েছে প্রাচীন রোমান ও জার্মানদের স্থানীয় সংগঠনের মধ্যে। ম্যানর প্রথার প্রধান শক্তি ছিল ভূমিদাস। এই ভূমিদাসরা আক্রমণকারী যোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে ভূমিদাসে রূপান্তরিত হয়।...